বিজেপি-র অনেকে বলছেন, ডোমজুড়ে পরাজয়ের পরে দলের সঙ্গে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সে ভাবে যোগাযোগই নেই। —ফাইল চিত্র।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এখন কোথায়? প্রশ্ন বিজেপি-র অন্দরে। দলের অনেকে বলছেন, ডোমজুড়ে পরাজয়ের পরে দলের সঙ্গে রাজীবের সে ভাবে যোগাযোগই নেই। বস্তুত, বিজেপি-র শীর্ষনেতাদের একাংশের অনুমান, নতুন দলের সঙ্গে দূরত্ব রচনা করে তিনি পুরনো দল তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা করছেন। সে দাবি তৃণমূল শিবিরও করছে। তাদের বক্তব্য, প্রথমে রাজীব বিভিন্ন জনের মাধ্যমে যোগাযোগ করছিলেন। এখন নিজেই যোগাযোগ শুরু করেছেন।
তৃণমূলের একাংশের দাবি, রাজীবের মতোই যোগাযোগ শুরু করেছেন ভোটের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাওয়া এবং পর্যায়ক্রমে ভোটে পরাজিত প্রবীর ঘোষালও। তবে প্রবীর বলছেন, ‘‘বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু আমি এখন রাজনীতি করছি না। সমাজসেবা করব। ভবিষ্যৎ কী হবে জানি না।’’ ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাজীব-প্রবীর সম্পর্ক ভাল। প্রবীর জানিয়েছেন, রাজীবের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে।
তৃণমূলের এক নেতার দাবি, প্রথমে কয়েকজন সহযোগী ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এবং এখন নিজে বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলছেন রাজীব। কিন্তু তৃণমূলের কোন কোন নেতার সঙ্গে রাজীব যোগাযোগ রাখছেন সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাতে চাননি। অন্য দিকে, বিজেপি বলছে, রাজীব যে রাজনৈতিক জল মাপছেন সেটা তাঁর টুইটার হ্যান্ডল দেখলে স্পষ্ট হবে। ভোটের ফল ঘোষণার পরে রাজ্যে এত রাজনৈতিক ঘটনা পরম্পরা চললেও তিনি ‘অক্ষয় তৃতীয়া’, ‘ইদ’, ‘মাতৃ দিবস’ ইত্যাদির শুভেচ্ছা জানিয়েই ক্ষান্ত থেকেছেন।
রাজীবকে বহুবার যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠানো হলেও জবাব আসেনি। ফলে রাজীব নিজে কী ভাবছেন, তা জানা যায়নি।
তবে এখনও পর্যন্ত রাজীবকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বুধবার বলেন, ‘‘কারও জন্য আলাদা করে কিছু নয়। ভোটের আগে যাঁরা অন্য দলে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা ফিরতে চাইলেই ফিরিয়ে নেওয়া হবে, এমন কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত দলে হয়নি। যাঁদের সেই সময় দমবন্ধ লাগছিল, তাঁদের যদি এখন আবার দমবন্ধ লাগে, তা হলে তো তৃণমূল বিজেপি দফতরে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠাতে পারবে না!’’
ডোমজুড় থেকে ২০১১ এবং ২০১৬ সালের ভোটে পরপর দু’বার বিধায়ক হন রাজীব। শেষ বার জয়ের ব্যবধান ছিল ১ লাখেরও বেশি। কিন্তু এ বার হেরেছেন ৪২ হাজারের সামান্য বেশি ভোটে। চার্টার্ড বিমানে করে দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের বাড়িতে বিজেপি-তে যোগদানের পর থেকে গোটা নির্বাচন পর্বে গেরুয়া শিবিরের প্রথম সারির নেতা হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছেন রাজীব। হাওড়া জেলা তো বটেই, অন্যান্য জায়গার প্রার্থিতালিকা চূড়ান্ত করার বৈঠকেও প্রাধান্য পায় তাঁর বক্তব্য। কিন্তু শুধু ডোমজুড়েই নয়, রাজীবের ভরসায় থাকা হাওড়া জেলায় বিজেপি একটি আসনেও জয় পায়নি। ১৬টিতেই জয় পেয়েছে তৃণমূল।
২ মে ভোটের ফল ঘোষণা হয়েছিল। এর পরে ২ জুন পর্যন্ত এক মাসে রাজীব নাকি বিজেপি-র কোনও বৈঠকেই হাজির হননি। হেস্টিংসে বিজেপি অফিসে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ঘর তো দূরের কথা, কোনও ভার্চুয়াল বৈঠকেও তাঁর উপস্থিতি ছিল না বলেই দাবি করছেন পদ্মনেতারা। ভোট-পরবর্তী গোলমাল নিয়ে বিজেপি সরব হলেও ডোমজুড়ে যে সব কর্মীরা আক্রান্ত বলে দাবি করা হয়েছে, তাঁদের পাশেও দেখা যায়নি তাঁকে। অন্তত প্রকাশ্যে। ইয়াস ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বিজেপি-র পক্ষ থেকে সব বিধায়ক ও প্রার্থীকে নিজের নিজের এলাকায় যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ডোমজুড়ের বিজেপি কর্মীদের দাবি, রাজীবকে সেখানেও দেখা যায়নি।
রাজীব যে তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা করছেন সেটা রাজ্য বিজেপি নেতারা আড়ালে স্বীকার করলেও এখনই এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন তৃণমূলের ফিরতে চান বলে প্রকাশ্যে বলায় অস্বস্তিতে রয়েছে বিজেপি। সেই কারণে ‘চেনামুখ’ রাজীবকে নিয়ে আপাতত চুপ থাকার সিদ্ধান্ত। এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি হাতে করে বিধানসভা ছাড়ার মধ্য দিয়েই রাজীব অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা সে সব দেখে, বুঝেও কিছু বলেননি। রাজীবকে সত্যি সত্যিই মাথায় করে রাখা হয়েছিল। এখন বিপদের সময় তাঁর টিকিটি দেখা যাচ্ছে না।’’
বিজেপি-র কেউ সরাসরি রাজীবের নামে কিছু না বললেও তাঁরই সঙ্গে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া বৈশালী ডালমিয়া এবং রুদ্রনীল ঘোষ যে রাজীবের উপর ক্ষুব্ধ, তা তাঁরা প্রকাশ্যেই বলেছেন। বৈশালী বলেন, ‘‘আমার ছেলের উপর বেহালায় হামলার পরে দিলীপদা (ঘোষ) থেকে কৈলাস’জি (বিজয়বর্গীয়) সকলে ফোনে খোঁজ নিয়েছেন। শুভেন্দুদা (অধিকারী) বাড়িতেও এসেছিলেন। কিন্তু রাজীবদা ফোনে খোঁজটুকুও নেননি।’’ একই রকম অনুযোগ রুদ্রনীলের। ক’দিন আগেই ভবানীপুরে তিনি তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। তাঁরও খোঁজ নেননি রাজীব। রুদ্রনীল বলেন, ‘‘আমি রাজীবদাকেও ফোন করেছিলাম। কিন্তু দলের সকলের সঙ্গে কথা হলেও রাজীবদা এখনও যোগাযোগ করেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy