Advertisement
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Jadavpur University

যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যু: রাজ্য শোনেনি কমিশনের কথা, ক্ষতিপূরণ পাননি মৃত ছাত্রের পরিজন

গত ডিসেম্বরে কমিশনের চেয়ারপার্সন, প্রাক্তন বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য এবং কমিশনের সদস্য বিচারপতি মধুমতী মিত্র যাদবপুরের ছাত্রটির বিষয়ে রাজ্যকে এই সুপারিশ করেছিলেন। এর পরে আট-ন’মাস কেটে গিয়েছে।

Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৪ ০৮:০৫
Share: Save:

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নোটিস পাঠিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। কিন্তু এক বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় মৃত ছাত্রটির বিষয়ে কমিশনের সুপারিশ কার্যত কানেই তোলেনি রাজ্য সরকার। মেন হস্টেলের তেতলা থেকে পড়ে বাংলা অনার্সের নবাগত ছাত্রটির মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় তাঁর পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ সুপারিশ করেছিল কমিশন।

গত ডিসেম্বরে কমিশনের চেয়ারপার্সন, প্রাক্তন বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য এবং কমিশনের সদস্য বিচারপতি মধুমতী মিত্র যাদবপুরের ছাত্রটির বিষয়ে রাজ্যকে এই সুপারিশ করেছিলেন। এর পরে আট-ন’মাস কেটে গিয়েছে। এখনও সেই সুপারিশ কার্যকর করা হয়নি বলেই দাবি। শনিবার যাদবপুরের সেই ছাত্রের মৃত্যুবার্ষিকীর সকালে তাঁর বাবা ফোনে বলছিলেন, “আমাদের কাছে মানবাধিকার কমিশনের একটা চিঠি এসেছিল। এই পর্যন্তই! আমরা অবশ্য টাকার জন্য কারও কাছে ভিক্ষা চাইনি। চাইবও না। বিষয়টা রাজ্য সরকারের বিবেকের উপরে নির্ভরশীল।” কমিশনের চেয়ারপার্সন জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সুপারিশ, মুখ্যসচিবকে পাঠাই। এর পরে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র দফতরের যাওয়ার কথা। সুপারিশ মানা হবে কি হবে না, বা কত দূর মানা হবে (অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট), তা রাজ্যের তরফে আমাদের জানানো হয়। এখনও কেউ কিছু বলেননি। তবে সুপারিশ মানা হবে না, এমনও বলা হয়নি।”

কমিশনের ব্যাখ্যা, সন্তান হারানোর ক্ষতিপূরণ হয় না। কিন্তু যাদবপুরের ছাত্রটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথা রাজ্য সরকারের গাফিলতি বা নজরদারির অভাবেই মারা গিয়েছেন। ক্ষতিপূরণে তাই ১০ লক্ষ টাকা দিতে বলা হয়েছে রাজ্যকে। রাজ্যের মুখ্যসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি। তবে রাজ্য প্রশাসনের একাংশের মত, যাদবপুরের র‌্যাগিং-কাণ্ডে পুলিশি তদন্তের ভিত্তিতে মামলার বিষয়টি বিচারাধীন। তাই হয়তো এখনই ক্ষতিপূরণের বিষয়ে পদক্ষেপ করছে না রাজ্য। তবে কমিশন সূত্রের খবর, তাদের রিপোর্টে কে বা কারা ছাত্রটির মৃত্যুর জন্য প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী, তা দেখা হয়নি। রিপোর্টটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে সার্বিক ভাবে সুরক্ষার ফাঁক বা ছাত্রদের বিপন্নতার দিকটি দেখা হয়। তা ছাড়া, সন্তান মা-বাবার ভবিষ্যৎ, এই দিকটি বিচার করেও ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করা হয়। কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ মামলায় আন্দোলনরত প্রতিবাদী মহিলাকে পুলিশের কামড় বা ন্যাশনাল মোডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রসবের সময়ে গাফিলতির ঘটনায় রাজ্য ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। আমাদের অনেক সুপারিশই রাজ্য মেনে নিয়েছে। তবে যাদবপুরের ঘটনাটিতে এখনও সাড়া মেলেনি।’’

যাদবপুরের ঘটনায় ১২ জন ছাত্র এখন জেলে। মামলায় তিন জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে বলে জানান বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায়। মৃত ছাত্রের বাবা বলেন, ‘‘আরজি করের ডাক্তার ছাত্রীটির মা-বাবার মনে কী ঝড় বইছে, তা আমার মতো দুর্ভাগা অভিভাবকই বুঝতে পারবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE