কৌস্তুভে নয়, চিন্তা ভোটে। — ফাইল চিত্র।
শনিবার সকালে গ্রেফতার হওয়া থেকে বিকেলে জামিন পেয়ে ন্যাড়া হওয়া পর্যন্ত ঘটনায় আচমকাই প্রচারের আলোয় কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা কৌস্তুভ বাগচী। অনেকেই মনে করছেন এর পরে বিরোধী রাজনীতির অন্যতম মুখ হয়ে উঠতে পারেন কৌস্তুভ। তবে তা নিয়ে ভাবিত নয় রাজ্য বিজেপি। দলের নেতারা একান্ত আলাপচারিতায় বলছেন, এটা ক্ষণিকের। তবে যে ঘটনা থেকে এত কিছু সেই সাগরদিঘির পরিণাম নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তিত গেরুয়া শিবির।
শনিবার কৌস্তুভকাণ্ডের পরে সব বিরোধী শিবিরই এক সুরে কথা বলে। অন্য দিকে, তৃণমূলে ভিন্ন সুর শোনা গিয়েছে। কৌস্তুভকে গ্রেফতার করে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। যদিও তৃণমূল সেটিকে কুণালের ‘ব্যক্তিগত’ মত বলে দাবি করেছে। রাজ্য বিজেপিও কৌস্তুভকে গ্রেফতারের ঘটনার নিন্দা করেছে। দলের রাজ্য সভাপতি একই সঙ্গে অবশ্য এর পিছনে কংগ্রেসকে এগিয়ে আনার পরিকল্পনা দেখতে পাচ্ছেন। শনিবারই তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে সেটা নিন্দনীয়। তবে আসলে বিজেপির ভয়েই বিরোধী ভোট ভাগ করতে রাজ্য রাজনীতিতে গুরুত্বহীন কংগ্রেসকে আলোচ্য করে তুলতে চাইছে তৃণমূল।’’
সুকান্ত স্বীকার না করলেও দলের অভ্যন্তরে অবশ্য অন্য আলোচনা। অনেকেই সাগরদিঘিতে তৃণমূলের হারের থেকে বেশি চিন্তিত কংগ্রেসের জয় নিয়ে। বিজেপির নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক খোয়ানোয়। প্রসঙ্গত, সাগরদিঘিতে জয়ের পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্যের জবাবেই কিছু মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই কৌস্তুভের আক্রমণ এবং গ্রেফতারের ঘটনা। তাই কৌস্তুভের ঘটনার আগের ঘটনা সাগরদিঘির উপনির্বাচন নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে গেরুয়া শিবিরে।
সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস ২২ হাজার ৯৮০ ভোটে জিতেছেন। কংগ্রেস ২০২১ সালে বামেদের সঙ্গে জোট গড়ে এই আসনে পেয়েছিল ৩৬,৩৪৪ ভোট। আর উপনির্বাচনে কংগ্রেসের প্রাপ্তি ৮৭,৬১১ ভোট। অর্থাৎ, ভোট বেড়েছে ৫১,২৬৭টি। এর মধ্যে তৃণমূলের ভোট যেমন ঢুকেছে তেমন ক্ষরণ হয়েছে বিজেপিরও। এ বার গেরুয়া শিবির পেয়েছে ২৫,৭৯৩টি ভোট। ২০২১ সালে তারা পেয়েছিল ৪৪,৯৮৩টি ভোট। তার মানে বিজেপির ভোট কমেছে ১৯,১৯০টি।
এটাই চিন্তা দলের কাছে। জয়ের পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, ‘‘কংগ্রেস প্রার্থী যেমন বামফ্রন্টের ভোট পেয়েছেন, তেমনই বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের বড় অংশের ভোটও পেয়েছেন। আর বিজেপির ভোটাররা যাঁরা এই ভোটে তৃণমূলের পরাজয় চেয়েছিলেন, তাঁরাও কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দিয়েছিলেন।’’ অধীরের দাবি যে সত্য তা বলছে পরিসংখ্যানও। তার মানে কি দ্বিতীয় শক্তি হিসাবে সাগরদিঘির মতো অনেক আসনেই বাম-কংগ্রেস জোটের উপরে ভরসা রাখতে পারেন মানুষ? সেটা হলে পঞ্চায়েত নির্বাচন তো বটেই, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও স্বপ্নপূরণ অধরা থেকে যেতে পারে।
যদিও বিজেপি শিবিরের আর এক অংশ বলছেন, সাগরদিঘির সঙ্গে রাজ্যের অন্য আসনের তুলনা করা ঠিক নয়। প্রথম কারণ, সাগরদিঘির জনবিন্যাস। দ্বিতীয়ত যে এলাকায় ভোট হয়েছে সেখানে বিজেপির সংগঠন অতীতেও খুব একটা শক্তিশালী ছিল না। তবে দলের ভোট প্রাপ্তির হার ২৪.০৮ থেকে ১৩.৯৪ শতাংশে নেমে যাওয়াটা অশনি সংকেত বলে মনে করছেন বিজেপির এই অংশের নেতারাও। তাঁরা বলছেন, ‘‘সাগরদিঘিতে মেরুকরণের ভোট হয়েছে। ভোটাররা ঠিকই করে নিয়েছিলেন তৃণমূলকে হারাতে হবে। বড় অংশের ভোটার কংগ্রেসকে সমর্থন না করলেও তৃণমূল বিরোধিতার জন্য ভোট দিয়েছেন। এর পরেও বিজেপি যে প্রায় ২৬ হাজার ভোট পেয়েছে সেটা খারাপ নয়। পোস্টাল ব্যালটেও বিজেপির ঝুলিতে এসেছে ২২টি ভোট।’’
এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে রাজ্য বিজেপিতে। সে ভাবে কোনও বৈঠক না হলেও রাজ্য নেতারা পরস্পরের মধ্যে কথা বলেছেন। সেখানে ঠিক হয়েছে, যে সব জায়গায় দলের শক্তি কম সেখানে সংগঠন মজবুত যেমন করতে হবে তেমনই বেশি জোর দিতে হবে শক্তি বেশির এলাকায়। সেখানকার মানুষ যেন তৃণমূলের বিরোধী হিসাবে বিজেপির উপরে বেশি ভরসা করেন। সেটা হলে ভোট ভাগাভাগি যেমন হবে না তেমনই বিজেপি জিততে পারে এটা আগাম বুঝে ভোটাররা একমুখী হবেন। তাতে বাম, কংগ্রেসের ভোটের পাশাপাশি তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ ভোটারদের সমর্থনও মিলতে পারে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সাগরদিঘির ফল বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে দোলের পরে বৈঠকেও বসতে পারেন রাজ্য নেতৃত্ব। দোলের পরেই দলের ‘বুথ সশক্তিকরণ অভিযান’ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। সেই কর্মসূচিতেও সাগরদিঘির ফলের প্রভাব পড়তে পারে। তবে বিজেপি শিবিরের স্পষ্ট দাবি, উত্তরবঙ্গে তো বটেই দক্ষিণবঙ্গেও এমন জায়গাই বেশি যেখানে মানুষের দ্বিতীয় পছন্দ হিসাবে বিজেপিই এগিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy