গ্রামের আর পাঁচ জনের সঙ্গে মিলেমিশেই রয়েছেন ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিকেরা। ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া পঞ্চায়েতের লোধা-শবর গ্রাম পূর্বশোলে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
দূরছাই নয়, বরং দূর থেকে আসা মানুষগুলোকে যে দূরত্ব-বিধি মেনেও কাছে টেনে নেওয়া যায়, সেই পথই দেখাচ্ছে জঙ্গলমহলের দুই গ্রাম।
করোনা-কালে এলাকায় ফিরে কার্যত পরবাসী হয়ে থাকতে হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। কোথাও তাঁদের গ্রামে ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না, কোথাও আবার তাঁদের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে রাখা নিয়ে হচ্ছে বিক্ষোভ। রাজ্যের নানা জেলায় যখন এই ছবি, তখন ঝাড়গ্রামের লোধা-শবর অধ্যুষিত প্রত্যন্ত পূর্বশোল গ্রাম আর দহিজুড়ির সংখ্যালঘু এলাকায় উল্টো চিত্র। সেখানে গ্রামবাসীই প্রথমে পরিযায়ীদের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। নিভৃতবাসের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে একে একে পরিযায়ীরা বাড়ি ফিরেছেন। সবটাই মিটেছে নির্বিঘ্নে। কোনও সংক্রমণও ছড়ায়নি।
ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া পঞ্চায়েতের লোধা-শবর গ্রাম পূর্বশোল খাতায়কলমে পিছিয়ে পড়া। গত নভেম্বরে ঝাড়খণ্ডে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলেন গ্রামের শবর ও কুড়মি সম্প্রদায়ের ৮ জন। এক শবর দম্পতি তাঁদের সাত বছরের ছেলেকেও নিয়ে গিয়েছিলেন। গত ২২ মে প্রথমে গাড়িতে, তার পর দীর্ঘ পথ হেঁটে মানিকপাড়ায় পৌঁছন ওই পরিযায়ীরা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষা করিয়ে গ্রামে ফেরেন। স্থানীয় ক্লাব, স্ব-সহায়ক দলের সদস্য ও গ্রামবাসী মিলে বৈঠক করে স্ব-সহায়ক দলের কর্মশালা ভবনেই ৮ জনের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এখন সবাই ঘরে ফিরেছেন। স্ব-সহায়ক দলের নেত্রী তমসী মাহাতো জানালেন, ১৪ দিনের নিভৃতবাস শেষে গ্রামবাসীর উদ্যোগে মাংস-ভাত-মিষ্টি খাইয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে পরিযায়ীদের। শবর দম্পতি মনোরঞ্জন ও রিঙ্কু ভুক্তা বলছিলেন, ‘‘ফেরার আগে ভয় ছিল, গ্রামে ঢুকতে পারব কিনা। এমন আতিথেয়তা পাব সত্যি ভাবিনি।’’
আরও পড়ুন: হাসপাতাল থেকে বধূবেশে স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি
মানিকপাড়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মহাশিস মাহাতো বলেন, ‘‘করোনাকে ভয় না-পেয়ে কী ভাবে জয় করতে হবে সেটা গ্রামবাসীকে বুঝিয়েছিলাম। পূর্বশোলের শালবাগান ক্লাবের সদস্যরাও সহযোগিতা করেছেন। সকলের সাহায্য নিয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজ লাগাতার চলছে।’’
বিনপুরের দহিজুড়িতে আবার নিভৃতবাসে সম্প্রীতির বন্ধন দেখা গিয়েছে। তামিলনাড়ু ফেরত সাত পরিযায়ীর মধ্যে এক জন ছিলেন হিন্দু, বাকিরা মুসলিম। শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ভবনে একসঙ্গে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করেন স্থানীয়রাই। পরিযায়ী শ্রমিক বিজয় মহন্তের খাবার এসেছিল নিভৃতবাসে থাকা মেহবুব আলি, আসগর আলি, সাদ্দাম খাঁ, শেখ রশিদ বক্সদের বাড়ি থেকে। সাদ্দাম, বিজয়েরাও নিভৃতবাস সেরে বাড়ি ফিরেছেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি পালনে কিছু ঘাটতি রয়েছে। এখনও অনেকে মাস্ক পরছেন না, বজায় রাখছেন না সামাজিক দূরত্ব।
স্থানীয় তৃণমূল কর্মী শেখ নাসিরুদ্দিন বলছিলেন, ‘‘সচেতন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা ঠেকানো যাবে, এটা বোঝাতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। ইমাম সাহেবও বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন।’’ দহিজুড়ির জামে মসজিদের ইমাম মৌলনা সাখাওয়াৎ হোসেনের মতে, ‘‘ইসলামের আদর্শ মানুষের পাশে থাকা। পরিযায়ীদের পাশে থেকে এলাকাবাসী সেই মানবধর্ম পালন করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy