রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। —ফাইল চিত্র।
বার বার আসেন ওঁরা ক’জন। চলে গিয়েও ফিরে আসেন। হয়তো অন্য অবতারে। তবে স্বমহিমায়। রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনে এটাই চলছে বলে কলরব সংশ্লিষ্ট নানা মহলে।
অভিযোগ, অদক্ষ বা নিষ্ক্রিয় কোনও সদস্যকেও তাঁর মেয়াদ ফুরোলে উপদেষ্টা (অ্যাডভাইজ়ার) বা পরামর্শদাতা (কনসালট্যান্ট) করে পুনর্বাসন দিচ্ছে কমিশন। প্রশাসনের একটা অংশেই বলাবলি হচ্ছে, কমিশনে এক বার ঢুকলে বেরোনোর রীতি নেই।
কমিশনের চেয়ারপার্সন, উপদেষ্টারা মাসে ৫০ হাজার টাকা, গাড়ি, ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ইত্যাদির সুবিধা পান। সদস্যেরা মাসে ৪৫ হাজার টাকা, সঙ্গে রাহাখরচ, ফোনের বিল পান। পরামর্শদাতারাও মাসে ৩০ হাজার টাকা, নানা সুবিধা পান। তাঁদের টাকার অঙ্কও বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। নানা মহলের অভিযোগ, কমিশনের দু’-তিন জন সদস্য, উপদেষ্টা বাদ দিলে বাকিরা আদতে নিষ্ক্রিয়। যাঁরা আছেন, বেশির ভাগই রাজনৈতিক সংযোগের জেরে রয়েছেন। কমিশনের কয়েক জন সদস্য মেয়াদকালে কার্যত একটি বৈঠকেও থাকেননি।
শিশু সুরক্ষা কমিশন সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী, কেউ তিন বছর করে দু’টি পর্যায় এবং ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত সদস্য থাকতে পারেন। কিন্তু উপদেষ্টা, পরামর্শদাতার পদগুলি রাজ্য সরকারের বিবেচনাধীন। বর্তমান চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় দেড় বছর সদস্য থাকার পরে তাঁর ৬০ বছর বয়স হয়ে যায়। কিন্তু এক জন দক্ষ এবং সক্রিয় সদস্য হিসেবে কমিশনের তৎকালীন চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর আর্জিতে তাঁকে বিশেষ পরামর্শদাতা করে কমিশনের সঙ্গে যুক্ত রাখা হয় বলে জানা যায়। কমিশনের চেয়ারপার্সনের বয়সের সীমা ৬৫ বছর। এর পরে অনন্যাকে নবান্নের শীর্ষ মহল উপদেষ্টা পদে বসায়। পরে সুদেষ্ণাকে কমিশনের চেয়ারপার্সন করা হয়। অভিযোগ, এর পরে আরও অনেককে সবেতন উপদেষ্টা, পরামর্শদাতা পদে বসানো কমিশনের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৬০ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরে পরামর্শদাতা করা হয়েছিল গায়ক সৌমিত্র রায়কে। বছর-বছর তাঁর পদটির চুক্তি বাড়ানো হচ্ছে। সাংসদ শতাব্দী রায়ের স্বামী মৃগাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনে ঠিক কী করেন, কারও কাছে সদুত্তর নেই। তাঁকেও সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদটি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি কবি তথা রাজনৈতিক কর্মী প্রসূন ভৌমিকও ছ’বছর কমিশনের সদস্য থাকার পরে উপদেষ্টা পদে ফিরে এসেছেন। প্রসূন বলেন, ‘‘কাজ করেছি বলেই সম্ভবত আমায় ফের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আর রাজ্যের সরকার বা শাসক দলের অনুগত হওয়াটা তো অন্যায় নয়।” রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সৌমিত্র দীর্ঘদিন তৃণমূল নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ। তিনি বলেন, “কেন আমায় রাখা হয়েছে, তা চেয়ারপার্সন বলবেন!” আর মৃগাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা দেখেননি। নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের সচিব সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ বলেন, ‘‘কমিশন স্বশাসিত। এটা ওদের বিষয়।’’ কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় এবং উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী মন্তব্য করতে চাননি।
কমিশনের নবাগত সদস্যদের মধ্যে প্রাক্তন সাংসদ-নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ, ছত্রধর মাহাতোর স্ত্রী মিনতি মাহাতো, মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের স্ত্রী অনিন্দিতা দাস (যিনি একটি স্কুলের কর্ণধার), প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বর্তমান তৃণমূল নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী কর্পোরেট কর্মী দূর্বা সেন বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন। অর্পিতা রাজনৈতিক কর্মী ছাড়াও শিশু কিশোর আকাদেমির দায়িত্বে রয়েছেন। মিনতি, অনিন্দিতা, দূর্বারা বলছেন, চেয়ারপার্সনের নির্দেশ মতোই তাঁরা কাজ করেন। পুরনো সদস্যদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলর যশোবন্তী শ্রীমাণী পারিবারিক ভাবে প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আত্মীয়। তিনি কমিশনে ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কিছু কাজ করেছেন। যশোবন্তী কিছু বলতে চাননি। কারও কারও অভিযোগ, শিশু সুরক্ষা কমিশন এখন শাসক দলের অন্দরে বা ঘনিষ্ঠ বলয়ে এক ধরনের উদ্ভট বাস্তুতন্ত্র হয়ে উঠেছে। এই নিয়ে চর্চায় কমিশনের অনেক ভাল কাজ চাপা পড়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে উপদেষ্টার সংখ্যা সদস্যদের ছাড়িয়েও যেতে পারে। এ বছরের শেষে বর্তমান চেয়ারপার্সনের মেয়াদ ফুরোলে কে তাঁর জায়গায় বসবেন, তা এখনও অনিশ্চিত।
নবান্নের এক আধিকারিক অবশ্য বলছেন, “অতীতে বাম জমানায় বা এখন অন্য রাজ্যেও শাসক দলের ঘনিষ্ঠেরাই বিভিন্ন কমিশনে মনোনীত হয়ে থাকেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy