মিড ডে মিলের টাকায় ক্ষতিপূরণ! — নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছিলেন, পড়ুয়াদের জন্য কেন্দ্রের পাঠানো মিড ডে মিল প্রকল্পের টাকা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তর ২৪ পরগনা সফরের বিল মিটিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। শুভেন্দু বলেছিলেন, পড়ুয়াদের খাবার টাকা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের বিল মেটানো হচ্ছে! যা শুনে তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছিল, এটি একটি প্রশাসনিক বিষয়। এ নিয়ে ‘রাজনৈতিক কুৎসা’ করা নিম্নরুচির পরিচয়। অনেক সময়েই প্রশাসনিক ভাবে আপৎকালীন ভিত্তিতে একটি খাতের অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা, হয়ে থাকে। পরে আবার সংশ্লিষ্ট খাতের অর্থ সেই খাতেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে তাতে রাজনৈতিক বিতর্ক পুরোপুরি থামেনি। তার মধ্যেই প্রকাশ্যে মিড ডে মিলের অর্থ অন্য একটি খাতে ব্যয় করার নজির। তবে এটি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত।
গত বছরের অগস্ট মাসে বীরভূমের রামপুরহাটে একটি দুর্ঘটনার পর অগস্টেই মৃতদের পরিবারবর্গ ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, সেই টাকার একটি অংশ দেওয়া হয়েছে মিড ডে মিল খাত থেকে। প্রাপকদের ব্যাঙ্কের পাসবইতেও তার উল্লেখ রয়েছে।
রবিবার ওই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও বিশেষ প্রয়োজনে এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ করা হয়ে থাকতে পারে। তবে সঠিক খাতের টাকা এসে গেলে তা পূরণ করে দেওয়া হয়।’’ দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ হিসাবে মিড ডে মিল খাতের টাকা দেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন জানিয়ে জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত যে, অন্য কোনও খাত থেকে টাকা দেওয়া হলেও সেটা আবার পূরণ করে দেওয়া হয়েছে।’’
গত ১০ অগস্ট বীরভূমের মল্লারপুরে পথ দুর্ঘটনায় একটি ন’জনের মৃত্যু হয়েছিল। চাষের মাঠ থেকে যখন তাঁরা অটোয় বাড়ি ফিরছিলেন, তখন মল্লারপুর থানা এলাকার মেটেলডাঙা গ্রামে জাতীয় সড়কে সিউড়িগামী একটি বাসের সঙ্গে অটোটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তাতে ন’জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের সকলেরই বাড়ি পারকান্দি গ্রামে। ওই মর্মান্তিক ঘটনার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মৃতদের পরিবারের জন্য দু’লক্ষ টাকা করে এককালীন ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন। রাজ্য সরকারের তরফেও ওই একই অঙ্কের টাকা ক্ষতিপূরণ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেই টাকা মৃতদের বিভিন্ন পরিজনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। সেখানে দেখা যায় কেন্দ্রের টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এলেও রাজ্যের টাকা এসেছিল ‘কুক্ড মিড ডে মিল’ অ্যাকাউন্ট থেকে। সেই নথি আনন্দবাজার অনলাইনের হেফাজতে রয়েছে। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে তা ব্যবহার করা হল।
ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের মধ্যে সোনামণি হেমব্রম সোরেন, গোপীনাথ হেমব্রম, সুকল হাঁসদাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেনে টাকা জমা পড়ার প্রমাণ রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সকলেই চেক মারফত রাজ্যের ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন গত অগস্ট মাসে। চেকগুলি ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার পরে তা প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে নিয়ম মাফিক জমা হয়েছে। পাসবইয়ে দেখা যাচ্ছে, সেখানে লেখা রয়েছে ওই দু’লক্ষ টাকা এসেছে ‘কুক্ড মিড ডে মিল’ অ্যাকাউন্ট থেকে।
সাধারণ ভাবে এই ধরণের ক্ষতিপূরণের টাকা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল বা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে আসার কথা। সেই বিষয়ে জানতে চাওয়ায় বীরভূমের জেলাশাসক বলেন, ‘‘সঙ্গে সঙ্গে ত্রাণের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সাময়িক ভাবে অন্য কোনও তহবিল থেকে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। মিড ডে মিল থেকে হয়েছে কি না জানি না। তবে অন্য কোনও তহবিল থেকে টাকা দেওয়া হয়ে থাকলেও সেটা আবার ওই তহবিলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
এই বিষয়টি কি ‘নিয়মবিরুদ্ধ’? না কি এমন করা যায়? এই প্রশ্নের জবাবে জেলাশাসক বলেন, ‘‘প্রয়োজন তো নিয়ম মানে না! কোনও বাড়িতেও যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, তবে প্রথমেই তো ক্ষতিগ্রস্তের দিকে নজর দেওয়া হয়। সেটাই করা হয়েছে। তবে আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত, যে ফান্ড (তহবিল) থেকেই দেওয়া হোক, সেটা সাময়িক। পরে নিশ্চিত ভাবে ওই তহবিলে ওই টাকা জমা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy