Advertisement
০১ অক্টোবর ২০২৪
Junior Doctors Cease Work

ফের পূর্ণ কর্মবিরতি ঘোষণা জুনিয়র ডাক্তারদের, কোন ১০ দফা দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরলেন তাঁরা?

ফের পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত জুনিয়র ডাক্তারদের। নির্যাতিতার বিচার, নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে ১০ দফা দাবিতে মঙ্গলবার থেকে ফের পূর্ণ কর্মবিরতি জুনিয়র ডাক্তারদের।

স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান।

স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৫৫
Share: Save:

সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে হামলার পরই জুনিয়র ডাক্তারেরা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন। অবশেষে তা-ই হল। ফের পূর্ণ কর্মবিরতির ঘোষণা রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাদের। সোমবার রাতে জেনারেল বডির বৈঠকে বসেছিল রাজ্যের ২৩টি মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের মিলিত মঞ্চ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্‌স ফ্রন্ট’। প্রায় আট ঘণ্টা ধরে চলা ওই বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ‘ভয়ের রাজনীতি’ দূর করা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। মোট ১০ দফা দাবিতে শুরু হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের এই দ্বিতীয় বারের কর্মবিরতি।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

একনজরে জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবি:

১. স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত নির্যাতিতার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

২. স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অক্ষমতা এবং দুর্নীতির দায় নিতে হবে স্বাস্থ্য দফতরকে। নারায়ণস্বরূপ নিগমকে অবিলম্বে স্বাস্থ্যসচিবের পদ থেকে অপসারণ করতে হবে।

৩. রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে কেন্দ্রীয় ভাবে ‘রেফারেল’ ব্যবস্থা (রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া) চালু করতে হবে।

৪. প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে কতগুলি বেড ফাঁকা রয়েছে, তা জানানোর জন্য একটি করে ডিজিটাল মনিটর রাখতে হবে।

৫. প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কলেজভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকবেন। সিসিটিভি, ডাক্তারদের জন্য অন কল রুম, শৌচালয়, হেল্পলাইন নম্বর, প্যানিক বোতাম চালু করতে হবে।

৬. হাসপাতালগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। সিভিক ভলান্টিয়ারের বদলে পুলিশকর্মীদের রাখতে হবে দায়িত্বে। নিরাপত্তার জন্য রাখতে হবে মহিলা পুলিশকর্মীদেরও।

৭. হাসপাতালগুলিতে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে যাঁদের বিরুদ্ধে ‘ভয়ের রাজনীতি’ চালানোর অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রাজ্যস্তরেও অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে হবে।

৯. প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজগুলির রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংগঠনকে স্বীকৃতি দিতে হবে। মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিটি কমিটিতে চিকিৎসক পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।

১০. পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং পশ্চিমবঙ্গ হেল্‌থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগগুলির প্রসঙ্গে দ্রুত তদন্ত শুরু করতে হবে।

উল্লেখ্য, আরজি করের ঘটনার পর থেকেই লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। পরে সরকারের তরফে নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে বেশ কিছু ইতিবাচক আশ্বাস পাওয়ার পর ২১ সেপ্টেম্বর কর্মবিরতি আংশিক প্রত্যাহার করে তাঁরা কাজে ফেরেন। যোগ দিয়েছিলেন জরুরি পরিষেবায়। কিন্তু এরই মধ্যে গত সপ্তাহে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর রোগীর পরিজনদের হামলার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার পর ফের কর্মবিরতি। প্রথমে শুধু সাগর দত্তের জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন। বাকি মেডিক্যাল কলেজগুলি কোন পথে হাঁটবে, সেই নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার রাতে শুরু হয়েছিল জেনারেল বডির বৈঠক। ওই বৈঠকের পরেই সব মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আবার পূর্ণ কর্মবিরতির ঘোষণা জুনিয়র ডাক্তারদের মিলিত মঞ্চের।

দ্বিতীয় বারের পূর্ণ কর্মবিরতিতে যে ১০ দফা দাবি জুনিয়র ডাক্তারেরা তুলে ধরেছেন, তার মধ্যে অনেকগুলি ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকার আগেই ইতিবাচক পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে। কী কী করণীয়, তা নিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যসচিব নিগমকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সেখানে সিসি ক্যামেরা, শৌচালয়, ডিউটি রুম, কেন্দ্রীয় ভাবে হেল্পলাইন নম্বর, ‘প্যানিক বাটন’, অন্যত্র রোগী স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভাবে নজর রাখা, নিরাপত্তায় মহিলা পুলিশকর্মী নিয়োগ, হাসপাতালের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য দ্রুত পদক্ষেপের কথা বলেছিলেন মুখ্যসচিব।

৯ অগস্ট নির্যাতিতার মৃত্যুর পর থেকে যে কর্মবিরতি শুরু হয়েছিল, মুখ্যসচিবের ওই চিঠির পর তা আংশিক প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ১৯ সেপ্টেম্বই তাঁরা জানিয়েছিলেন, ২০ তারিখ সিবিআই দফতর অভিযান করবেন। তার পরে আংশিক ভাবে কাজে যোগ দেবেন। স্বাস্থ্যসচিবকে পাঠানো মুখ্যসচিবের সেই চিঠির প্রসঙ্গও মঙ্গলবার সকালের প্রেস বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের বক্তব্য, মুখ্যসচিবের সেই চিঠির পর ১২ দিন পার হয়ে গেলেও কোনও ‘দৃশ্যমান পরিবর্তন’ তাঁরা দেখতে পাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE