বারবার লম্বা প্রশিক্ষণে ডেকে নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসন আমলাদের ‘মগজ ধোলাই’ করতে চাইছে বলে সন্দেহ করছে নবান্ন। তার মোকাবিলায় আগেই কিছু কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এ বার কেন্দ্রে এই রাজ্যের আইএএস অফিসারদের প্রথাগত প্রশিক্ষণ প্রকল্পেও কোপ পড়ছে রাজ্য সরকারের। চলতি বছরে কোনও আইএএস অফিসারকেই ‘মিড কেরিয়ার’ প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতর।
মোদীর প্রশাসন আমলাদের মগজ ধোলাই করছে, এমন সন্দেহের বশে এর আগে প্রশিক্ষণ শেষে নতুন চাকরিতে ঢোকা আইএএস অফিসারদের পোস্টিং দেওয়া হয়নি রাজ্যে। এ বার অন্তত ১৫-১৬ বছর চাকরি করা আমলাদের ক্ষেত্রেও একই পন্থা নেওয়া হচ্ছে। ডব্লিউবিসিএস অফিসার থেকে যাঁরা আইএএস (প্রোমোটি) হয়েছেন, প্রতি বছর মুসৌরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তাঁদের ‘ইনডাকশন কোর্স’ বা অভিষেক-পাঠ দেওয়া হয়। তাতেও রাজ্যের কোনও অফিসারকে পাঠাতে নিষেধ করে দিয়েছে নবান্নের শীর্ষ মহল।
সরকারি সূত্রের খবর, ২০১৭-এর ১ জানুয়ারি যত পদ শূন্য ছিল, তার ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গে ১৭ জন ডব্লিউবিসিএস অফিসার ২০১৮ সালে আইএএস হয়েছেন। লোকসভা ভোটের পরে সেই ১৭ জনের মধ্যে আট জনকে ইনডাকশন কোর্সে ডেকেছিল মুসৌরির আইএএস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় পার্সোনেল মন্ত্রক গত ৭ জুন থেকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের প্রায় ২০০ অফিসারকে নিয়ে প্রশিক্ষণ চালু করেছে। ‘স্টেট সার্ভিস’-এর অফিসারেরা পদোন্নতির সূত্রে আইএএস হলে তাঁদের সাত-আট সপ্তাহের ইনডাকশন কোর্স বাধ্যতামূলক। এই প্রশিক্ষণ না-হলে আইএএসের চাকরি ‘কনফার্ম’ হয় না। কিন্তু এ বার বাংলা থেকে কোনও প্রোমোটি আইএএস-কেই প্রশিক্ষণের জন্য ছাড়া হয়নি। এক কর্তা জানান, মে-র শেষ দিকে কর্মিবর্গ প্রশাসনিক দফতর দু’-তিন বার তদ্বির করলেও শীর্ষ স্তর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অফিসারদের ছাড়া হবে না।
ছাড়া হবে না কেন?
ওই কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘ভোটের সময় তিন মাস কোনও কাজ হয়নি। আবার এত জন অফিসার দু’মাসের জন্য চলে গেলে উন্নয়ন আটকে যাবে।’’
একই ভাবে আমলাদের মিড কেরিয়ার প্রশিক্ষণেও ‘না’ করে দিয়েছে নবান্ন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আমলাদের মধ্যে যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের ৪০ জন অফিসারের মুসৌরিতে ফেজ-থ্রি প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা ছিল। রাজ্যের কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতর ১৭ জনকে প্রশিক্ষণে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল শীর্ষ স্তরের কাছে। শীর্ষ স্তর থেকে পত্রপাঠ তা বাতিল করে দেওয়া হয়। ২০০৪ থেকে ২০১১ ব্যাচের ওই অফিসারদের ফেজ-থ্রি প্রশিক্ষণ নেওয়া জরুরি ছিল। একই ভাবে কমপক্ষে ২৮ বছর চাকরি করা আমলাদের শেষ পর্যায়ের ফেজ-ফাইভ প্রশিক্ষণ নেওয়া জরুরি। আমলাদের কর্মজীবনে মুসৌরিতে এটিই সর্বশেষ প্রশিক্ষণ। প্রায় এক মাসের এই প্রশিক্ষণেও রাজ্যের কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি। রাজ্যের ১০-১২ জন অফিসার এই প্রশিক্ষণের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন বলে কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক দফতর সূত্রের খবর।
কর্মরত আমলারা পরের বছর মিড কেরিয়ার প্রশিক্ষণের সুযোগ পেতে পারেন বলে মনে করছেন কর্তাদের কেউ কেউ। কিন্তু ডব্লিউবিসিএস থেকে যাঁরা আইএএস হয়েছেন, তাঁদের চাকরি পাকা করার জন্য মুসৌরিতে যে-প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে, সেখানে না-গেলে সমস্যা বাড়বে। কিন্তু এ বছর আর সেই সুযোগ থাকছে না। বঞ্চিত হয়েছেন শুধু বাংলার অফিসারেরা। এমনই এক আমলার কথায়, ‘‘যদি ভাগ্য ভাল থাকে, মোদী সরকার সদয় হতে পারে। নইলে মুশকিলে পড়তে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy