মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার শহরের একটি হোটেলে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে ভোটের সঙ্গে যুক্ত অফিসারদের কাজে সন্তুষ্ট না হলে, তাঁদের কেরিয়ারে পাকাপাকি দাগ পড়ে যেতে পারে। চাকরির ক্ষেত্রে যা গুরুত্বপূর্ণ। সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার রাজ্যের জেলাশাসক ও পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এমনই কড়া বার্তা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ।
প্রশাসনের একাংশের দাবি, বৈঠকে জেলাশাসকদের বলা হয়েছে, পুলিশের দেওয়া তথ্য ও খবরকে যাচাই করতে হবে সমান্তরাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। সূত্রের দাবি, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর জোগাড়ের জন্য কমিশনও নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবে বলে বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে শুরু হয়ে জেলা-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক চলার কথা ছিল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। কিন্তু শেষমেশ তা চলেছে গভীর রাত পর্যন্ত।
সব মিলিয়ে, এ দিন নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের বক্তব্যের নির্যাস, ভোট ঘোষণার আগে থেকেই রাজ্যের সর্বত্র নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ভোটারেরা নির্ভয়ে নিজের ভোট দিতে পারেন। এই বার্তা রাজ্য প্রশাসনের অফিসারদের উদ্দেশে।
বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতায় এসে পৌঁছেছিলেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোড়া, দুই নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র ও রাজীব কুমার এবং উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন। এ দিন মধ্য কলকাতার এক হোটেলে রাজ্যের পুলিশ কর্তা, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তাঁরা।
সকালে তাঁরা প্রথম বৈঠকটি সারেন রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসার তথা এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জ্ঞানবন্ত সিংহের সঙ্গে। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেই কমিশন কর্তাদের বার্তা, মানুষের মনের ‘ভয়’ দূর করতে রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একাধিক অভিযোগ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পৌঁছেছে কমিশন কর্তাদের কাছে। সেই সূত্রেই পুলিশের ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকার জন্য সওয়াল করেছে ফুল বেঞ্চ। নির্বাচনের মুখে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো বার্তার উপরেও পুলিশি নজরদারি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ হতে পারে, এমন কোনও পোস্ট করা হচ্ছে কি না, নির্দিষ্ট করে তা-ও জানতে চেয়েছে বেঞ্চ।
সূত্রের দাবি, গত চার দিনে প্রায় ১২ হাজার জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার পরেও কমবেশি ৪১ হাজার পরোয়ানা কার্যকর হওয়া বাকি। এ মাসেই বাকি কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশকর্তা। কেন বকেয়া থাকল, সে ব্যাপারে প্রশাসনের যুক্তি, কোভিড, আমপান সবই সামলাতে হয়েছে পুলিশকে। কোভিডে বহু পুলিশকর্মী-অফিসার আক্রান্ত হয়েছেন। তার উপরে গঙ্গাসাগর মেলাও সামলাতে হয়েছে তাঁদের। সেই কারণে পুরো কাজ করা যায়নি। তবে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে যে এলাকাগুলিতে গোলমাল হয়েছিল, তার তথ্য কমিশনকে দিয়েছে প্রশাসন। অতীতের ভোটগুলিতে গোলমাল পাকিয়েছিল, এমন প্রায় ১৯০০ দুষ্কৃতীর তথ্যও দেওয়া হয়েছে। জেল থেকে কারা ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে, সম্ভাব্য সেই তালিকাও প্রস্তুত।
প্রশাসনিক সূত্রের ধারণা, আসন্ন ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা গত লোকসভার ভোটের তুলনায় আরও বাড়তে পারে। পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী পরিচালনায় পৃথক পরিকল্পনা করতে পারে কমিশন। বস্তুত, রাজ্য পুলিশের কত জনকে ভোটের কাজে ব্যবহার করা যাবে, সেই তথ্যও প্রশাসনের থেকে চেয়েছিল কমিশন। সূত্রের দাবি, রাজ্য জানিয়েছে, ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার ১২৩৭ জন, প্রায় ১৬,০০০ সাব-ইন্সপেক্টর, ৬৪,৫০০ কনস্টেবল, প্রায় ৬৭০০ এনভিএফ, এক লক্ষের মতো হোমগার্ডকে ভোটে ব্যবহার
করা যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy