কৈলাস বা মুকুল কেউই আর এখন রাজ্য বিজেপির সঙ্গে যুক্ত নন। — ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের আগে অন্য দল থেকে নেতা-কর্মী ভাঙানোর পরিকল্পনা করছে রাজ্য বিজেপি। অতীতেও এমনটা হয়েছে। তবে এ বার নতুন ভাবে করতে চান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরা। দলের রাজ্য কার্যকারিণী বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার অন্য দলের কর্মীদের দলে নেওয়ার বিষয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের পরিবর্তে নিচুতলার কর্মীদের বেশি গুরুত্ব থাকবে। তিন পর্যায়ের কমিটি তৈরি করা হতে পারে বিজেপির যোগদান মেলা কর্মসূচির জন্য।
যোগদান মেলা— গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে বাংলার রাজনীতিতে এই শব্দবন্ধকে পরিচিত করে তুলেছিল বিজেপি। তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কর্মসূচির শুরুটা করেছিলেন জেলায় জেলায় অন্য দলের কর্মীদের বিজেপিতে নিয়ে আসার মাধ্যমে। কিন্তু পরে আর তাঁর নিজের হাতে বিষয়টা ছিল না। সেই সময়ে রাজ্যের পর্যবেক্ষক থাকা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং তৃণমূল থেকে আসা মুকুল রায়। দু’জনেই আর রাজ্য বিজেপির অঙ্গ নন। কৈলাস এখন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী। আর মুকুল বিজেপির টিকিটে জিতলেও ঘোষিত ভাবে তৃণমূলে ফিরেছেন। সেই সময়ে রাজ্য বিজেপিতে অন্য দলের নেতা বা টালিগঞ্জের অভিনেতা নিয়ে আসার বিষয়ে দাপট দেখিয়েছেন দু’জনে। বাংলা থেকে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল নেতাদের নিয়ে গিয়েছিলেন দিল্লিতে, অমিত শাহের হাত থেকে পতাকা নিয়ে বিজেপিতে যোগদানের জন্য। এঁদের বেশির ভাগই এখন আর বিজেপিতে নেই। যাঁরা বিধানসভায় টিকিট পেয়ে পরাজিত হয়েছিলেন তাঁরা তো বটেই, মুকুলের মতো জিতেও অনেকে তৃণমূলে ফিরেছেন।
বিজেপির এই কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে অনেক রসিকতাও হয়েছে সেই সময়ে। তবে এটাও ঠিক যে, তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা প্রকাশের পরে বিজেপির হেস্টিংস দফতরে সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই (রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য) থেকে কলকাতার সোনালি গুহদের যোগদান সত্যিই মেলার চেহারা নিয়েছিল। ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর শুভেন্দু বিজেপিতে যোগদানের সময়ে মেদিনীপুরে শাহের সভায় যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই আর বিজেপিতে নেই। সবচেয়ে বড় উদাহরণ বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল। আবার যে সব তারকাকে বিজেপিতে এনে মুকুল হাতযশ দেখিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে যশ দাশগুপ্ত, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়েরা রাজনীতি থেকেই অনেক দূরে।
এ বার বিজেপি তেমন পথে হাঁটতে চায় না। সুকান্ত বলেন, ‘‘অন্য দলের কর্মীদের আমরা নেব। একেবারে বুথ স্তরের কর্মীদের। আর তৃণমূলের ক্ষেত্রে সৎ নেতা পাওয়া যাবে ওই স্তরেই। উপরের দিকে চোর বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।’’ বিজেপি যেটা ঠিক করেছে, তাতে রাজ্য স্তরে যোগদানের বিষয়টি দেখার জন্য একটি কমিটি তৈরি হবে। কোনও ব্যক্তি নন, কাউকে দলে নেওয়া হবে কি না সেটা ঠিক করবেন কমিটির সদস্যেরা। রাজ্য স্তরের যোগদানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতামত নেওয়ার বিষয়টাও থাকবে।
গত বুধবার রাজ্য বিজেপির বর্ধিত কার্যকারিণী বৈঠকে স্পষ্ট ভাবেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দলের জেলা স্তরে এবং মণ্ডল স্তরেও একটি করে এমন কমিটি গড়া হবে। প্রসঙ্গত, বিজেপি প্রতিটি লোকসভা আসনকে একটি জেলা হিসাবে দেখে। শুধু দার্জিলিং লোকসভা দু’টি জেলা। পাহাড় ও সমতল। এর প্রতিটিতেই যোগদান সংক্রান্ত কমিটি হবে। এর নীচে বিজেপির সাংগঠনিক ভাগ রয়েছে মণ্ডল। একটি বিধানসভা এলাকায় সাধারণত তিনটি মণ্ডল থাকে। এই স্তরেও কমিটি হবে। কিন্তু কোনও এলাকার অন্য দলের কর্মী নেওয়া হলে সেখানকার বুথ কমিটির মতামতই সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব পাবে। তিন বা চারটি বুথ নিয়ে বিজেপির এক একটি শক্তিকেন্দ্র। সেই স্তরের নেতারা বুথস্তরের মতামত জানাবেন মণ্ডল কমিটিকে। এর পরে জেলার কমিটি যোগদানের বিষয়টি দেখবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy