শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। —ফাইল চিত্র
বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবে রাজ্যপালের ‘ভূমিকা’ নিয়ে রাজ্যের ক্ষোভ বাড়ছিল। এ বার বিধির বাঁধনে খর্ব করে দেওয়া হল আচার্যের ক্ষমতা। উপাচার্যদেরও রাশ টেনে ধরা হল। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার খর্ব হল বলে শিক্ষা শিবিরের অভিযোগ।
মঙ্গলবার বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পেশ করা উচ্চশিক্ষা বিধিতে বলা হয়েছে, আচার্য হিসেবে রাজ্যপালের কোনও সচিবালয় থাকবে না। রাজ্যপাল সরাসরি রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না। চাইলে উচ্চশিক্ষা দফতরের মাধ্যমে তা করতে হবে। যদি দফতর মনে করে, তবেই রাজ্যপাল সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত লিখিত কোনও বিধি এত দিন ছিল না। অনেক দিন ধরেই এটা করার কথা চলছিল। এখন করা হল।’’ আড়াই বছর আগে উচ্চশিক্ষা আইনে যে-সংশোধনী আনা হয়েছিল, এটা তারই বিধি। মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘কারও ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি। যাঁর যা ক্ষমতা ছিল, তা-ই রয়েছে। যাঁর যা ভূমিকা, তা নির্দিষ্ট করে লিখিত ভাবে ছিল না। এ বার সেটাই করে দেওয়া হল।’’
আরও পড়ুন: লক্ষ্য বঙ্গভোট, বিল নিয়ে নানা কৌশল বিজেপির
জগদীপ ধনখড় রাজ্যপালের দায়িত্ব নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে সরাসরি যোগসূত্র তৈরির জন্য আলাদা সচিবালয় গড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ দিনের বিধিতে আচার্যের প্রায় কোনও ভূমিকারই উল্লেখ নেই। উপাচার্যেরাও সরাসরি আচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না। তা করতে হবে উচ্চশিক্ষা সচিবের মাধ্যমে। উপাচার্য বাছাইয়ে সার্চ কমিটির পছন্দক্রমই মানতে হবে রাজ্যপালকে। অর্থাৎ তাঁর কাছে প্রথম পছন্দ ছাড়া অন্য কাউকে বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন-সহ সব কিছুই উচ্চশিক্ষা দফতরে জানাতে হবে, আচার্যকে নয়। পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘কখনওই আচার্যের অনুমোদনের জন্য সার্চ কমিটির তথ্য পাঠানোর বাধ্যতামূলক নিয়ম ছিল না। যা ছিল, তা অলিখিত।’’
আরও পড়ুন: তিন মাস অন্তর বিল, দেখার আশ্বাস মন্ত্রীর
সমাবর্তনে কাদের সাম্মানিক ডিগ্রি দেওয়া হবে, তার তালিকা জানাতে হবে উচ্চশিক্ষা দফতরকে। দফতর তা আচার্যের কাছে পাঠাবে অনুমোদনের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে-কোনও কমিটিতে রাজ্যপালের মনোনীত প্রার্থীর জন্য শিক্ষামন্ত্রী কমপক্ষে তিনটি নাম প্রস্তাব করবেন। রাজ্যপালের নাম পছন্দ না-হলে কারণ-সহ বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকে জানাবেন। শিক্ষামন্ত্রী মনে করলে তাঁর বক্তব্য লিখিত ভাবে রাজ্যপালকে জানাতে পারেন। কিন্তু রাজ্যপাল সেই তালিকা থেকে নাম বেছে নিতে বাধ্য।
রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করতেই কি এই নতুন বিধি? পার্থবাবুর জবাব, ‘‘যে-সময়ে এই বিধি আনা হল, তাতে হয়তো আপনাদের অন্য রকম মনে হচ্ছে। এর সঙ্গে আচার্যের ক্ষমতা খর্ব করার কোনও ব্যাপার নেই।’’
নয়া বিধি অনুযায়ী সেনেট, কোর্ট, সিন্ডিকেট, কর্মসমিতির সভা ডাকতে হলে উপাচার্যকে শিক্ষা দফতরে জানাতে হবে। প্রয়োজনে রাজ্যপালকে তা জানাবে শিক্ষা দফতর। কিছু দিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্টের বৈঠকে যোগ দেন ধনখড়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট বৈঠকেও যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। অনিবার্য কারণে কর্তৃপক্ষ তা স্থগিত করে দেন। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে ধনখড় বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে উপাচার্য বা অন্য কেউ ছিলেন না। পার্থবাবু বলেন, ‘‘আচার্য সেনেট বা কোর্টের বৈঠকে আসবেন, বাজেট পাশের সময় আসবেন— এমনটা কোথাও উল্লেখ ছিল না। উনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেই পারেন।’’ বিধিতে বলা হয়েছে, উপাচার্যেরা বিদেশ যেতে চাইলে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে। দেশ বা বিদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য প্রতিষ্ঠানে তাঁদের সফরের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে উচ্চশিক্ষা দফতরে। তার প্রতিলিপি শিক্ষামন্ত্রীকেও দিতে হবে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (জুটা)-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘এই বিধিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার সম্পূর্ণ কেড়ে নেওয়া হল। উপাচার্য তো শিক্ষাবিদও। অপমান করা হল তাঁদের।’’ এই বিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের কফিনে শেষ পেরেক বলে মন্তব্য করেন এসইউসি-র শিক্ষক-নেতা তরুণ নস্কর। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীরও অভিযোগ, এই বিধিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার খর্ব হল। খর্ব হল আচার্যের ক্ষমতাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy