Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
রাশ টানা হচ্ছে খরচে

সচিবদের আর্থিক ক্ষমতা ছাঁটল নবান্ন

এক সময় উন্নয়নে টাকা খরচে গতি আনতে বিভিন্ন দফতরের সচিবদের হাতে আর্থিক ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছিল। আর্থিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ফলে যখন-তখন ফাইল নিয়ে অর্থ দফতরে দৌড়তে হত না অন্য দফতরের কর্তাদের।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৪৮
Share: Save:

ঘাড়ে চেপেছে বেতন কমিশনের বোঝা। তাই খরচে রাশ টানতে শুরু করেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। এতে উন্নয়নে কোপ পড়তে পারে বলে আমলাদের একটি অংশের আশঙ্কা।

এক সময় উন্নয়নে টাকা খরচে গতি আনতে বিভিন্ন দফতরের সচিবদের হাতে আর্থিক ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছিল। আর্থিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ফলে যখন-তখন ফাইল নিয়ে অর্থ দফতরে দৌড়তে হত না অন্য দফতরের কর্তাদের। সেই ব্যবস্থা বদলে এ বার আগের অবস্থায় ফেরার নির্দেশ জারি করেছেন অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। তাতে অধিকাংশ দফতরের সচিবদের এক কোটি টাকা খরচের আর্থিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অর্থ দফতরের অনুমোদন ছাড়া কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নতুন কোনও ভবন তৈরি বা অন্য ধরনের নির্মাণকাজ।

অর্থ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরে উন্নয়নে গতি আনতে লাল ফিতের ফাঁস আলগা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাতে বিভিন্ন দফতরকে অকারণে ছোটখাটো কাজ করার জন্যও অর্থ দফতরের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে না-হয়, সেই ব্যবস্থা তৈরি করতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই, ২০১২ সালে প্রথম বিভিন্ন দফতরের সচিবদের হাতে আর্থিক ক্ষমতা বাড়াতে শুরু করে অর্থ দফতর। ফলে বিভিন্ন প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কাজ সরাসরি অনুমোদন করতে পারতেন সচিবেরাই। তবে বড় কোনও প্রকল্প বা নির্মাণের প্রয়োজন হলে তা যেত অর্থ দফতরে।

অর্থ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সচিবদের আর্থিক ক্ষমতা ধাপে ধাপে বাড়াতে বাড়াতে ২০১৮ সালে ২০ কোটি টাকা করা হয়। অর্থাৎ বাজেট বরাদ্দ হয়ে থাকলে পূর্ত, পুর ও নগরোন্নয়ন, স্বাস্থ্য, সেচ এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সচিবেরা ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রকল্প নিজেরাই অনুমোদন দিতে পারতেন। শুধু দফতরের আর্থিক উপদেষ্টা দেখে নিতেন, খরচের জন্য আর্থিক নিয়মগুলি মানা হয়েছে কি না। অন্য সব দফতরের ক্ষেত্রে সচিবদের আর্থিক ক্ষমতা ছিল ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বাড়িঘর নির্মাণ বা সংস্কারের ক্ষেত্রে সচিবদের আর্থিক ক্ষমতা ছিল সর্বাধিক ১০ লক্ষ টাকা।

রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পর্যায়ের এক আমলা বলেন, ‘‘সচিবদের ক্ষমতা দেওয়ার অর্থ ছিল আর্থিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। তার জেরেই রাজ্যের নিজস্ব পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ পৌঁছেছে ৫৪ হাজার কোটি টাকায়। অর্থ দফতর এখন সেই ক্ষমতা কেড়ে নিলে উন্নয়নে কোপ পড়তে বাধ্য।’’

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অর্থসচিব সম্প্রতি এক নির্দেশে বলেছেন, পূর্ত, পুর ও নগরোন্নয়ন, স্বাস্থ্য, সেচ এবং জনস্বাস্থ্য দফতরের সচিবেরা ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারবেন। যা ছিল ২০ কোটি টাকা। জলসম্পদ দফতরকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা খরচের আর্থিক ক্ষমতা। এই ছ’টি দফতর ছাড়া বাকি ৪৬টি দফতরের সচিবেরা এক কোটি টাকার বেশি নিজেরা খরচ করতে পারবেন না। তার বেশি খরচ করতে হলে বিষয়টি পাঠাতে হবে অর্থ দফতরে। এ ছাড়া ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নির্মাণ-খরচের যে-ক্ষমতা ছিল, তা নামিয়ে আনা হয়েছে ৫০ হাজারে।

‘‘সরকার আর নতুন কোনও নির্মাণকাজ চাইছে না। মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের প্রশাসনিক বৈঠকে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর জানুয়ারি

থেকে বেতন কমিশন চালু হবে। এক ধাক্কায় খরচ বাড়বে ১০ হাজার

কোটি। ফলে প্রশাসনিক খরচে রাশ টানতেই হবে,’’ বলেন অর্থ দফতরের এক কর্তা।

কিন্তু সচিবদের আর্থিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া মানে তো উন্নয়নে কোপ পড়া। তা হলে উন্নয়নের কী হবে?

অর্থকর্তাদের বক্তব্য, উন্নয়নের টাকা যাতে কোথাও বন্ধ না-হয়, তা দেখা হবে। তবে যে-সব প্রশাসনিক খরচ কিছু দিন না-করলেও চলে, সেগুলোর অনুমোদন দেওয়া হবে না। কারণ, বেতন কমিশন ও ঋণশোধের পরে অযথা টাকা খরচের সুযোগ কম।

অন্য বিষয়গুলি:

Pay Commission State Government Nabanna Budget
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy