Advertisement
০৯ নভেম্বর ২০২৪

‘অগ্নিকন্যা’র সম্মান, আপ্লুত আমিনা

রাজ্যের ১২ জন মহিলার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ‘অগ্নিকন্যা সম্মাননা’। তাঁদেরই একজন বিশ্বভারতীর এই ছাত্রী।

আমিনা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

আমিনা খাতুন। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০৮:১০
Share: Save:

আমিনা খাতুন, বিশ্বভারতীর শারীরশিক্ষা বিভাগের প্রথম বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়া। মাত্র ন’মাস বয়সে আগুনে পুড়ে গিয়েছিল তাঁর ডান হাত। দুর্ঘটনার পর থেকেই প্রায় অকেজো সেই হাতে একটা আঙুলও নেই। বাম হাত দিয়েই যাবতীয় কাজ করেন। ছোটতেই বাবা ছেড়ে চলে যাওয়ায় বড় হয়েছেন হোমে। শুধু আত্মবিশ্বাস আর মনের জোরে ভর করে ইতিমধ্যেই অলরাউন্ডার হয়েছেন তিনি। ৯ মার্চ রাজ্য সরকারের নারী, শিশুবিকাশ ও সমাজকল্যাণ দফতরের পক্ষ থেকে রাজ্যের ১২ জন মহিলার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ‘অগ্নিকন্যা সম্মাননা’। তাঁদেরই একজন বিশ্বভারতীর এই ছাত্রী। রাষ্ট্রমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) শশী পাঁজার হাত থেকে এই সম্মাননা পেয়ে আপ্লুত আমিনাও।

৯ মার্চ কলকাতার রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে হওয়া এই অনুষ্ঠানে প্রশংসাপত্র, স্মারক, ১৫ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। ছিলেন দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা। বীরভূম জেলা থেকে এই সম্মাননা পান আমিনা খাতুন। এই সম্মান লাভে খুশি বিনয়ভবনের অধ্যক্ষ তথা শারীরশিক্ষা বিভাগের প্রধান সাগরিকা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বিভাগের অন্য অধ্যাপক, কর্মী এবং পড়ুয়ারা। সাগরিকাদেবী বলেন, ‘‘আমিনার সত্যিই প্রতিভা আছে। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ক্যাম্পেও ও খুব ভাল ভাবে অংশগ্রহণ করেছে।’’ আমিনা ২০১৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে যখন শারীরশিক্ষা বিভাগে ভর্তি হন, তখন ওই বিভাগের প্রধান ছিলেন সমীরণ মণ্ডল। তিনি জানালেন, আমিনা নিজের অধিকারেই ভর্তি হয়েছে। আইন অনুযায়ী, সব বিভাগের ক্ষেত্রেই মোট আসনের পাঁচ শতাংশ বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য সংরক্ষিত। তবে আমিনা লড়াই করে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে। সুযোগ পেলে যে সবাই কিছু করে দেখাতে পারে, সেটাই আরও একবার প্রমাণিত হল বলে মনে করছে তাঁর বিভাগ।

একটা অকেজো হাত নিয়েই এনসিসির ব্যান্ড টিমে নির্বাচিত হয়েছেন আমিনা। এনসিসিতে সেরা হয়েছেন, ট্রেনিং ক্যাম্পে ‘অল রাউন্ডার’ খেতাব জিতে ইন্টার গ্ৰুপ প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। খুব ছোটবেলায় তিনি যে হোমে এসেছিলেন, সেই হোমে থেকেই পড়াশোনা করছেন। এলমহার্স্ট ইনস্টিটিউটের ‘ক্ষণিকা’ হোমে থেকে শারীরশিক্ষা বিভাগে পড়া চালিয়ে যাচ্ছেন এই অগ্নিকন্যা। ইনস্টিটিউটের পক্ষে প্রিয়ম মুখোপাধ্যায় এবং ঋতপা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্পষ্ট মনে আছে, ১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর আমিনার মা মণিজা খাতুন বেগম ওকে নিয়ে হোমে এসেছিলেন। তার পর থেকে ওর যত্ন নেওয়া শুরু করি। এখন সত্যিই গর্ব হয় আমিনার জন্য।’’ ঋতপাদেবী আরও জানান, শুধু পড়াশোনা কিংবা খেলা বলে নয়। নাচ, গান, আঁকা, কবিতা লেখা, সেলাই করা সবেতেই সমান পারদর্শী আমিনা। তিনি সত্যিই এই সম্মানের যোগ্য বলেই মনে করছে এলমহার্স্ট ইনস্টিটিউটও।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আমিনা জানালেন, সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় জন্মালেও নয় মাস বয়সে লম্ফ উল্টে কেরোসিন তেল মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ার ফলে ডান হাতে আগুন লেগে গিয়েছিল। দেহের ডান সম্পূর্ণ অংশ পুড়ে যায়। অনেক চেষ্টার পরে প্রাণে বেঁচে যান ঠিকই। কিন্তু খোয়া যায় ডান হাতের সব ক’টা আঙুল। অকেজো হয়ে যায় সেই হাত। বাম হাতেও আগুনের আঁচ লেগেছিল। কিন্তু ক্ষতি কম হয়। ওই ঘটনার পরই তাঁর বাবা তাঁদের ছেড়ে চলে যান। আর ফেরেননি। এর পর থেকেই হোমে মানুষ হয়েছেন।

আমিনা বললেন, ‘‘এ রকম একটা সম্মান পাব আশা করিনি। অগ্নিকন্যা নামটা খুব ভাল লেগেছে। ছোটবেলায় আগুন লেগেই ডান হাতটা নষ্ট হয়। এখন আমি ‘অগ্নিকন্যা’। সব বিষয়ে আরও উৎসাহ পাচ্ছি। আরও কিছু করে দেখানোর ইচ্ছে তৈরি হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Visva-Bharati University Agnikanya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE