Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Unique ID Card

এক পরিবার, এক পরিচিতি! আধারের মতো ‘ইউনিক আইডি’ তৈরির ভাবনাচিন্তা করছে রাজ্য

কর্নাটকে ‘কুটুম্ব’ নামে একটি পদ্ধতি চালু আছে। তাতে একটি পরিবারকে একটি নির্দিষ্ট পরিচিতি-নম্বর (ইউনিক আইডি) দেওয়া হয়। সেই নম্বরের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের তথ্য ধরা থাকে।

Mamata Banerjee.

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৫২
Share: Save:

‘কথায়-কথায়’ আধার সংযোগ চাওয়া নিয়ে বারবার কেন্দ্রের বিরোধিতায় সরব হয়েছে রাজ্য। কিন্তু এ বার রাজ্যের প্রত্যেক পরিবারের জন্য একটি করে নির্দিষ্ট পরিচিতি (ইউনিক আইডেন্টিটি) তৈরির পথে পা বাড়াতে চলেছে তারা। লক্ষ্য, বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা প্রদানের পথ মসৃণ করা। এবং প্রত্যেক পরিবারের জন্য ওই নির্দিষ্ট পরিচিতি-ভিত্তিক তথ্যভান্ডার তৈরির ভিত হিসেবে আধার সংযোগের ‘ছাঁকনির’ উপরেই আস্থা রাখছে তারা।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজ্যের সর্বত্র সমীক্ষা চালিয়ে এই পরিবারভিত্তিক তথ্যভান্ডার তৈরি করা হবে। অভিজ্ঞ আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, এখন আধার নম্বর থেকে যেমন এক জন ব্যক্তি সম্পর্কে বায়োমেট্রিক-সহ বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়, তেমনই একটি পরিবার সম্পর্কে জরুরি তথ্য এক লপ্তে হাতে আসবে রাজ্যের এই নতুন ইউনিক আইডেন্টিটি থেকে। যেমন, পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য, তাঁদের কে কোন সরকারি পরিষেবার সুবিধা পান ইত্যাদি বিষয়গুলি তোলা থাকবে ওই তথ্যভান্ডারে। যে সমস্ত পরিবার কোনও না কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নেয়, প্রাথমিক ভাবে তাদেরই এই পরিচিতি দেওয়া হবে। তবে তার বাইরেও কোনও পরিবার তা চাইলে, বিমুখ করবে না রাজ্য সরকার।

সরকারি পরিষেবা পেতে এখন অনেক কাগজপত্রই পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য আলাদা-আলাদা ভাবে জমা দিতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ। প্রশাসনিক সূত্রে দাবি, নতুন ব্যবস্থা চালু হলে, বারবার কাগজ জমা দেওয়ার ঝক্কি অনেকটাই কমবে। বলা চলে, ব্যাঙ্কে কেওয়াইসি চালু হওয়ার পরে অনেকটা যে ধরনের সুবিধা পান গ্রাহকেরা।

কর্নাটকে ‘কুটুম্ব’ নামে একটি পদ্ধতি চালু আছে। তাতে একটি পরিবারকে একটি নির্দিষ্ট পরিচিতি-নম্বর (ইউনিক আইডি) দেওয়া হয়। সেই নম্বরের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের তথ্য ধরা থাকে। এই পদ্ধতি চালুর আগে একটি পরিবার কোনও পরিষেবা পেতে চাইলে, সরকারের কাছে আবেদন করতে হত। প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হত অনলাইনে বা সরাসরি গিয়ে। সেই নথি যাচাইয়ের পরে পরিষেবা চালু হত। নতুন পদ্ধতিতে প্রত্যেক পরিবারের প্রায় সব প্রয়োজনীয় তথ্যই যাচাই হয়ে জমা থাকে সরকারের ঘরে। ফলে, কোনও পরিষেবার ক্ষেত্রে নতুন করে নথি জমা বা তা যাচাইয়ের প্রয়োজন চট করে পড়ে না। এতে সরকার ও উপভোক্তার সময় বাঁচে, মসৃণ হয় পরিষেবা প্রদানের প্রক্রিয়া।

এ রাজ্যের প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, কর্নাটক সরকারের এই পদ্ধতির আদলেই নিজেদের তথ্যভান্ডার তৈরি করতে চাইছে নবান্ন। এ নিয়ে সরকারি স্তরে বেশ কয়েকটি বৈঠকও সেরে ফেলেছেন প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, খাদ্যসাথীর তথ্যকেই মানদণ্ড হিসেবে ধরা হবে। কারণ, রাজ্যে প্রায় ৮.৮৩ কোটি ডিজিটাল রেশন কার্ড রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৮.৫৮ কোটি কার্ডের সঙ্গে আধার যুক্ত। পাশাপাশি চলছে প্রত্যেক রেশন কার্ডের সঙ্গে উপভোক্তার মোবাইল নম্বর যুক্ত করার কাজ। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বায়োমেট্রিক এবং আধারের মাধ্যমে যাচাই হওয়া এই কার্ডগুলি নকল করা শক্ত। সুতরাং, এই কার্ডধারীদের দাখিল করা নথি প্রাথমিক ভাবে যাচাই হয়েই রয়েছে। এক কর্তার কথায়, “ডিজিটাল রেশন কার্ডে প্রায় ৯৭% আধার যোগ তো রয়েছেই, তার সঙ্গে এখনও পর্যন্ত ৭২% কার্ডে আঙুলের ছাপ দিয়ে যাচাই প্রক্রিয়াও শেষ। বাকিটাও দ্রুত করা হচ্ছে। আশা করা যায়, এ বছরের শেষের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া যেমন শেষ হবে, তেমনই পরিবারভিত্তিক নথিবদ্ধকরণও চালু করা যাবে।”

কেন এমন প্রকল্পের প্রয়োজন হচ্ছে, সেই প্রশ্নের জবাবে প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, জনগণনা কবে হবে, তার কোনও ইঙ্গিত এখনও নেই। অথচ ২০১১ সালে শেষ জনগণনার পরে এত দিনে জনসংখ্যা এবং তার চরিত্র বদলেছে অনেকখানি। অথচ গত কয়েক বছরে চালু হয়েছে বহু সরকারি পরিষেবা-প্রকল্প। তাঁদের কথায়, বিভিন্ন অনুদান প্রকল্পে রাজ্যের মোট খরচ এখন বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো। এখনও পর্যন্ত যতগুলি এমন প্রকল্প রয়েছে, তাতে প্রতি বছর নতুন উপভোক্তার অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে। তা করাতে বছরে অন্তত দু’বার করে দুয়ারে সরকারের শিবির আয়োজন করতে হয়। তাতে খরচ হয় বেশ কয়েক কোটি টাকা। পাশাপাশি, একই পরিবারের নতুন কোনও সদস্য নির্দিষ্ট কোনও পরিষেবার আবেদন করতে চাইলে, তাঁকে এমন অনেক ফের নথি জমা করতে হয়, যা আগেই জমা করেছেন পরিবারের অন্য কোনও সদস্য। তা যাচাইয়ের পরে তবে পরিষেবা মেলে। পারিবারিক তথ্যভান্ডারের নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে, এই প্রক্রিয়া অনেক সরল ও সময় বাঁচানোর মতো হবে বলে তাঁদের দাবি।

এক কর্তার কথায়, “কোনও পরিবারে কে কী পরিষেবা পাচ্ছেন, সেই তথ্য ধরাই থাকবে। সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন থাকলে, পরিষেবা সে ভাবেই পরিমার্জিত হবে। পরিবারের সদস্যদের কে কবে কোন পরিষেবার উপযুক্ত হচ্ছেন, তা-ও আগে থেকে বোঝা সম্ভব। ফলে কোনও সুবিধা নতুন কাউকে দিতেও সমস্যা হবে না। কারণ, যোগ্য উপভোক্তা হিসাবে সংশ্লিষ্টের তথ্য আগে থেকেই ধরা থাকবে।”

অভিজ্ঞ আমলাদের একাংশের মতে, রাজ্য সরকারের টানাটানির সংসারে এই নতুন ব্যবস্থা খানিকটা স্বস্তির কারণ হতে পারে। সরকারের বাজেট তথ্য অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরে (২০২৩-২৪) সম্ভাব্য রাজস্ব ঘাটতির অঙ্ক প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। রাজকোষ ঘাটতি পৌঁছতে পারে প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকায়। এতে দৈনন্দিন খরচ, বেতন-পেনশন-ভাতা, ঋণ শোধে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা তুলে রেখে অনুদান প্রকল্পগুলি চালিয়ে যাওয়া মুখের কথা নয়। তাঁদের কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট তথ্যভান্ডার থাকলে, চালু খরচের আগাম হিসাব যেমন সম্ভব হবে, তেমনই সুবিধাজনক হতে পারে অপ্রয়োজনীয় খরচে রাশ টানাও।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy