Advertisement
৩১ জানুয়ারি ২০২৫
15th Finance Commission

কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কে ‘শৈত‍্য’ কাটছে? গ্রামোন্নয়নে অর্থ পাচ্ছে নবান্ন, ঠাঁই ঝড়প্রবণ রাজ্যের কেন্দ্রীয় মানচিত্রেও

২০২০-’২১ অর্থবর্ষ থেকে এই পর্যন্ত রাজ্য পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ১৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা পেয়েছে। নবান্ন আশাবাদী, এ বার বকেয়া নিশঃর্ত তহবিলও ছাড়বে কেন্দ্রীয় সরকার।

West Bengal Government to get 15th Finance Commission funds for rural development

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (ডান দিকে) গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৭
Share: Save:

লোকসভা ভোটে অনেক বিষয়ের সঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলার শাসকদল তৃণমূলের অন্যতম অভিযোগ ছিল, কেন্দ্র রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না। রাজ্য বরং নিজেদের তহবিল থেকে সেই অর্থ দিচ্ছে। প্রায় প্রতিটি জনসভায় তৃণমূলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ম করে বলতেন, ‘‘মোদী নিচ্ছে (কর)! দিদি দিচ্ছে (প্রকল্পের টাকা)!’’ বিজেপির পাল্টা বক্তব্য ছিল, আয়-ব্যয়ের হিসাব না দিলে টাকা দেবে না কেন্দ্রীয় সরকার। লোকসভা ভোটের পর আট মাস কেটে গিয়েছে। চলতি অর্থবর্ষও শেষের মুখে। বছর ঘুরলে বিধানসভা ভোট। তার আগে কেন্দ্র এবং রাজ্যের ‘শৈত্য’ কি ক্রমশ কাটছে? সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের দু’টি পদক্ষেপ এই জল্পনার জন্ম দিয়েছে।

প্রথমত, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক বাংলার জন্য ৭৪০ কোটি টাকা ছাড়ার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অধীনে চলতি অর্থবর্ষে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেতে চলেছে বাংলা। টাকার অঙ্ক ‘বিরাট’ না হলেও, একে ‘রাজনৈতিক জয়’ হিসাবেই দেখাতে চাইছে নবান্ন। কারণ, এই টাকা পাওয়ার জন্য কেন্দ্রের উপর ধারাবাহিক ‘চাপ’ রেখেছিল রাজ্য সরকার।

পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা পাওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকার ধারাবাহিক ভাবে সমস্ত কাজকে মসৃণ রাখতে চাইছিল। কেন্দ্র থেকে আসা টাকা খরচের বিষয়ে রাজ্যের যে আটটি জেলা পিছিয়ে ছিল, মাস দেড়েক আগে সেই জেলাগুলির প্রশাসনকে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল নবান্ন। তার অন্যতম কারণ ছিল পরবর্তী তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে দিল্লির উপর ‘চাপ’ তৈরি করা। দিল্লির সরকার বা সেই সরকারের প্রধান দল বিজেপি যাতে বলতে না পারে, টাকা পাঠানো হলেও খরচ করতে পারেনি রাজ্য সরকার।

যে টাকা আসতে চলেছে, তা গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নে খরচ করতে পারবে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের দাবি ছিল, বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের যে বরাদ্দ, তাতে বাংলাকে গুরুত্ব দেওয়া হোক। কারণ, রাজ্যের একাধিক জেলা উপকূলবর্তী হওয়ার কারণে এখানে প্রতি বছর ঘূর্ণিঝ়ড়, দুর্যোগ লেগেই থাকে। ঝড়প্রবণ রাজ্যের যে মানচিত্র তৈরি করেছে দিল্লি, তাতেও ঠাঁই পেয়েছে বাংলা।

পঞ্চদশ অর্থ কমিশন কাজ শুরু করেছিল ২০২০-’২১ অর্থবর্ষ থেকে। যার মেয়াদ প্রায় শেষের মুখে। ইতিমধ্যে ষোড়শ অর্থ কমিশন গঠন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। মাস দুয়েক আগে সেই কমিশনের শীর্ষকর্তারা রাজ্যে এসে সর্বদল বৈঠকও করে গিয়েছেন। অর্থ কমিশনে দু’ধরনের তহবিল থাকে। একটি শর্তাধীন তহবিল। অন্যটি নিঃশর্ত তহবিল। যে ৭৪০ কোটি টাকা গ্রামোন্নয়ন খাতে পেতে চলেছে রাজ্য, তা নিঃশর্ত তবহিলের টাকা। ফলে এই টাকা যে কোনও পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে রাজ্য সরকার ব্যবহার করতে পারে। শর্তাধীন তহবিলের টাকা খরচ করতে হয় জল সরবরাহ এবং নিকাশির কাজে। ২০২০-’২১ অর্থবর্ষ থেকে এই পর্যন্ত রাজ্য পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ১৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা পেয়েছে। নবান্ন আশাবাদী, এ বার বকেয়া নিশঃর্ত তহবিলও ছাড়বে কেন্দ্রীয় সরকার।

রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘আমাদের দাবি যুক্তিসঙ্গত ছিল বলেই কেন্দ্র টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘আরও অনেক খাতে, অনেক টাকা বকেয়া রয়েছে।’’ ঝড়প্রবণ রাজ্যগুলির মানচিত্রে বাংলার জায়গা পাওয়াকেও রাজ্য সরকারের ‘সাফল্য’ হিসাবেই দেখাতে চেয়েছেন চন্দ্রিমা। তিনি বলেন, ‘‘আমরাই বলেছিলাম বাংলাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা প্রতি বছর দুর্যোগ মোকাবিলা করি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ দিত না।’’ চন্দ্রিমা আশাবাদী, এ বার দুর্যোগ হলে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ছাড়বে।

লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য সরকার নিজেদের তহবিল থেকে ১০০ দিনের কাজে মজুরদের বকেয়া মজুরি দিয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ৫২ লক্ষ মানুষের অ্যাকাউন্টে এক লপ্তে থোক টাকা পৌঁছেছিল। সেই টাকা দেওয়ার পাশাপাশিই তৃণমূল তাদের প্রচারে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘বাংলা-বিরোধী’ ভাষ্য তৈরি করেছিল। ভোটের ফল বলছে, বিজেপির ক্ষতিই হয়েছে। লাভবান হয়েছে তৃণমূল। সামনের বছর বিধানসভা ভোটের আগে কি সেই ধারণা মুছতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার?

রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য তা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকার সময় রাজ্যগুলির সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করত। বিজেপি সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলে না।’’ পাশাপাশিই তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মানে না। এটা একটা অদ্ভুত দল! যারা শুধু বুথের লিড নিয়ে ভাবে। সার্বিক উন্নয়ন তাদের অভিধানে নেই।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী আবার মনে করেন কেন্দ্র এবং রাজ্যের ‘দূরত্ব’ আসলে তৈরি করা। ফলে ‘শৈত্য’ কাটার কোনও বিষয় নেই। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্র আর রাজ্যের কোনও দূরত্ব নেই। থাকলে আরজি কর নিয়ে রাজ্য সরকার এবং সিবিআইয়ের অবস্থান এক হত না। সবটাই বোঝাপড়া।’’ সেই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেন, ‘‘রাজ্য বরাদ্দ পেলে আমাদের অখুশি হওয়ার কারণ নেই। কিন্তু টাকা যেন সঠিক ভাবে খরচ হয়। লুট যেন না হয়। এর আগে যা হয়েছে, তা নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য আকচাআকচি করেছে, কিন্তু শ্বেতপত্র প্রকাশ করেনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal government Narendra Modi Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy