Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Population

বাংলায় শিশু জন্মালেই ঋণের বোঝা ৫৮ হাজার! আশঙ্কার কারণ নেই, দাবি রাজ্য সরকারের

পূর্বতন বাম সরকারের শেষ আর্থিক বছরে জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৯.১২ কোটি। গড় মাথাপিছু ঋণের অঙ্ক ছিল ২০,৫৩০ টাকা। সেখানে ২০২২-২৩ সালে রাজ্যের বাজেট প্রস্তাবে পুঞ্জীভূত ঋণ ৫,৮৬,৪৩৮ কোটি টাকা।

২০২০-২১ সালে রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিএসডিপি) মাত্র ১.১%।

২০২০-২১ সালে রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিএসডিপি) মাত্র ১.১%। প্রতীকী ছবি।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:০৮
Share: Save:

এ রাজ্যে জন্মালেই ঘাড়ে ঋণ অন্তত ৫৮ হাজার টাকার!

এই তথ্য উঠে আসছে ফিসকাল রেসপন্সিবিলিটি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্টের (এফআরবিএম) পরিসংখ্যানে। এই তথ্য অনুযায়ী, পূর্বতন বাম সরকারের শেষ আর্থিক বছরে (২০১০-১১) জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৯.১২ কোটি। আর গড় মাথাপিছু ঋণের অঙ্ক ছিল ২০,৫৩০ টাকা। সেখানে ২০২২-২৩ সালে রাজ্যের বাজেট প্রস্তাবে পুঞ্জীভূত ঋণ ৫,৮৬,৪৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এখন জনসংখ্যা বেড়ে ১০ কোটি ধরলেও সেই মাথাপিছু ঋণের বোঝা প্রায় ৫৮ হাজার টাকার! এক কর্তার কথায়, “একজন শিশু জন্মানোর মুহূর্তেই ওই পরিমাণ ঋণ চাপছে তার ঘাড়ে।” যদিও অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের দাবি, “এফআরবিএম ভঙ্গ হচ্ছে না।... তা-ও যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই ঋণ নিচ্ছে রাজ্য।”

এমনিতে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে বৃদ্ধির চাকায় গতি বজায় রাখতে আয়ের থেকে বেশি ব্যয়কে সব সময় খারাপ চোখে দেখেন না অর্থনীতিবিদদের এক বড় অংশ। তবে সেই ব্যয় মূলত সড়ক-সেতু-বন্দরের মতো স্থায়ী সম্পদ তৈরিতে ব্যবহারে গুরুত্ব দেন তাঁরা। কারণ,তাতে দীর্ঘ মেয়াদে আর্থিক কর্মকাণ্ড বাড়ে। সেই সূত্রে রাজস্ব আদায়ও বাড়ে রাজ্যের। ফলে ধার শোধ করা সহজ হয়। কিন্তু রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, সেই মূলধনী খাতে এ রাজ্যের বরাদ্দ কার্যত তলানিতে। ২০২০-২১ সালে রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিএসডিপি) মাত্র ১.১%। সংশ্লিষ্ট সূত্রের একাংশের বক্তব্য, বেতন, পেনশন, প্রশাসনিক খরচ, নগদ বিলি, ভর্তুকি, অনুদান প্রকল্পের খরচ, পুরনো ঋণের সুদ মেটাতেই প্রায় ৯০% অর্থ খরচ হয়ে যায়। কোভিড-ধাক্কায় আয় কমায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ফলে বহু কাজকর্ম সামাল দিতেই ধার করা ছাড়া রাস্তা থাকছে না। ফলে সব মিলিয়ে সমস্যা হল, এতে ঋণের অঙ্ক লাফিয়ে বাড়লেও সেই তুলনায় পরিকাঠামো নির্মাণ কমই। অর্থনীতিবিদ তথা বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ির মতে, “উন্নয়নকে গতি দেওয়াই পরিত্রাণের একমাত্র পথ। তবেই আয় বাড়বে। খেলা-মেলায় খরচ হলে, কী করে হবে?” যদিও রাজ্যের দাবি, তাদের ঋণ-ব্যবস্থাপনা বিগত সরকারের তুলনায় অনেক বেশি মজবুত।

রাজ্য সরকারের দাবি, ২০১০-১১ সালে ঋণ ছিল জিএসডিপি-র ৪১.৯%। এখন তা কমে ৩৩-৩৪ শতাংশে। আর্থিক ব্যবস্থাপনা যে সঠিক খাতে প্রবাহিত হচ্ছে, এটা তার প্রমাণ। যদিও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সতর্কবার্তা, ২০২৬-২৭ আর্থিক বছরে জিএসডিপি-র নিরিখে ঋণ পৌঁছতে পারে ৩৭ শতাংশে। অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কথায়, “এফআরবিএম ভঙ্গ হচ্ছে না। জিএসডিপি-র তুলনায় ঋণের অনুপাত উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তাই এফআরবিএম-এর সীমা বেড়েছে। তা-ও যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই ঋণ নিচ্ছে রাজ্য।”

কিন্তু অশোকের প্রশ্ন, “জিএসডিপি-র তুলনায় ঋণ কমেছে, এটা ঠিক। কিন্তু ঋণের সুদের বোঝা রাজ্যের আয়ের থেকে যে এত বেশি, তা বিপদের।” সুদ মেটাতে বেশি খরচ হওয়া যে চিন্তার, তা জানিয়েও অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের বক্তব্য, “এই সমীক্ষা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের একটি দল করেছে। ওই তথ্যের সঙ্গে একমত নই।” তাঁর বক্তব্য, “সব রাজ্য এবং দেশে আয়ের থেকে ব্যয় বেশি। শুধু মূলধনী খাতে খরচ করলে, অনুদান বন্ধ করতে হবে। এতে ভবিষ্যতের গরিবেরা হয়তো উপকৃত হবেন, কিন্তু এখনকার গরিবদের অবস্থার উন্নতি হবে না। সরকার তাঁদের বিপদের মুখে ঠেলে দেবে কী ভাবে?”

এই পরিস্থিতিতে ঋণ শোধ করতে এবং রোজকার খরচ চালাতেও আরও ঋণ— এই দুষ্টচক্র থেকে রাজ্য কী ভাবে বেরিয়ে আসে, সে দিকেই নজর আর্থিক পর্যবেক্ষকদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Population Debt West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy