—ফাইল চিত্র।
দেশ জুড়ে লকডাউন জারি করার ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। খবর শুনেই তড়িঘড়ি তিরুঅনন্তপুরম থেকে ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরে রওনা দিয়েছিলেন এক দল বাঙালি শ্রমিক। কিন্তু ঘরে ফেরা দূর অস্ত, ট্রেন থমকে গিয়েছিল বিলাসপুরে! বিপদ বুঝে মুর্শিদাবাদের ওই শ্রমিকেরা স্টেশন থেকে ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন বহরমপুরের সাংসদের দফতরে।
সেই শুরু। লকডাউন শুরুর পর থেকে ১০ দিনে অধীর চৌধুরীর নম্বরই এখন পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য হেল্পলাইন! নানা দল ও সংগঠনে বারংবার অনুরোধেও কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কেউ ভিন্ রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য হেল্পলাইন খোলেনি। কিন্তু অবিরাম বেজে চলেছে অধীরাবুর ফোন। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হওয়ার সুবাদে দেশের নানা প্রান্তে যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে খাবার ও জরুরি সামগ্রী আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে চলেছেন তিনিই।
সারা দেশে কাজ করতে শ্রমিকের জোগান দেয়, এমন জেলার তালিকায় উপরের দিকেই থাকবে মুর্শিদাবাদ। লকডাউনের ১০ দিনে দক্ষিণ ভারতের সব রাজ্য, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ— প্রায় সব রাজ্য থেকে অধীরবাবুর কাছে ফোন এসেছে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে যাওয়া বিপন্ন মানুষের। এঁদের সিংহভাগই নির্মাণ শ্রমিক। আবার দক্ষিণ হোক বা উত্তর ভারত, চিকিৎসার জন্য বা বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়া মানুষও যোগাযোগ করছেন। তাঁদের মধ্যে এমন লোকও ছিলেন, যাঁদের লকডাউনের মধ্যে রেখে দেওয়ার বিনিময়ে হোটেল দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছিল। অধীরবাবু সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলাশাসক এবং সাংসদকে জানানোর পরে বাড়তি ভাড়া মকুব হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে খাবার, রেশনের সামগ্রী পেয়ে অগুণতি বিপন্ন মানুষ প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা-ভরা বার্তা পাঠাচ্ছেন অধীরবাবুর জন্য।
আরও পড়ুন: প্রায় দলীয় কর্মসূচির প্রাবল্যে দীপ জ্বালালেন বাংলার বিজেপি নেতারা
কর্নাটকের বল্লারি থেকে শ্রীমন্ত কুণ্ডু যেমন বলছেন, ‘‘আমাদের বাড়ি বড়ঞা থানা এলাকায়। এখানে নানা জায়গায় ফোন করছিলাম। তার পরে অধীরবাবুর কথা জেনে ওঁর দফতরে খবর দিই। উনি বলে দেওয়ার পরে আমাদের কাছে চাল, ডাল, তেল, নুন সব পৌঁছেছে।’’ এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা অধীরবাবুকে চেনেন না, তাঁর পরিচয়ও জানেন না। কিন্তু বিপদের সময়ে উপকার পেয়ে বহরমপুরের সাংসদের জন্য ‘দুয়া’ পাঠাচ্ছেন। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জে আটকে থাকা আব্দুল গাজি মণ্ডল যেমন বলছেন, ‘‘এই দুর্দিনে উনি যে সাহায্য করেছেন, জীবনে ভুলব না।’’ পুণে, গাজিয়াবাদ, চেন্নাই বা সেকেন্দরাবাদে থাকা লোকজন আবার ধন্যবাদের সঙ্গেই আর্তি জুড়ে দিচ্ছেন, লকডাউন আরও চলতে থাকলে তাঁদের যেন কোনও ভাবে মুর্শিদাবাদে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।
লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় অধীরবাবু নিজেও বহরমপুর ফিরতে পারেননি। দিল্লিতে বসেই বহরমপুরের সদর হাসপাতালের জন্য ভেন্টিলেশন মেশিন কেনার টাকা বরাদ্দ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘জীবনে এমন অভিজ্ঞতা প্রথম। অবিরাম কল এসেই চলেছে। যেখানে যতটুকু পারছি, আটকে পড়া মানুষের সঙ্গে সহযোগিতার চেষ্টা করছি। যাঁরা সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।’’ কংগ্রেস তো বটেই, নানা রাজ্যে বিজেপি, শিবসেনা, ডিএমকে-সহ অন্যান্য দলের জনপ্রতিনিধিরাও সাহায্য করছেন তাঁর আবেদনে।
বহু কাল আগে ‘রবিনহুড’ পরিচয় ছড়িয়ে পড়েছিল মুর্শিদাবাদে। করোনা-সঙ্কটে ফের ‘রবিনহুডে’র নামেই জয়ধ্বনি চলছে বিপন্ন মানুষের মুখে মুখে!
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy