ফাইল চিত্র।
এক রোগীর মৃত্যুতে আত্মীয়েরা তাঁর সঙ্গে ‘অভদ্র’ আচরণ করেছেন, এই অভিযোগে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় ভিডিয়ো-বার্তা পোস্ট করেন এক জুনিয়র ডাক্তার। ‘ভাইরাল’ সে বার্তা থেকেই প্রশ্ন উঠল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা-পরিকাঠামো নিয়ে। ওই ডাক্তারের কথাতেই উঠে আসে হাসপাতালে অক্সিজেন দেওয়ার ক্ষেত্রে অব্যবস্থা, ট্রলি ভাঙা, রোগীকে ‘সারি’ ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে ওয়ার্ড-বয়দের ‘অনিচ্ছা’র মতো নানা অভিযোগ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যদিও দাবি, সব অভিযোগ সত্য নয়।
ওই ভিডিয়োয় (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) জুনিয়র ডাক্তার স্মরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার রাতে শ্বাসকষ্টে ভোগা এক রোগীকে জরুরি বিভাগে আনা হলে, তিনি অক্সিজেন দিতে যে বিছানায় বসাতে বলেছিলেন, আত্মীয়েরা রাজি হননি। কারণ, বিছানাটি অগোছাল-অপরিষ্কার ছিল। তাঁরা যে বিছানায় রোগীকে নিয়ে যান, সেখানে অক্সিজেন দেওয়ার পাইপ ছিল না। পরে ‘নেবুলাইজ়েশন’-এর সময় যে ‘মাস্ক’ ব্যবহার করা হচ্ছিল, তা রোগীর মুখ থেকে খুলে যাচ্ছিল। জরুরি বিভাগ থেকে রোগীকে ‘সারি’ ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে বলা হলেও ওয়ার্ড-বয়েরা রাজি হননি। শেষে আর এক জুনিয়র ডাক্তারের সাহায্য নিয়ে তিনি রোগীকে স্ট্রেচারে করে ওই ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
ভিডিয়োয় স্মরজিতের অভিযোগ, স্ট্রেচারের ট্রলিটির চাকা ভাঙা ছিল। জরুরি বিভাগের বাইরে জল জমে ছিল। ‘সারি’ ওয়ার্ডের সামনে লিফ্ট ছিল না। অনেক চেষ্টা করেও তাঁরা রোগীকে সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। সেখানেই ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তার পরে রোগীর পরিজনেরা তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলে তাঁর অভিযোগ। হাসপাতালের পরিকাঠামোর ‘খামতিগুলি’র কথা বুধবার তিনি সুপারকে জানিয়েছেন।
হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্তের অবশ্য দাবি, সব অভিযোগ ঠিক নয়। ওয়ার্ড-বয়েরা দাবি করেছেন, তাঁদের না ডেকে ডাক্তারেরা ট্রলি ঠেলতে শুরু করেন। ঠেলার সময়ে কোনও ভাবে সেটির একটি চাকা ভেঙে যায়। জরুরি বিভাগের সামনে জল জমে থাকার কথাও মানেননি সুপার। তিনি আরও জানান, ‘লকডাউন’-এর জন্য লিফ্ট এবং অক্সিজেন সরবরাহের পাইপ বসানোর কাজ আটকে রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যা সমস্যা থাকছে, তা প্রতিদিনই মেটানো হচ্ছে।’’
পরিকাঠামোয় ওই সব খামতির অভিযোগ করছেন মৃত রোগী সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের (৬৮) স্ত্রী, বর্ধমানের সুভাষপল্লির বাসিন্দা রিনা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর দাবি, “আমার ছেলে-মেয়ে ও দাদা ডাক্তার। স্বামীর চিকিৎসা বরাবর বেঙ্গালুরু বা কলকাতার বড় বেসরকারি হাসপাতালে হয়েছে। করোনা-পরিস্থিতির জন্য বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে পরিকাঠামোর খামতিগুলি চোখে পড়ল। তার উপরে দশ মিনিটের মধ্যেই স্বামী মারা যান। তাই আমার বোন রেগে যান।’’ তবে ওই জুনিয়র ডাক্তার তাঁদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেননি বলে পাল্টা অভিযোগ তাঁর। স্মরজিৎ বুধবার শুধু বলেন, “এটা ‘থ্যাঙ্কলেস জব’। যাই করি না কেন, দিনের শেষে গালি খেতে হবে। কর্তব্য করে যাব।’’
এরই মধ্যে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় বৈশাখী ঘোষ নামে আর এক জনও দাবি করেছেন, বর্ধমান মেডিক্যালের ‘সারি’ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা তাঁর জ্যেঠা ধনপতি ঘোষেরও (৬৭) সোমবার ‘প্রায় বিনা চিকিৎসায়’ মৃত্যু হয়েছে। ভাতারের ধাঁধলসা গ্রামের ধনপতিবাবুর স্ত্রী মমতাদেবীরও অভিযোগ, ‘‘অবহেলায় মেরে ফেলা হয়েছে স্বামীকে। ছ’দিনেও করোনা-রিপোর্ট মেলেনি।’’ বুধবার সকালে করোনা-রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসার পরে, বিকেলে আত্মীয়দের হাতে দেহ তুলে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার কুণালকান্তি দে বলেন, “কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেননি। বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। ‘সারি’ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা অন্য কোনও রোগীও আজ পর্যন্ত পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ তোলেননি।’’
হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য সুশান্ত প্রামাণিক অবশ্য দাবি করেন, ‘‘এত বড় ‘সারি’ ওয়ার্ড চলছে, প্রতি শিফ্টে মাত্র এক জন করে ওয়ার্ড-বয় দিয়ে। আমরা ওয়ার্ড-বয় বাড়াতে আবেদন জানিয়েছি। আসলে গোটা পদ্ধতির উপরে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, বলে মনে হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy