ফাইল চিত্র।
কেউ বলছেন, সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে যে বিশেষ সুবিধা হবে না, সেটা অবশেষে বুঝতে পেরেছে নবান্ন। আবার অনেকেই বলছেন, এটা নিছক সময় নষ্টের অছিলা। আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার প্রায় শেষ লগ্নে পৌঁছে রাজ্য সরকার শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টেই ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানায়। এবং তার পরেই এই ধরনের প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে।
মে মাসে বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ তিন মাসের মধ্যে সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মেটানোর নির্দেশ দেয়। সরকারের তরফে ‘রিভিউ পিটিশন’ বা রায় পুনর্বিবেচনার আর্জির শুনানি আগামী সপ্তাহে ওই বেঞ্চেই হতে পারে।
সরকারি কর্মীদের একাংশ বলছেন, নানা খাতে খরচের বোঝা সামলাতে সামলাতে রাজ্যের ভাঁড়ার কার্যত শূন্য। বকেয়া ডিএ দিতে গেলে রাজ্য সরকার আর্থিক দিক থেকে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। নির্দেশ উপেক্ষার দায়ে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের যাতে অবমাননার মুখে পড়তে না-হয়, তাই শেষ বেলায় রিভিউ পিটিশন। নইলে রিভিউ পিটিশন পেশ করতে এত দিন কেন লাগল, প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
বিচারপতি সামন্তের পর্যবেক্ষণ ছিল, ডিএ সরকারি কর্মীদের মৌলিক অধিকার তা না-দিয়ে সরকার সেই অধিকার হরণ করছে। আইনজীবীদের অনেকে বলছেন, হাই কোর্ট যে-রায় দিয়েছে, তাতে যথেষ্ট জোরালো যুক্তি রয়েছে, তাই শীর্ষ আদালতে গিয়ে বিশেষ সুবিধা হবে না বলেই মনে করছেন সরকারের আইন বিশারদেরা। কেন্দ্র এবং অন্যান্য রাজ্য যখন ডিএ দিচ্ছে, তখন কোন যুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্মীদের ডিএ থেকে বঞ্চিত করছেন, সেই প্রশ্নও উঠতে পারে সুপ্রিম কোর্টে। তখন রাজ্য কোনও জোরালো যুক্তি দেখাতে পারবে কি না, সন্দিহান আইনজীবীদের অনেকে।
অর্থ-পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বকেয়া ডিএ মেটাতে গেলে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা লাগবে। পড়ুয়া ঋণ কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ নানান কল্যাণ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। ওই সব খাতে খরচ বেড়েছে অনেক। অথচ কোভিড-ধাক্কার পরে আয় তেমন বাড়েনি। এর মধ্যেই চালিয়ে যেতে হচ্ছে দৈনন্দিন সরকারি খরচ, বেতন-পেনশন...। সব মিলিয়ে আর্থিক দিক থেকে নাজেহাল অবস্থা রাজ্যের। তাই কিছুটা সময় পেতে চাইছে নবান্ন।
অন্যতম মামলাকারী সংগঠন কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ়ের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য ই-ফাইলিং পিটিশন করেছে আদালত অবমাননা থেকে বাঁচতে। আমরা আবেদনের প্রতিলিপি পেলে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানাব আদালতে। আমাদের আশা, আদালত সরকারের এই আর্জির সিদ্ধান্তকে মান্যতা দেবে না।’’
রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহের প্রতিক্রিয়া, “বর্তমান সরকার আইন-আদালত মানে না। এ-সব আর্জি সময় নষ্ট করার কৌশল। বামফ্রন্ট সরকার কর্মীদের ডিএ-র যে-অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, এই সরকার তা কেড়ে নিতে চাইছে। ৩০ অগস্ট রাজ্য জুড়ে দু’ঘণ্টার কর্মবিরতি পালিত হবে। বৃহত্তর লড়াই হবে পথেই।” সরকারি কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীল বলেন, “ডিএ কর্মীদের মৌলিক অধিকার বলে জানিয়েছে হাই কোর্ট। সরকারের পক্ষে এর বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা আইনি লড়াইয়ে রয়েছি এবং আশা রাখি যে, রিভিউ পিটিশন খারিজ হবে। বকেয়া ডিএ-র দাবিতে ১৭ অগস্ট বেলা ১২টা থেকে নবমহাকরণের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করব আমরা। দাবি না-মিটলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে এগোব।”
তৃণমূলের রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের প্রবীণ নেতা মনোজ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, “কর্মীরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছেন। সরকারও অনেক দিন সময় পেয়েছে। এখন আদালতের রায় কর্মীদের পক্ষে গিয়েছে। ফলে কালবিলম্ব না-করে আদালতের রায় রূপায়ণ করা উচিত সরকারের।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy