বিজেপি-র দলীয় কর্মসূচির মেনুতে ভাতের সঙ্গে মাছও পড়ছে।
বাংলার ক্ষমতার কেন্দ্র নীলবাড়ি দখলের স্বপ্ন দেখেও তা বাস্তবায়িত করতে পারেনি বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ১৮ জন সাংসদ পাঠাতে পারলেও বিধানসভা নির্বাচনের শেষে দেখা গিয়েছে ৭৭ আসন এবং উপনির্বাচন মিটতে মিটতে ৭৫ আসনে আটকে বিজেপি। সামনে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন। আসনসংখ্যা বাড়াতে না পারলেও বিজেপি-কে ২০১৯-এর ফল ধরে রাখতে হবে। তার জন্য ‘বাংলা বিজেপি’-কে ‘বাঙালি বিজেপি’ হতে হবে বলে মনে করেন দলের নেতাদের বড় অংশ।
সেই লক্ষ্যে তিন বছর আগে থেকেই গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উদ্যোগী হয়েছেন। সম্প্রতি রাজ্য কমিটি ঘোষণার পর তা চোখে পড়েছে। পুরনোদের অনেককে বাতিলের খাতায় রেখে যে কমিটি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ঘোষণা করেছেন তাতে ‘সংস্কারের ইঙ্গিত’ রয়েছে বলে দলের এক নেতার বক্তব্য। একই সঙ্গে বিজেপি-কে ‘বাংলার দল, বাঙালির দল’ হিসেবে সামনে আনার চেষ্টাও চোখে পড়ার মতো।
যেমন, নতুন রাজ্য কমিটিতে অবাঙালি নেতাদের সংখ্যা অনেক কম। অবাঙালি বলতে একজন সহ-সভাপতি সঞ্জয় সিংহ এবং কোষাধ্যক্ষ কেন্দ্রাশিস বাপট। তবে দু’জনেই অভ্যাস, আচরণে পুরোপুরি বাঙালি। জেলা সভাপতি বাছার ক্ষেত্রেও একই ফর্মুলা গুরুত্ব পেয়েছে। বিজেপি সূত্রে খবর, শীঘ্রই ঘোষণা হতে-চলা জেলা থেকে মণ্ডল স্তরের কমিটিগুলিতেও মূলত বাঙালিরাই বেশি জায়গা পাবেন। ঠিক সেই কারণেই বিজেপি-র দলীয় কর্মসূচির মেনুতে ভাতের সঙ্গে মাছও পড়ছে। এ-ও সেই বাঙালি হতে চাওয়ারই প্রকাশ।
বিজেপি ‘দলগত’ ভাবে নিরামিষাশী কি না, সে প্রশ্ন তৈরি হয় দলের বিভিন্ন কর্মসূচির মেনু দেখলে। তৃণমূলের সঙ্গে ডিম-ভাত যেমন জুড়ে গিয়েছে, তেমনই বিজেপি মানেই সবজি-ভাত। কিন্তু গত সোমবার দলের কেন্দ্রীয় নেতা বিএল সন্তোষের কর্মসূচিতে খাদ্যতালিকায় ছিল মাছের কালিয়া এবং ফিশফ্রাই। আগেও বিজেপি-র কর্মসূচিতে খাদ্যতালিকায় মাছ ছিল। কিন্তু এই প্রথমবার তা এতটা প্রকাশ্যে এল। এমনকি, সংবাদমাধ্যমের জন্যও সেই মাছ-ভাত বরাদ্দ ছিল। তাতে খানিকটা শোরগোল পড়েছে।
মাছ বাঙালি সংস্কৃতির অঙ্গ। যেমন বাঙালি সংস্কৃতির অঙ্গ দুর্গাপুজো। গত বিধানসভা ভোটের আগে দেখা গিয়েছে মধ্যপ্রদেশের কৈলাস বিজয়বর্গীয় বাঙালির ঢাকে কাঠি দিয়েছেন। গত কয়েকবছরে সর্বভারতীয় বিজেপি নেতাদের মুখে বেশি বেশি করে বাঙালি মনীষীদের কথা শোনা গিয়েছে। একটা সময় পর্যন্ত শিবাজি, রানাপ্রতাপ, দীনদয়াল উপাধ্যায়দের কথা বলা নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের মুখে অনেক বেশি রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, রামমোহন। বিজেপি-র ইস্তেহারে স্থান পেয়েছেন কাদম্বরী গঙ্গোপাধ্যায়রা। বাঙালির শারদীয়ার সময়ে নবরাত্রি পালন করা অন্য রাজ্যের বিজেপি নেতারাও এখন দুর্গাপুজোয় মাতছেন। কলকাতার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর গর্বের টুইটে সামিল হয়েছেন মোদী-শাহরাও।
বাংলায় সংগঠন বিস্তার করতে হলে যে দলকে যে আরও বেশি ‘বাঙালির’ হয়ে উঠতে হবে, সে শিক্ষা বিজেপি গত বিধানসভা নির্বাচনে পেয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, তৃণমূল বাঙালিয়ানাকে অস্ত্র করে অনেকাংশে সফল হয়েছে। ইদানীং গেরুয়া শিবিরে কান পাতলে অনেকে নাকি শুনছেন, কর্মীদের ‘কার্যকর্তা’ বলে ডাকাও একটু একটু করে কমাতে চান বাংলার নব-নেতৃত্ব। একই সঙ্গে বাঙালির সংস্কৃতিকে দলের সংস্কৃতি বানানোর উদ্যোগও নেওয়া হতে পারে।
প্রসঙ্গত, সন্তোষ তাঁর বক্তব্য হিন্দি ও ইংরেজির মিশেলে দিলেও তিনি বলেন, স্থানীয় নেতারা যেন কিছু কিছু শব্দের বাংলা অনুবাদ করে নেন। যেমন বিজেপি কেমন দল, তা বোঝাতে তিনি ‘রাষ্ট্রবাদী’ শব্দটি বলেন। তার পরেই বলেন, সকলে যেন শব্দটির বাংলা করে নেন।
২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি কোন কোন কর্মসূচির উপরে জোর দেবে, তার বিচারেও গুরুত্ব পেয়েছে বাংলা। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির পাশাপাশি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মের ১২৫ বছর এবং ঋষি অরবিন্দের ১৫০তম জন্মজয়ন্তী নিয়ে সারা বছর রাজ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জিতেছিল ভারত। পাকিস্তানের থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পাক সেনার বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনার জয়কে উদযাপনের জন্য ‘বিজয় দিবস’ পালন করবে বিজেপি। ওই ঘটনার ৫০ বছর পূর্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলায় সংগঠন মজবুত করার নির্দেশও দিয়েছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
স্বাভাবিক। মাছ থেকে নেতাজি— বাংলা বিজেপি-কে ‘বাঙালি বিজেপি’ হতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy