বিডিওদের চুড়ি, কালো মিষ্টি এবং গোলাপ উপহার দিল বিজেপি। —নিজস্ব চিত্র।
শাসক তৃণমূলের একুশে জুলাইয়ের সমাবেশের পাল্টা শুক্রবার রাজ্য জুড়ে বিডিও অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। সেই অভিযান ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল বেশ কয়েকটি জায়গায়। কোথাও বিডিওকে স্মারকলিপির সঙ্গে উপহার দেওয়া হল চুড়ি। কোথাও আবার বিডিওকে ‘সংবর্ধনা’ দিতে নিয়ে যাওয়া হল ‘কালো মিষ্টি এবং গোলাপ’ও। ১৪৪ ধারা জারি থাকায় বিডিও অফিসের বাইরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়েছে কোথাও কোথাও। বিজেপির দাবি, পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে রাজ্য জুড়ে তাদের বেশ কয়েক জন কর্মী-সমর্থক জখম হয়েছেন। বিশৃঙ্খলার অভিযোগে কিছু জায়গায় আটকও হয়েছেন গেরুয়া শিবিরের কর্মীরা।
পঞ্চায়েত ভোটে ‘সন্ত্রাস ও ভোট লুটের’ অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানিয়ে কলকাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে গত বুধবার বিডিও অফিস ঘেরাওয়ের ডাক দেয় বিজেপি। ভোটের গণনা পর্বে বিডিওদের ভূমিকা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তার প্রেক্ষিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাশে ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এর পর বৃহস্পতিবার রাতে জেলায় জেলায় বিডিও অফিসের চারপাশে ১৪৪ ধারা জারির নির্দেশ দেওয়া হয়। তার পরেও শুক্রবার ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে বিভিন্ন জায়গায় বিডিও অফিসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখালেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা।
বাঁকুড়ার ২২টি ব্লকেই এই বিক্ষোভ চলেছে। কিন্তু ১৪৪ ধারা জারি থাকায় সব জায়গাতেই বিডিও অফিসে ঢোকার বহু আগেই বিজেপির মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। যেখানে মিছিল আটকে দেওয়া হয়, সেখানেই বিক্ষোভ অবস্থান শুরু করেন কর্মী-সমর্থকেরা। পরে অবশ্য প্রতিটি ব্লকের বিডিওর সঙ্গে দেখা করেই স্মারকলিপি জমা দেন দলীয় নেতারা। বিক্ষোভ চলাকালীন ওন্দা ব্লকের বিজেপি নেতা স্বরূপ ঘোষ বলেন, ‘‘দ্রুত এই সন্ত্রাস বন্ধ না হলে এবং কারচুপি হওয়া বুথগুলিতে পুননির্বাচনের কথা বিডিও ঘোষণা না করলে, আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’’
বিজেপির কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়ার বিডিও অফিসের সামনে। সেখানেও ১০০ মিটার আগে বিজেপির মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। সেই সময় বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে তাঁদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। এই ঘটনার পরেই বিডিও অফিসের সামনে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দু’জন বিজেপি কর্মীকে আটকও করা হয়েছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, মহিলাদের গায়ে হাত দিয়েছেন পুরুষ পুলিশকর্মীরা। পুলিশের তরফে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়া বিডিও অফিস চত্বরেও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বিজেপি কর্মীদের। বিজেপি নেতা তাপস রায় বলেন, ‘‘মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণ এবং গণনার দিন পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতে লুট হয়েছে।’’ রানিগঞ্জ, সালানপুর, বরাবনি বিডিও অফিসের সামনেও বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। সালানপুর, জামুড়িয়ার দুই বিডিও-ই জানান, কিছু দাবি নিয়ে বিজেপি প্রতিনিধি দল তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদের দাবিদাওয়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
বীরভূমের খয়রাশোলের বিডিও অফিসে বিক্ষোভের পর স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়ে চুড়ি উপহার দিলেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। সেই সঙ্গে বিডিও অফিসের গেটেও চুড়ি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। অন্য দিকে, উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া-১ এবং ২ ব্লকের বিডিও অফিসের সামনেও বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। ওই দু’টি ব্লকের বিডিওর জন্য নিয়ে যাওয়া হল কালো মিষ্টি আর গোলাপ। ঘটনাচক্রে, হাবড়া-২ ব্লকের তিন বুথে মোট ভোটারের চেয়ে বেশি ভোট পড়েছে, এই অভিযোগের ভিত্তিতে বিডিও শুভ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের বিডিও অফিস ঘেরাও কর্মসূচিতে কেন্দ্র করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ হয়। বিজেপির দাবি, পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। তাতে বেশ কয়েক জন মহিলা কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। তাঁদের সাগর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উত্তরবঙ্গেও বিজেপির কর্মসূচি ঘিরে গোলমাল হয়েছে। কোচবিহার-১ ব্লকের ঘুঘুমারি বিডিও অফিসে পুলিশ-বিজেপির মধ্যে বাদানুবাদে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিডিও অফিস থেকে ২০০ মিটার দূরেই বিজেপির মিছিল আটকে দেওয়া হয়। কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের দিন ভোট লুট, সন্ত্রাস, ছাপ্পা ভোট ও গণনার কারচুপির প্রতিবাদে এই আন্দোলন ও ডেপুটেশন কর্মসূচি ছিল। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন দিয়ে আমাদের আটকে দিয়েছে। যাতে আমরা বিডিও অফিস চত্বরে যেতে না পারি। ভোটে যারা চুরি করেছে, তারাই আমাদেরকে আটকে দিচ্ছে। এ ভাবে আমাদের আটকানো যাবে না। আগামী দিনে সকল মানুষের স্বার্থে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে বিজেপি।’’ এ ছাড়াও মালদহের চাঁচল-১ এবং মানিকচক ব্লকে বিজেপির কর্মসূচি ঘিরে খানিক অশান্তি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই দু’টি জায়গায় মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশবাহিনী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy