অ-মাইক হওয়ার লক্ষণ দেখা গেল না রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাজকর্মে! রাজনৈতিক দলগুলির লাগাতার যে-চাপ দিচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত তার সামনে নতি স্বীকারই করল তারা। দিল্লি বোর্ডের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার মধ্যেই পুরভোটের প্রচারে মাইক বাজানোর অনুমতি দিল।
আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত কলকাতায় এবং ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যের বাকি অংশে নির্বাচনী প্রচারে মাইক ব্যবহার করা যাবে বলে বুধবার জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। অথচ এই সময়ের মধ্যে (৬, ৭, ৮, ৯, ১৩, ১৬, ১৭, ১৮ এবং ২০) ন’দিন সিবিএসই বোর্ডের মোট ৩১টি বিষয়ের পরীক্ষা রয়েছে। ১৮ এপ্রিল, পরীক্ষার দিনেই পড়েছে কলকাতা পুরসভার ভোট। কমিশনের এই নির্দেশে পড়ুয়ারা বিস্তর সমস্যায় পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিবিএসই বোর্ডের জনসংযোগ আধিকারিক রমা শর্মা বলেন, ‘‘আমরা আগেই বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসনকে পরীক্ষার দিনক্ষণ লিখিত ভাবে জানিয়েছিলাম। তার পরেও যে এমনটা হল, এটা দুর্ভাগ্যজনক।’’
মাইক বাজানোর জন্য কমিশনের এই অনুমতি আইনগত ভাবে কতটা বৈধ, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, রাজ্য সরকারের পরিবেশ দফতর এবং পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ২০১১ সালের এপ্রিলে জারি করা এক নির্দেশিকায় বলা আছে, সব বোর্ড ও কাউন্সিলের পরীক্ষা শুরু হওয়ার তিন দিন আগে থেকে পরীক্ষা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত মাইকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তখনকার বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস আদালতের দ্বারস্থ হয়। হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, বিভিন্ন রাজ্যে ভোট পরিচালনা করার সময় শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা মাথায় রাখা উচিত নির্বাচন কমিশনের। বিশেষ করে খোলা জায়গায় মাইকের যথেচ্ছ ব্যবহারের বিষয়টি। কারণ, তাতে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কী বলছে রাজ্য নর্বাচন কমিশন?
‘‘সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদের স্বার্থের কথা ভেবেই মাইক বাজানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে,’’ বলছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কি আদালতের এবং সরকারি নির্দেশের অবমাননা করা হচ্ছে না? সুশান্তবাবুর উত্তর, ‘‘সব দিক খতিয়ে দেখেই নির্দেশিকা জারি করেছি। কেউ মামলা করতেই পারেন।’’
কমিশনের বক্তব্য, ২০১১ সালের এপ্রিলে হাইকোর্ট পরীক্ষার চলাকালীন যথেচ্ছ মাইক ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু এ দিন তাদের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কাজের দিন বেলা ৩টে থেকে রাত ১০টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মাইক বাজানো যাবে। কমিশনের সাফাই, পরীক্ষা বেলা দেড়টায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। চার বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনের সময় হাইকোর্ট উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে পরীক্ষা চলাকালীন মাইক বাজানোর অনুমতি দিয়েছিল বলে জানাচ্ছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশের সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের বিষয়টি ‘বিশেষ ক্ষেত্র’ বলে ছাড় দিয়ে হাইকোর্ট বলেছিল, এটা পরবর্ত়ী কালে নজির হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।’’ বিশ্বজিৎবাবুর বক্তব্য, কমিশনের নির্দেশের বিরুদ্ধে যা করার, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে করতেই হবে। আর রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘আমি এখনও নির্দেশিকা হাতে পাইনি। পেলে মন্তব্য করব।’’
মাইক নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে এ দিন নবান্নে রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, ভোটের জন্য কেন্দ্র কত কোম্পানি বাহিনী দিতে পারবে, দিল্লির কাছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সেটা জানার পরেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসবে সরকার। তার পরে নির্দিষ্ট সংখ্যক আধাসেনা চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়া হবে। কমিশনের বক্তব্য, ভোটের অন্তত ১০ দিন আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীর চলে আসা উচিত।
পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির পরে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, এ-পর্যন্ত ২৩টি অস্ত্র এবং ২৮টি কার্তুজ আটক করা হয়েছে। শান্তিভঙ্গের অভিযোগে ৪২৫ জনকে এবং হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৯ জনকে। বিভিন্ন ঘটনায় জামিন-অযোগ্য ধারায় ১০১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy