লকেট চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) ও দেবশ্রী চৌধুরী। —ফাইল চিত্র
সাংগঠনিক রদবদলের মুখে রাজ্য বিজেপি। দলের সাধারণ সম্পাদক স্তরেও রদবদল হচ্ছে। রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মহিলা মোর্চা এবং যুব মোর্চার শীর্ষ পদেও। নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে মঙ্গলবার বৈঠকে বসছে রাজ্য বিজেপি। তবে পর্যালোচনা এবং রণকৌশল নির্ধারণের ফাঁকে এই আসন্ন রদবদল নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীকে সরতে হচ্ছে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে। মহিলা মোর্চার সভানেত্রী পদ থেকে লকেট চট্টোপাধ্যায়কেও অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে বলে খবর।
লোকসভা ভোটে রাজ্যে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। দুই থেকে সাংসদ সংখ্যা এক ধাক্কায় বেড়ে হয়েছে ১৮। কিন্তু এর পর? রণকৌশল কী, কোন পথে এবং কী লক্ষ্য নিয়ে এগোবে দল— সেই সব বিষয় পর্যালোচনা করতেই মঙ্গলবার বৈঠকে বসছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। সেখানেই দলের ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি ভোটে সাফল্যের জেরে সাংগঠনিক রদবদলও অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। আলোচ্য সূচিতে না থাকলেও আসন্ন এই রদবদল নিয়ে পর্যালোচনা হতে পারে বলেই দলের অন্দরমহল সূত্রে খবর।
বাম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম, কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি এবং তৃণমূলের কানাইয়ালাল আগরওয়াল— তিন হেভিওয়েটকে হারিয়ে রায়গঞ্জ কেন্দ্রে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী। আর প্রথম বার জিতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। আবার রাজ্য বিজেপির রাজ্য কমিটির ৫ সাধারণ সম্পাদকের অন্যতম দেবশ্রী। কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর পক্ষে আর সংগঠনের কাজে ততটা মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর। তবে তাঁর জায়গায় অন্য কাউকে আনা হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সাধারণ সম্পাদক পদে আর একটি রদবদল হতে পারে, তিনি সায়ন্তন বসু। শনিবারই ‘ব্যাটন ছাড়তে চাই’ বলে ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন সায়ন্তন। ওই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘এক সময় গাড়ি চলত না। এখন গাড়ি হু হু করে চলছে। যে কেউ এসে গাড়িতে এসে বসুক...’। নিজে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে ফিরতে চান সায়ন্তন। বিজেপি সূত্রে খবর, সায়ন্তন বসু ইতিমধ্যেই সঙ্ঘের এক সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। দলের অভ্যন্তরে শীর্ষ নেতৃত্বও সে খবর নিয়ে ওয়াকিবহাল। এই পরিস্থিতিতে সক্রিয় হয়েছে আরএসএস-ও। সঙ্ঘের অবস্থানও মোটামুটি ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, নতুনদের চাপে দলের পুরনো নেতারা যেন ব্রাত্য হয়ে না যান। অর্থাৎ সায়ন্তন নিজে এক রকম ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সঙ্ঘে তা নিয়ে চর্চা হয়েছে। দলেও হতে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু সংঘও সায়ন্তনকে বলেছিলো যে, দল ছেড়ে আরএসএস এ ফেরার ভাবনা এখন ভুলে যেতে। প্রয়োজনে সায়ন্তনের উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে সঙ্ঘ কথা বলবে বিজেপির সঙ্গে। বিজেপি নেতৃত্বও একই রকম ভাবছে বলে খবর। ফলে সায়ন্তনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেই দলের তরফেও জোর দেওয়া হবে বলে খবর।
আরও পড়ুন: ১৭ মন্ত্রীর এলাকায় হার, কেউ মিডিয়াকে এড়াচ্ছেন, কেউ বলছেন, গোলমাল ছিল ইভিএম-এ
আরও পড়ুন: ১৩ জন যাত্রী-সহ মাঝ আকাশে নিখোঁজ বায়ুসেনার বিমান
দলে আরও একটি রদবদন কার্যত অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। তিনি হুগলি কেন্দ্র থেকে জয়ী লকেট চট্টোপাধ্যায়। রাজ্য মহিলা মোর্চার সভাপতি তিনি। কিন্তু দেবশ্রী চৌধুরীর মতোই লকেটেরও অধিবেশন এবং সাংসদ সংক্রান্ত অন্যান্য কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। ফলে সংগঠনের কাজে বেশি সময় দিতে পারবেন না লকেট। তাই তাঁকেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। তার মধ্যে সোমবারই দলের মহিলা মোর্চার রাজ্য নেতৃত্বের যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে, সেখান থেকে নিজেই বেরিয়ে গিয়েছেন লকেট। ফলে জল্পনা আরও তীব্র হয়েছে।
কিন্তু লকেট সরলে তাঁর জায়গায় কে আসবেন? বিজেপি সূত্রে বেশ কয়েকটি নাম শোনা যাচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির এক উল্লেথযোগ্য মহিলা প্রার্থী। নির্বাচনের গোটা পর্বে এবং ভোটগ্রহণের দিনও শিরোনামে ছিলেন তিনি। এ ছাড়া কলকাতার এক অবাঙালি নেত্রীর নামও শোনা যাচ্ছে।
পরিবর্তন আসন্ন বিজেপির যুব মোর্চাতেও। বর্তমান যুব মোর্চা সভাপতি দেবজিৎ সরকারকে মূল দলে তুলে আনতে চাইছে বিজেপি। ফলে তাঁর পদ ফাঁকা হচ্ছে। তাঁর জায়গায় কাকে আনা হবে, তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা। বিজেপির অন্দরের খবর, অপেক্ষাকৃত কম বয়সী এক সাংসদকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। ভাসছে সদ্য উপনির্বাচনে জয়ী এক তরুণ বিধায়কের নামও। যদিও দলের অভ্যন্তরের খবর, ওই বিধায়ককে যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy