সাংসদ সৌগত রায়। ফাইল চিত্র।
রাজ্যের সদ্যসমাপ্ত পুরভোটে ‘স্বচ্ছতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যেই। বিতর্ক উস্কে দিলেন দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যা হচ্ছে তা ভাল নয়। মানুষ আর বিশ্বাস করবে না।’’
তৃণমূল অবশ্য তাঁর এই বক্তব্য খারিজ করে দিয়েছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সৌগতবাবু যা বলেছেন, তার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। টিভি দেখে বিভ্রান্ত হয়েছেন। দল এই ধরনের বক্তব্য অনুমোদন করে না।’’ তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও সৌগতবাবুর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে কুণাল জানিয়েছেন।
রবিবারের পুরভোটে কয়েকটি জায়গায় অনিয়ম ও গা-জোয়ারির অভিযোগ ওঠে। টিভির ক্যামেরায় কয়েকটি দৃশ্য দেখানোও হয়। আবার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে মার খান এবিপি আনন্দ-সহ একাধিক চ্যানেলের সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকেরা। প্রায় সর্বত্রই অভিযোগের তির ছিল শাসক দলের দিকে। ভোটের দিনটি এ সব নিয়ে ছিল সরগরম।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সে দিনই দাবি করেছেন, ১১,২৮০টি বুথের মধ্যে ১৫-২০টিতে কিছু অশান্তি হয়ে থাকতে পারে। তাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রকৃত চিত্র বদলায় না। অশান্তির পিছনে ‘প্ররোচনা’র অভিযোগে রাজ্যের শাসক তৃণমূল আঙুল তোলে প্রধানত এবিপি আনন্দর দিকে। ‘এবিপি ও বিজেপির গোপন আঁতাত ধ্বংস হোক’ লেখা ব্যানার নিয়ে কলকাতায় তৃণমূলের মিছিলও দেখা যায়।
এই অবস্থায় মঙ্গলবার তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগতর মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে এবং সাধারণ মানুষের চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন পুরভোটের আগে কোনওরকম জোরজুলুম, অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। আরও বলেছিলেন, তৃণমূলের কেউ এমন করলে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। সে দিকে ইঙ্গিত করে সৌগত বলেন, ‘‘শীর্ষ নেতৃত্বের এই বার্তা নীচেরতলায় পৌঁছন যায়নি। জেতার লক্ষ্যে নীচেরতলায় কর্মীরা উগ্র হয়ে উঠছে। এর কারণ ক্ষমতার লিপ্সা।’’
সৌগত ইদানিং অভিষেকের একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য সমর্থনও করেছেন। অভিষেক যখন রাজনীতিকদের ৬৫ বছর বয়সে অবসর নেওয়া উচিত বলে মনে করেছেন, সৌগত তখন তাঁর পাশে দাঁড়ান। কলকাতা পুরভোটের আগে অভিষেক করোনা পরিস্থিতিতে সকল রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্মসূচি দু’মাস বন্ধ রাখার কথা বলেছিলেন। সেটিও সৌগতর সমর্থন পায়। ভোটকুশলী পিকে এবং পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ রাখার প্রশ্নে দলের শীর্ষনেতৃত্ব যখন নির্দিষ্ট মনোভাব প্রকাশ করেছেন, সৌগত তখনও বিপরীত অবস্থান নিয়েছেন। এই পর্বে আগেও একবার লোকসভার তৃণমূলনেতা সুদীপ তাঁকে মুখ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে খবর।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, আগামী লোকসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে সংশয় বুঝেই হয়তো সৌগত আগাম এইরকম পদক্ষেপ করছেন। কয়েকদিন আগে সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখোমুখি হয়ে সৌগত তাঁকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। উত্তরে মোদী তাঁকে হালকা চালে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনি কবে অবসর নিচ্ছেন?’ অনেকের মতে, মোদীর এই প্রশ্নটিও রাজনৈতিক ভাবে অর্থবহ।
দমদমের সাংসদ সৌগতর নির্বাচনী এলাকায় কয়েকটি ওয়ার্ডে তৃণমূল এ বার প্রার্থী বদল করেছে। এই বদলের পিছনে প্রধান কারণ তাঁদের বৈভব ও ব্যক্তিগত জীবনযাপন সম্পর্কিত অভিযোগ। কিন্তু এই ধরনের একাধিক ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীদের ‘পরাজয়’ নিশ্চিত করতে বড়বড় পদাধিকারীরা এ বার সক্রিয় ছিলেন বলেও তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে খবর পৌঁছেছে। এমনকি একাধিক জায়গায় বিকল্প তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে যাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তার পিছনেও কুশলী যোগসাজশের সন্দেহ রয়েছে। আজ বুধবার ফল বেরোলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হতে পারে বলে তৃণমূলের একাধিক শীর্ষনেতা মনে করছেন। ঠিক তার আগেই সৌগতর মন্তব্যগুলি যে ভাবে চর্চায় চলে এল তৃণমূল নেতৃত্ব তার বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব নেওয়ার পক্ষপাতী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy