Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Kamarhati Beating Incident

চ্যাংদোলা করে ঝুলিয়ে, ঘিরে ধরে পর পর লাঠির বাড়ি! কামারহাটির ‘নতুন’ ভিডিয়োয় জয়ন্ত-বাহিনীই?

কামারহাটির একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, চ্যাংদোলা করে এক জনকে বেধড়ক মারধর করা হচ্ছে। যাঁরা মারছেন, তাঁরা জয়ন্ত সিংহের ঘনিষ্ঠ বলে স্থানীয়দের দাবি।

ক্লাবঘরে চ্যাংদোলা করে মারধর করা হচ্ছে।

ক্লাবঘরে চ্যাংদোলা করে মারধর করা হচ্ছে। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪ ১২:৪৯
Share: Save:

হাত এবং পা ধরে রেখেছেন জনা চারেক মিলে। চ্যাংদোলা করে ঝুলিয়ে রাখা অবস্থাতেই চলছে মারধর। কয়েক জনে মিলে ঘিরে ধরে, নানা দিক থেকে লাঠিপেটা করে চলেছেন অনবরত। শাসকদলের একাধিক ঘনিষ্ঠের দাদাগিরির ঘটনা নিয়ে রাজ্যে যখন হইচই চলছে, তার মধ্যেই এই ‘নতুন’ ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এল। এবং যথারীতি নতুন আলোড়ন তুলল রাজ্য রাজনীতিতে (ভাইরাল ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) ব্যারাকপুর পুলিশের তরফেও পদক্ষেপ করা হয়েছে। তারা ভিডিয়োটির বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, ভিডিয়োটি পুরনো। যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। দু’জন ইতিমধ্যে জেলে রয়েছেন।

ঘটনাস্থল কামারহাটির আড়িয়াদহ তালতলা স্পোর্টিং ক্লাব। বিজেপির দাবি, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এই ঘটনার নেপথ্যে। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এ কাজ করেছে বলে অভিযোগ। ভিডিয়োতে তৃণমূলের কয়েক জনকে দেখাও গিয়েছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়েরা। অভিযোগ, তাঁরা সকলেই জয়ন্ত সিংহের লোক। কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় জয়ন্তের পরিচিতি রয়েছে। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ভিডিয়োটি তিন বছরের পুরনো। সেখানে যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে দু’জন এখন জেলে।

ব্যারাকপুর পুলিশের পোস্ট।

ব্যারাকপুর পুলিশের পোস্ট।

ইতিমধ্যে এই ঘটনায় তৎপর হয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন। ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছে তারা। রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছ থেকে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।

কামারহাটিতে মারধরের ভিডিয়োটি সোমবার রাতে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির তরফেও তা পোস্ট করা হয়। বিজেপি ওই ভিডিয়ো পোস্ট করে লেখে, ‘‘কামারহাটির তালতলা ক্লাবে মদন-ঘনিষ্ঠ জয়ন্ত সিংহ কী ভাবে নিরস্ত্র মহিলাকে মারছেন, দেখা যাচ্ছে। যে রাজ্যের সরকার নারীদের সুরক্ষা নিয়ে গর্ব করে, সেখানেই এই বর্বরতা মানবতার কলঙ্ক। এর দ্রুত তদন্ত এবং বিচার চাই।’’ ভিডিয়ো প্রসঙ্গে বিজেপির পাল্টা পোস্ট করেছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র ঋজু দত্ত এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘এটি ২০২১ সালের মার্চ মাসের ভিডিয়ো। অভিযুক্তেরা জয়ন্ত সিংহ এবং তাঁর অনুগামী। ভিডিয়োতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে অন্তত দু’জন এখন জেলে।’’ বিজেপি দাবি করেছে, ভিডিয়োয় মহিলাকে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে। তৃণমূল সে প্রসঙ্গে দাবি করছে, যিনি মার খাচ্ছেন, তিনি পুরুষও হতে পারেন। তা খতিয়ে দেখা দরকার। ঋজু তাঁর পোস্টে আরও লেখেন, ‘‘বাংলা বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই তৃণমূলকে টার্গেট করতে এখন সব রকম ভিডিয়ো ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ভাবে রাজ্যের বদনাম করার চেষ্টা চলছে।’’ তৃণমূলের বক্তব্যে বিজেপির অনেকে পাল্টা প্রশ্ন করছেন, যদি ২০২১ সালেও এই ঘটনা হয়ে থাকে, তখন কি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছিল?

ভিডিয়োটি যে পুরনো, মানছেন এলাকাবাসীরাও। তাঁদের বক্তব্য, এলাকায় জয়ন্তের লোকজনের দাপট রয়েছে। নানা ভাবে এলাকায় তাঁরা ত্রাস সৃষ্টি করেন। ভাইরাল ভিডিয়োয় যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁদের কয়েক জনকে শিবম গুপ্ত, রাজদীপ বর্মণ, লালু, গঙ্গা, লাল, দীপু, সুমন নামে চিহ্নিত করেছেন স্থানীয়েরা। সকলেই জয়ন্তের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। কেউ কেউ বলছেন, একটি চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিযুক্তকে ক্লাবের ভিতরে এ ভাবে মারধর করা হয়েছিল।

এর আগে গত রবিবার আড়িয়াদহে মা এবং ছেলেকে রাস্তায় ফেলে মারধরের যে ঘটনা ঘটেছিল, সেখানেও অভিযুক্ত ছিলেন জয়ন্ত এবং তাঁর অনুগামীরা। অভিযোগ, দুই যুবকের ব্যক্তিগত ঝামেলার মধ্যে জয়ন্তেরা ঢুকে পড়েন। মহিলা এবং তাঁর পুত্রকে হকি স্টিক, লাঠি, ইট দিয়ে মারধর করা হয়। এই ঘটনার পর জয়ন্ত-সহ একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাত-আট বছর আগে জয়ন্ত মদনের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।

এই ভিডিয়ো প্রসঙ্গে কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘তৃণমূলে এই ধরনের কোনও ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। হবেও না। যাঁরা দোষী, তাঁরা অবশ্যই শাস্তি পাবেন। ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। যাঁরা তা ঘটিয়েছেন, তাঁরা তৃণমূলে থাকলেও, বা না থাকলেও, শাস্তি পাবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

kamarhati Viral Video BJP TMC Jayanta Singh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE