Advertisement
০৯ জানুয়ারি ২০২৫
West Bengal BJP

কোটিরও বেশি ভোটারের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ! লোকসভার ‘ভুল’ শুধরে দল ঢেলে সাজছেন বনসল

বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, দলকে বনসল বার্তা দিয়েছেন, নেতৃত্বকে সাংগঠনিক পরিস্থিতির সঠিক ছবিটা দেওয়া হোক, তার পরে নির্বাচন কী ভাবে করতে হয় তা তিনি বুঝে নেবেন।

তিন রাজ্যে জিতে এসেছেন যুদ্ধ। বাংলাতেও কি সফল হবেন বনসল? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

তিন রাজ্যে জিতে এসেছেন যুদ্ধ। বাংলাতেও কি সফল হবেন বনসল? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:২০
Share: Save:

দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ভোটে সাফল্যের জন্য তিনি প্রশংসিত বছর সাতেক আগেই। সম্প্রতি ফসল ফলিয়েছেন তেলঙ্গানা এবং ওড়িশাতেও। একই ‘ফর্মুলা’ প্রয়োগ করতে চান পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনেও। তিনি সুনীল বনসল। পশ্চিবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক।

২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের জন্য এখন থেকে ‘কৌশল’ তৈরি করতে শুরু করেছেন বনসল। যদিও তাঁকে প্রথমে সামলাতে হবে গত লোকসভা ভোটের ‘ক্ষত’। লোকসভা নির্বাচনেও এ রাজ্যে ছিলেন বনসল। সে ভোটে বিজেপির আসন ১৮ থেকে নেমে ১২ হয়েছে। যার কারণ হিসেবে বিজেপি সূত্রের দাবি, তখন বাংলায় দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ‘ভুল তথ্য’ ছিল বনসলের কাছে। ২০২৬-এর প্রস্তুতি শুরু করে সেই ‘ভুল’ই সর্বাগ্রে সংশোধন করছেন বনসল।

ভুল শুধরে বনসলের সাফল্য পাওয়ার কোনও অতীত-দৃষ্টান্ত আছে? রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষনেতার কথায়, ‘‘২০১৯-এর পর থেকে তেলঙ্গানায় বিজেপির প্রবল উত্থান হয়। কিন্তু ২০২৩-এর বিধানসভা ভোটে দল খুব খারাপ ফল করে। বনসলজির তত্ত্বাবধানেই সেই ফলাফল। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। এক বছরের মধ্যে সংগঠন ঢেলে সাজান। ফলে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে তেলঙ্গানায় শাসক কংগ্রেসও ৮, বিরোধী বিজেপিও ৮।’’

বাংলার লোকসভা ভোটে কী ‘ভুল’ হয়েছিল? বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, পর্যবেক্ষক বনসল ভুল করেছিলেন দলীয় দফতরে জমা থাকা কাগুজে তথ্যে ভরসা রেখে। রাজ্যে দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি ঠিক কী, কতগুলি বুথে বিজেপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে, কতগুলি বুথে বিজেপি এজেন্ট বসাতে পারবে— এ সব বিষয়ে ‘স্বচ্ছ’ তথ্য ছিল না। খাতায়-কলমে যে ছবি ধরে রাখা ছিল, সংগঠনের আসল চেহারার সঙ্গে তার বিস্তর ফারাক ছিল। এ বার তাই সাংগঠনিক ছবিটাই আগে স্পষ্ট ভাবে ধরতে সক্রিয় হয়েছেন বনসল। যেমন করেছিলেন তেলঙ্গানায়।

গত ৪ জানুয়ারি বনসলের বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠকের আগের দিন পর্যন্ত রাজ্যে ৪২ লক্ষ প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ হয়েছিল বলে দাবি বিজেপির একটি সূত্রের। ৬ জানুয়ারি থেকে নিজেদের সমাজমাধ্যম মিডিয়া পোস্টে বিজেপি দাবি করতে শুরু করেছে, সদস্যসংখ্যা ‘আধা কোটি’র পথে। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, এই ‘আধা কোটি’ প্রাথমিক সদস্যের মাধ্যমে আসলে এক থেকে দেড় কোটি ভোটারের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগের রাস্তা তৈরি করে ফেলা হয়েছে। এই পুরো প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়েছে বনসলের তত্ত্বাবধানে।

উত্তরপ্রদেশে ২০১৭ এবং ২০২২ সালে পর পর দুটি বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশের ইতিহাসে গত বহু দশকে কোনও একটি দলের এমন ধারাবাহিক সাফল্যের নজির নেই। দু’টি নির্বাচনেই সে রাজ্যে বিজেপির সংগঠন সম্পাদক ছিলেন বনসল। বিজেপি সূত্রের দাবি, সেখানে যে ‘কৌশল’ সফল হয়েছিল, বাংলাতেও বনসল সেই ‘খাঁটি সদস্যতা’ ফর্মুলা প্রয়োগ করতে চাইছেন।

বনসল তিনটি ধাপে এগোনোর কথা বলেছেন—

১. বুথ স্তর থেকেই সাংগঠনিক নির্বাচন শুরু করা। অর্থাৎ বুথ কমিটিও গঠন করতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। তার পর ধাপে ধাপে মণ্ডল এবং জেলা স্তরের নির্বাচন।

২. পূর্ণাঙ্গ বুথ কমিটি সম্পর্কে ‘খাঁটি’ হিসেব। বিজেপির বুথ কমিটি হয় ১২ জনের। ৮০ হাজার বুথে এই ১২ জনের কমিটি গঠন সম্ভব না হলে ‘ভুয়ো’ হিসেব তৈরি করে খাতায়-কলমে ৮০ হাজার বুথ কমিটি দেখানোর দরকার নেই। ৫০ হাজার (অথবা তার চেয়েও কম) বুথে কমিটি বানানো গেলে সেই হিসেবই জমা পড়ুক। দলকে বনসল বার্তা দিয়েছেন যে, নেতৃত্বকে সাংগঠনিক পরিস্থিতির সঠিক ছবিটা দেওয়া হোক। তার পরে নির্বাচন কী ভাবে করতে হয়, তা তিনি বুঝে নেবেন।

৩. ‘আধা কোটি’ সদস্যের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগে থাকা। তাঁদের মাধ্যমে এক থেকে দেড় কোটি ভোটারের কাছে দলের নানা কথা নিয়মিত পৌঁছে দেওয়া।

বিজেপি এ রাজ্যে একাধিক নির্বাচনে ভোট পেয়েছে ২ কোটি ৩০ লক্ষের আশপাশে। কিন্তু সেই ভোটের কত অংশের উপর সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তা স্পষ্ট নয়। এ বার যে পদ্ধতিতে সদস্য সংগ্রহ হয়েছে, তাতে দলের হাতে সব প্রাথমিক সদস্যের বিষয়ে জরুরি তথ্য রয়েছে বলেই বিজেপির দাবি। আরও দাবি, তাঁদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের রাস্তাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। অতএব দলের যে কোনও বক্তব্য ওই প্রাথমিক সদস্যদের কাছে পাঠালেই তা আরও অনেকের কাছে ছড়াবে। সদস্যদের পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধবকে ধরলে কম করে এক থেকে দেড় কোটি মানুষের কাছে দলের বক্তব্য নিয়মিত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব বলেই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন।

সাংগঠনিক সক্ষমতা সম্পর্কে এতটা স্পষ্ট ধারণা যে রাজ্য বিজেপির ছিল না, সে কথা মানছেন বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তাঁর কথায়, ‘‘আমিও এত দিন এই কথাই বলে এসেছি। দলে ৩০ জন কর্মী থাক। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কে আমাদের কাছে প্রামাণ্য তথ্য থাক। এখন বনসলজিও সে কথাই বলছেন।’’ সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘আগে সদস্যপদের পদ্ধতিটা গোটা দেশেই একটু অন্য রকম ছিল। তাই এত তথ্য আমাদের কাছে থাকত না। এ বার এ রাজ্যে ৫০ লক্ষের মতো সদস্য সম্পর্কে স্পষ্ট এবং প্রামাণ্য তথ্য আমাদের কাছে আছে। এটা সংগঠনকে অনেক দূর এগিয়ে দেবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal BJP Sunil Bansal 2026 West Bengal Assembly Poll Membership Drive
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy