লস্কর-যোগে গ্রেফতার বাদুড়িয়ার তরুণী তানিয়া পরভিন।
বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি তো বটেই, সেই সঙ্গে আরবি, উর্দু, কাশ্মীরি ভাষাতেও সমান দক্ষ তিনি। সদ্য স্নাতক। এবং প্রেমের ফাঁদ পাততে সবিশেষ দড়। পাক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে এ-হেন এক তরুণীকে বাদুড়িয়া থেকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম তানিয়া পরভিন।
বাদুড়িয়ার মলয়পুর গ্রামে তানিয়ার বাড়ি। বুধবার বাড়ি থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর কাছ থেকে দু’টি মোবাইল, কিছু নথিপত্র আটক করা হয়েছে। তিনি যে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যা, ওই সব নথিতে তার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। জেরায় তানিয়া তাঁর জঙ্গি সংস্রবের কথা কবুল করেছেন বলে তদন্তকারীদের দাবি।
গোয়েন্দাদের দাবি, লস্করের হয়ে এ রাজ্যে মুসলিম যুবকদের জঙ্গিপনায় উৎসাহী করে তুলতেন এবং তাঁদের জঙ্গি সংগঠনের সদস্য করে নিতেন তানিয়া। সেই সঙ্গে ফেসবুকে ভুয়ো প্রোফাইল খুলে সেনা ও গোয়েন্দা অফিসারদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে দেশের সুরক্ষিত তথ্য হাতানোর চেষ্টা করতেন তিনি। পাকিস্তান, কাশ্মীর ও সিরিয়ার বিভিন্ন জঙ্গির সঙ্গে যোগ আছে তাঁর। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ছাড়াও তিনি ‘ডিপ ওয়েব’-এর (ইন্টারনেটের গোপন দুনিয়া, যে-স্তরে স্বাভাবিক প্রযুক্তিতে বার্তা চালাচালি করা যায় না) মাধ্যমে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘তানিয়া স্বীকার করেছেন, পাকিস্তান বা সিরিয়ায় গিয়ে জেহাদে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে ছিল তাঁর।’’
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গিপনা ছড়ানোর কথা জানা গিয়েছিল আগেই। সেই সূত্র ধরেই শুরু হয় নজরদারি। সাইবার মাধ্যমেও নজরদারি শুরু করেছিলেন গোয়েন্দারা। তখনই তানিয়ার কথা জানা যায়। মঙ্গলবার গভীর রাতে এসটিএফের ইনস্পেক্টর শঙ্কর চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশ্বনাথ দেব, সমাদৃতা সরকার, পূজা বিশ্বাসের মতো বাছাই করা পুলিশকর্মীদের নিয়ে একটি দল বাদুড়িয়া যায়। বাদুড়িয়া থানার বাহিনী নিয়ে বুধবার ভোরে তানিয়ার বাড়ি ঘিরে ফেলেন গোয়েন্দারা। তানিয়া তখন নিজের ঘরেই ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে নিজের দোষ এড়ানোর চেষ্টা করলেও দীর্ঘ ক্ষণের জেরায় তিনি অপরাধ স্বীকার করেন এবং জঙ্গি সংক্রান্ত তথ্য দেন গোয়েন্দাদের। পুলিশ জানায়, তানিয়া সোশ্যাল মিডিয়া ও হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন মৌলবাদী এবং জঙ্গি মনোভাবাপন্ন গ্রুপের সদস্যা। তার মধ্যে কয়েকটির ‘অ্যাডমিন’ বা মূল পরিচালকও তিনি। তানিয়ার দু’টি মোবাইল থেকে সেই সব তথ্য উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, এ রাজ্যে লস্করের শিকড় কত দূর ছড়িয়েছে তা জানতে তানিয়াকে আরও জেরা করা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার তানিয়াকে বসিরহাটে এসিজেএমের আদালতে তোলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) এবং রাষ্ট্রদ্রোহ-সহ বিভিন্ন আইনে মামলা করা হয়েছে। সরকারি আইনজীবী অরুণ পাল বলেন, ‘‘তানিয়াকে ১৪ দিনের জন্য তাদের হেফাজতে দেওয়ার জন্য আবেদন জানায় এসটিএফ। বিচারক তা মঞ্জুর করেন।’’ তানিয়াকে জেরা করতে বসিরহাট পুলিশ-জেলার সুপার কঙ্কর প্রসাদ বাড়ুইয়ের দফতরে যান এসটিএফের আইজি অজয় নন্দ, বারাসত পুলিশের ডিআইজি সি সুধাকর-সহ বিভিন্ন পুলিশকর্তা এবং কেন্দ্র ও রাজ্যের গোয়েন্দারা। নন্দ বলেন, ‘‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়া গিয়েছে। তদন্ত চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy