দেদার মাদক পাচার থেকে নিষিদ্ধ সামগ্রী লেনদেনও চলছে এই কুরিয়র পদ্ধতিতে। —প্রতীকী চিত্র।
সম্প্রতি নতুন গাড়ি কিনেছে একটি পরিবার। ওই পরিবারের এক সদস্য এর পরেই ফোন পান। সেই ফোনে বলা হয়, গাড়ি নিয়ে রাস্তায় যে কোনও সমস্যায় সাহায্য পাওয়ার জন্য (রোড সাইড অ্যাসিস্ট্যান্স) একটি কার্ড করাতে। সেই সঙ্গে জানানো হয়, কার্ডটির জন্য টাকা দিতে হবে আগাম। পরে কুরিয়র সংস্থার মাধ্যমে কার্ড যাবে বাড়ির ঠিকানায়। কিন্তু কার্ড হাতে পাওয়ার পরেই টাকা দেওয়ার শর্ত দেন গৃহস্থ। ফোনের অন্য প্রান্তের ব্যক্তিও নাছোড়। শেষমেশ জানানো হয়, যে সংস্থার থেকে গাড়ি কেনা হয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে তবেই চূড়ান্ত করা হবে বিষয়টি।
গাড়ির সংস্থা জানায়, এমন কোনও কার্ড তারা দেয় না। তাদের থেকে ফোনও করা হয়নি।
এর পরে দেখা যায়, কুরিয়র সংস্থার মাধ্যমে সরাসরি বাড়ির ঠিকানায় কার্ড চলে এসেছে। তত ক্ষণে গৃহস্থ বুঝে গিয়েছেন, প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে তাঁর জন্য। কুরিয়র সংস্থার প্রতিনিধিকে কোনও মতে ফিরিয়ে দিয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পান তাঁরা।
প্রশ্ন উঠছে, কুরিয়র সংস্থাই বা এমন কার্ড প্রতারণা চক্রের অংশ হয়ে ঠিকানায় পৌঁছে যাচ্ছে কেন? যিনি ঠিকানায় কার্ডটি নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর দাবি, কারা, কী উদ্দেশ্যে, কাকে, কী পাঠাচ্ছে, তা তাঁদের দেখার কথাই নয়। কুরিয়রের ভিতরে কী আছে, তা তো খুলে দেখারই অধিকার নেই তাঁদের।
কলকাতা পুলিশ জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে তাদের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ কুরিয়র সার্ভিসের ‘বাক্স রহস্য’ সমাধান করা। এই পদ্ধতিতে নতুন গাড়ির ক্রেতাকে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা রোড সাইড অ্যাসিস্ট্যান্স কার্ড বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে। আবার কাউকে নতুন কেনা সামগ্রীর গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি কার্ড দেওয়ার নামে কুরিয়র পাঠিয়ে টাকা হাতানো হচ্ছে।
দেদার মাদক পাচার থেকে নিষিদ্ধ সামগ্রী লেনদেনও চলছে এই কুরিয়র পদ্ধতিতে। কিন্তু নিশ্চিত না হয়ে কিছুই করার উপায় নেই। ফলে কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায় পুলিশকে থাকতে হচ্ছে বলে আক্ষেপ লালবাজারের কর্তাদের বড় অংশের। এ ব্যাপারে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো অব ইন্ডিয়া বা এনসিবি-র কলকাতা শাখা থেকে কুরিয়র সংস্থার কর্মীদের সচেতন করা হলেও বহু ক্ষেত্রে কাজ হচ্ছে না বলে দাবি। এই পরিস্থিতিতে কুরিয়র সংস্থার পাঠানো সন্দেহজনক পার্সেলে নজর রেখে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। বর্ষবরণের প্রাক্কালে এ ভাবেই রহস্য সমাধানের কথা ভাবছে লালবাজার।
এমনিতে বছরের এই সময়ে হোটেল, পানশালা এবং নাইট ক্লাবের পার্টিতে গাঁজা,
ক্রিস্টাল মেথ, এলএসডি, হাসিস, কোকেন, হেরোইনের পাশাপাশি বিক্রি হয় নাইট্রোসাম, স্প্যাজ়মোপ্রক্সিভন, সেকোবারবিটাল, ফেনমেট্রাজিন, মিথাকুইনোন, অ্যালপ্রাজ়োলাম, অ্যাটিভান এবং ক্যাম্পোসের মতো বহু অপ্রচলিত মাদক। তবে এগুলির কোনওটিই ভারতে, বিশেষ করে কলকাতায় উপলব্ধ নয়।
লালবাজারের মাদক দমন শাখার এক কর্তা বললেন, ‘‘এখানেই কুরিয়র সংস্থার খেলা
চলে। মূলত ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে এমন মাদক, শিশু পর্নোগ্রাফি, আগ্নেয়াস্ত্র এবং অন্যান্য বেআইনি সামগ্রী বরাত দিয়ে কুরিয়রের মাধ্যমে পাচার করা হচ্ছে। ডার্ক ওয়েবে যে হেতু ব্যবহারকারীর আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস) নথিভুক্ত হয় না, ফলে অপরাধীকে ধরাও সহজ নয়। কার্যত নজরদারি চালানোর পরে এক সময়ে হাওয়া হয়ে যায় অপরাধী।’’ তা হলে উপায়? সাইবার গবেষক থেকে পুলিশ বলছে, সাধারণ নাগরিক সতর্ক না হলে এর সমাধান মুশকিল। সন্দেহজনক সামগ্রী মনে হলেই পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে কুরিয়র সংস্থার কর্মীদেরও।
এই পরিস্থিতিতে সামনে এসেছে ডিএইচএল কুরিয়র সংস্থার নামে প্রতারণা। রীতিমতো তাদের লোগো, নকশা, ভাষা নকল করে কিউআর কোড পাঠাচ্ছে প্রতারকেরা। বলা হচ্ছে, কুরিয়র আটকে গিয়েছে। কিউআর কোড স্ক্যান করে সামগ্রী পাওয়া যাবে বা নতুন করে পাঠানোর বরাত দিতে হবে। তাতেই এই কুরিয়র সংস্থার ব্যবহারকারীরা লক্ষ লক্ষ টাকা হারাচ্ছেন বলে অভিযোগ। এই সংস্থার আয়ারল্যান্ডের অফিস থেকে এ নিয়ে একটি নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে। সেখানেও গ্রাহককে সচেতন হওয়ারই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy