Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

রোগীকে অক্সিজেন দেন অ্যাম্বুল্যান্সের চালকই

নামে অ্যাম্বুল্যান্স। অথচ তার মধ্যে যা যা প্রয়োজনীয় জিনিস থাকা দরকার তা থাকে না বলেই অভিযোগ। অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে প্রশিক্ষিত কর্মী বহু অ্যাম্বুল্যান্সেই দেখা যায় না। তার উপর বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ ওঠে আকছার। অভিযোগের আঙুল বেশিরভাগই বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের দিকে। দিন দুয়েক আগে বর্ধমান থেকে কলকাতায় আনার পথে অ্যাম্বুল্যান্সে এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় এই সব অভিযোগ আরও জোরাল হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্সের অব্যবস্থা নিয়ে খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। আজ শেষ পর্ব সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে এ ভাবেই রোগী বহন এখন স্বাভাবিক নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।

তমলুক হাসপাতাল চত্বরে রোগীর অপেক্ষায় থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। নিজস্ব চিত্র

তমলুক হাসপাতাল চত্বরে রোগীর অপেক্ষায় থাকা বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। নিজস্ব চিত্র

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০১:৪২
Share: Save:

ভগবানপুরের গোয়ালাপুকুর এলাকার বাসিন্দা ৭২ বছরের শ্রীমন্ত মাইতি ভর্তি হয়েছিলেন তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড় এলাকার একটি নার্সিংহোমে। তাঁর শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার জন্য শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসক কলকাতার হাসপাতালে রেফার করেন। পরিবারের লোকজন স্থানীয় এক বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে কলকতার উদ্দেশ্যে রওনা হন। অ্যাম্বুল্যান্সে শ্রীমন্তবাবুর সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠানো হলেও এবং গাড়িতে পরিবারের তিন সদস্য ও চালক থাকলেও ছিল না কোনও প্রশিক্ষিত কর্মী।

সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে এ ভাবেই রোগী বহন এখন স্বাভাবিক নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তবে শুধু বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সই নয়, তমলুক জেলা হাসপাতালের একমাত্র অ্যাম্বুল্যান্সেও কোনও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নেই বলে অভিযোগ। ফলে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় কোনওরকম জরুরি পরিষেবার দরকার হলে অ্যাম্বুল্যান্সের চালকই ভরসা।

তমলুক জেলা হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা গেল সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স। কোনওটি সাংসদ কিংবা বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে পঞ্চায়েতকে দেওয়া। কোনটি ক্লাবের দান। বেশিরভাগই শীততাপনিয়ন্ত্রিত। কোনওটিতে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়ার বার্তা। কিন্তু সবকটিতেই অক্সিজেন, স্যালাইন বা রক্ত দেওয়ার মতো ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী আছেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।

এই সব অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের নিয়ন্ত্রণকারী পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক দীপক দাস স্বীকার করেন, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে প্রায় ৫০টি বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। অধিকাংশ অ্যাম্বুল্যান্সেই প্রশিক্ষিত কর্মী নেই। তবে জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্সের চালকেরাই ওই সব কাজ করেন। তবে কোনও রোগীর পরিবার চাইলে আমরা অভিজ্ঞ কর্মীর ব্যবস্থা করে দিই। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়।’’

কিন্তু রোগীকে অক্সিজেন বা স্যালাইন দেওয়ার কাজে প্রশিক্ষণ না থাকা চালকদের ব্যবহার তো শুধু বেআইনি নয়, রোগীর ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে! ঝুঁকির কথা মেনে নিয়ে দীপকবাবু বলেন, ‘‘প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাবেই চালকদের এ কাজ করতে হয়। জেলা স্বাস্থ্য দফতর অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের রাখার ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।’’ জেলা হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সে প্রশিক্ষিত কর্মী না থাকার কথা স্বীকার করেছেন হাসপাতালের সুপার গোপাল দাস। তাঁর কথায়, ‘‘রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে অন্যত্র স্থানান্তরের সময় প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী রাখার বিষয়ে কোনও নির্দেশিকা আমার কাছে নেই।’’

পূর্ব মেদিনীপুর নার্সিংহোম অনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কানাইলাল দাস বলেন, ‘‘নার্সিংহোমের অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তরের সময় প্রশিক্ষিত কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু যে ক্ষেত্রে রোগীর পরিবার অন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন সেক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত কর্মী রাখার দ্বায়িত্ব ওই অ্যাম্বুল্যান্স মালিকের। তবে নার্সিংহোমের কাছে সাহায্য চাইলে তার ব্যবস্থা করা হয়।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের সুস্পষ্ট নির্দেশিকা এবং নজরদারি জরুরি। নচেৎ রোগীকে এই সব ঝুঁকি নিয়েই অ্যাম্বল্যান্সে উঠতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Ambulance Ambulance driver treatment Patients
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE