ফাইল চিত্র।
প্রজাতন্ত্র দিবসে পতাকা উত্তোলনের সময় বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বক্তৃতার ভিডিয়ো ছড়ানোর ‘অপরাধে’ সোমবার রাতেই হস্টেল থেকে এক ছাত্রকে বহিষ্কার করলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কারের নির্দেশে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই ছাত্রের তোলা ভিডিয়োয় উপাচার্যের মর্যাদাহানি করা হয়েছে। প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়া বলছেন, ‘‘উপাচার্য এসেছিলেন, সেই স্মৃতিটুকু ধরে রাখতেই ভিডিয়ো করেছিলাম। আমার বাবা ভাগচাষি। হস্টেলে না থাকতে দিলে পড়ব কী করে?’’ বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
রবিবার সকালে বিশ্বভারতীর পূর্বপল্লি সিনিয়র বয়েজ় হস্টেলে পতাকা উত্তোলন করতে যান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সেখানে পতাকা উত্তোলনের পর তিনি যে বক্তৃতা দেন, তা নিয়েই বিতর্ক বাধে। ওই বক্তৃতার একটি ভিডিয়ো (আনন্দবাজার তার সত্যতা যাচাই করেনি) ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সংবিধান বানানো হয়েছিল মাইনরিটির ভোট দিয়ে।’’ সংবিধান ‘অপছন্দ’ হলে তা বদলের কথাও বলেন উপাচার্য। এই মন্তব্য ঘিরে তুমুল বিতর্ক বাধে। বিশ্বভারতীর ছাত্র-ছাত্রী, অধ্যাপক, আশ্রমিকেরা অনেকেই ক্ষোভ জানান, উপাচার্যের মন্তব্যে সংবিধানকে অবমাননা হয়েছে।
বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, ‘অস্বস্তিতে পড়ে’ সোমবারই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। হস্টেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকজন ছাত্রকে প্রোক্টরের অফিসে ডেকে পাঠান। পড়ুয়াদের অভিযোগ, সেখানেই প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে বলা হয় তিনি যে ভিডিয়ো রেকর্ড করেছেন তা ফুটেজে ধরা পড়েছে। ওই ছাত্রকে ভিডিয়ো রেকর্ড করা ও কাদের ওই ভিডিয়ো পাঠানো হয়েছে সেই মর্মে একটি মুচলেকা লেখানো হয় বলে অভিযোগ। সেখানে এমন ভিডিয়ো করা অপরাধ ও এর জন্য সাজা হতে পারে বলে পড়ুয়াদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
সোমবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ পূর্বপল্লী সিনিয়র বয়েজ় হস্টেলে এক প্রোক্টর এসে প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রকে একটি চিঠি ধরিয়ে হস্টেল থেকে বহিষ্কারের কথা জানান। ওই ছাত্রের দাবি, ‘‘আমি প্রোক্টরকে বারবার জিজ্ঞাসা করি কোন অপরাধে আমাকে হস্টেল থেকে বহিষ্কার করা হল। কোনও উত্তর না দিয়ে সেখান থেকে প্রোক্টর চলে যান।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ভিডিয়ো রেকর্ড করেছিলাম শুধুমাত্র প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন উপাচার্য হস্টেলে এসে পতাকা উত্তোলন করলেন সেটি স্মৃতি হিসেবে রেখে দেওয়ার জন্য। এরপর আমার কাছ থেকে হস্টেলেরই এক ছাত্র ভিডিয়োটি চায়। তাই আমি শুধু তাকে ভিডিয়োটি দিয়েছিলাম। আর কোথাও পোস্ট করিনি। এর পরও কেন আমাকে বহিষ্কার করা হল বুঝতে পারছি না।’’ মঙ্গলবার সকালেই হস্টেল ছেড়ে বাঁকুড়ায় নিজের গ্রামের বাড়ির পথে রওনা দেন ওই ছাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘আমি অত্যন্ত গরিব পরিবারের ছেলে। বাবা অন্যের জমিতে চাষ করে অনেক কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া করতে পাঠিয়েছে। এখন কোথায় থাকব বুঝতে পারছি না। হয়তো ভিক্ষা করে কোনও মেসে থাকার খরচ জোগাড় করতে হবে।’’
বিশ্বভারতীর এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ওই ছাত্রকে হস্টেলে ফিরিয়ে আনা না হলে আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা। বিশ্বভারতীর পড়ুয়া সোমনাথ সৌ, জয়দীপ সাহারা বলেন, ‘‘এটা পুরোপুরি অনৈতিক। উপাচার্যের অসাংবিধানিক বক্তব্য শুধুমাত্র রেকর্ড করার জন্য একজন ছাত্রকে হস্টেল থেকে বহিষ্কার করা হল এটা আমরা মানছি না। ওই ছাত্রকে যদি হস্টেলে ফিরিয়ে আনা না হয় তাহলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’
বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতে বিবৃতি জারি করে ঘটনার নিন্দা জানানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy