—ফাইল চিত্র।
ডেঙ্গি নিয়ে তথ্য গোপন করার অভিযোগ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক বার উঠেছে। একই অভিযোগ উঠেছে রাজ্যে অপরাধের তথ্য নিয়ে। এমনকি, কোভিডে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কতটা ঠিক, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। রবীন্দ্র সরোবরের জলের গুণমান নিয়েও এ বার একই অভিযোগ উঠল!
পুলিশ-প্রশাসনের সক্রিয়তায় আদালতের রায়কে মান্যতা দিয়ে এ বছর সরোবরে ছটপুজো আটকানো গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু চলতি মাসের ৫ তারিখ সরোবরের জলের গুণমান সংক্রান্ত যে রিপোর্টটি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে, সেখানে জলের তাপমাত্রা ছাড়া অন্য কোনও তথ্যেরই উল্লেখ নেই। পরিবেশবিদদের একাংশের বক্তব্য, আসলে সরোবরে শেষ পর্যন্ত ছটপুজো হবে কি হবে না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল না রাজ্য সরকার। তাই ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে’-ই সরোবরের জলের গুণমান সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। যাতে সেখানে ছটপুজো হলে আগের তুলনায় জলের মানের অবনমন কতটা হল, তার তুলনামূলক বিচার করে বিতর্কের জন্ম না হয়।
সরোবরের জলের গুণমান পরীক্ষার দায়িত্ব রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের। পর্ষদের কর্তাদের অবশ্য বক্তব্য, তথ্য গোপনের ব্যাপারই নেই। কালীপুজো সংক্রান্ত ব্যস্ততায় সেগুলি ঠিক সময়ে ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। পরে দেওয়া হবে। তা হলে শুধু তাপমাত্রাই বা কেন দেওয়া হল? এর উত্তর মেলেনি। যদিও রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘এ রকম হওয়ার কথা নয়। কেন পুরো তথ্য দেওয়া হয়নি, খোঁজ করে দেখছি।’’
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মাপকাঠি অনুযায়ী, পুকুর, জলাশয়, নদী-সহ যে কোনও জায়গার জলকে ব্যবহারের ভিত্তিতে (ডেজ়িগনেটেড বেস্ট ইউজ়, ডিবিইউ) এ, বি, সি, ডি এবং ই এই পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন ‘এ’ গুণমানের জলে মোট কলিফর্মের সংখ্যা প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ৫০ এমপিএন (মোস্ট প্রব্যাবল নাম্বার) বা তার কম থাকার কথা। দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকার কথা প্রতি লিটারে ছ’মিলিগ্রাম বা তার বেশি। ‘বি’ গুণমানের জলের ক্ষেত্রে এই দু’টির মাত্রা যথাক্রমে প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ৫০০ এমপিএন বা তার কম এবং প্রতি লিটারে পাঁচ মিলিগ্রাম বা তার বেশি থাকার কথা। ‘সি’ মানের জলের ক্ষেত্রে আবার এই দুইয়ের মাত্রা থাকার কথা যথাক্রমে প্রতি ১০০ মিলিলিটারে পাঁচ হাজার এমপিএন বা তার কম এবং প্রতি লিটারে চার মিলিগ্রাম বা তার বেশি। সেই বিচারে রবীন্দ্র সরোবরের জলের মান ‘সি’ পর্যায়ের। অর্থাৎ, পরিশোধন ও জীবাণুনাশের পরে যা পানযোগ্য হবে।
যদিও বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ, অরণ্য ও জলবায়ু মন্ত্রকের ‘ন্যাশনাল লেক কনজ়ার্ভেশন প্ল্যানস’ এবং ‘ন্যাশনাল কনজ়ার্ভেশন প্রোগ্রাম’-এর অন্তর্ভুক্ত রবীন্দ্র সরোবরের মতো একটি লেকে কী ভাবে ফিকাল কলিফর্ম মিশছে, সেটি অনুসন্ধান করা উচিত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের এক অধ্যাপক-গবেষকের কথায়, “নভেম্বরে তো কোনও তথ্যই দেওয়া হল না। শুধু তাপমাত্রা উল্লেখ করে ছেড়ে দেওয়া হল।’’ নদী-বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার বলছেন, ‘‘এমনি সময়েই রবীন্দ্র সরোবরের জল দূষিত থাকে। তার উপরে ছটপুজো হলে জলের মান কোথায় নামত, তা সহজবোধ্য।’’
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘কোভিড-বর্জ্যের ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকার যে পরিমাণ বর্জ্যের কথা জানিয়েছিল, তাতে গোলমাল ছিল। এটাও সেই মানসিকতার লক্ষণ।’’ পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের তথ্য গোপন করার প্রবণতা বরাবর রয়েছে। এখানেও ব্যতিক্রম হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy