কলকাতা-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের বাতানুকূল কামরার করিডরে পড়ে আছেন প্রৌঢ়া। ইনসেটে কৃষ্ণা দত্ত চৌধুরী। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
চলন্ত ট্রেনে একটি কামরায় দু’সারি আসনের মাঝখানের করিডরে ঘণ্টা দেড়েক পড়ে রইলেন এক অচৈতন্য মহিলা। তাঁর জন্য না হল চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা, কোনও স্টেশনে না থামানো হল ট্রেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৫০ মিনিট নাগাদ ডিব্রুগড়গামী এক্সপ্রেস মালদহ টাউন স্টেশনে পৌঁছনোর পরে ডাক্তার ডাকা হয়। তিনি এসে পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন, মহিলার মৃত্যু হয়েছে।
মৃত যাত্রীর নাম কৃষ্ণা দত্ত চৌধুরী (৫৬)। বাড়ি লেক টাউনে। দেহ ময়না-তদন্তের জন্য মালদহ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। পারিবারিক সূত্রের খবর, শিলিগুড়িতে ভাইপোর বাড়িতে যাচ্ছিলেন কৃষ্ণাদেবী। মালদহ টাউন স্টেশনের আইসি (জিআরপি) ভাস্কর প্রধান জানান, প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে, অসুস্থতার কারণে ওই মহিলা যাত্রীর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে ময়না-তদন্তের পরেই মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার হবে।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের বাতানুকূল বি২ কামরার ৪৯ নম্বর আসনের যাত্রী ছিলেন কৃষ্ণাদেবী। ট্রেনটি বুধবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়ে। ট্রেনে উঠে কৃষ্ণাদেবীর সহযাত্রীরা যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়েন। পরে যাত্রীদের একাংশ জানান, ভোরে ওই মহিলাকে বেহুঁশ অবস্থায় কামরার মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: দেখাব না কাগজ, বহু দেবস্মিতার একই স্বর
ওই ট্রেনের বি১ কামরার যাত্রী দীপান্বিতা বাগচী জানান, ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ পাশের কামরায় গুঞ্জন শুনে গিয়ে দেখেন, এক মহিলা করিডরে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছেন। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, সেই সময় ট্রেনের কোনও অ্যাটেন্ড্যান্ট বা কর্মীকে পাওয়া যায়নি। প্রথমে বি২ কামরার টিকিট পরীক্ষকের খোঁজ করা হয়। যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, বি২ কামরায় কোনও টিকিট পরীক্ষক ছিলেন না। অনেক ডাকাডাকির পরে বি১ কামরা থেকে টিকিট পরীক্ষক আসেন। কিন্তু তার পরেও কৃষ্ণাদেবীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। রেল পুলিশও চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কাছাকাছি কোনও স্টেশনে ট্রেন থামানোর ব্যবস্থা করেনি। অভিযোগ, প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে ট্রেনটি মালদহ টাউন স্টেশনে পৌঁছয়। সেখানে চিকিৎসক ডেকে আনা হয়। তিনি কৃষ্ণাদেবীকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় ট্রেনযাত্রীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। মালদহ টাউন স্টেশনে নেমে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। অনেকেই বলতে থাকেন, মাঝ আকাশে কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বিমান ফিরিয়ে আনা হয় বা কাছাকাছি কোনও বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। রেলের গাফিলতির অভিযোগ তুলে তাঁদের প্রশ্ন, ট্রেনের বেলায় তা হবে না কেন? মাঝখানে কোনও স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে ওই মহিলা হয়তো বেঁচে যেতেন, বলছেন যাত্রীদের অনেকে।
আরও পড়ুন: দু’দফায় ৬ ঘণ্টা জেরা মুকুলকে
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে পূর্ব রেলের এক আধিকারিক রেলের গাফিলতির কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। রেক দেরিতে আসায় ট্রেনটি ঘণ্টা তিনেক দেরিতে ছেড়েছিল। ঘটনার খবর জানাজানি হওয়া মাত্রই কাছাকাছি স্টেশন মালদহে ট্রেন থামে। সেখানে সকাল ৬টা ৫০ মিনিট থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। তখনই চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, মহিলার মৃত্যু হয়েছে। জিআরপি মৃতদেহ নিয়ে যায়। এই নিয়ে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে, ঠিক কী ঘটেছে।’’
লেক টাউনে ক্যানাল স্ট্রিটের একটি বহুতলের একতলায় একা থাকতেন কৃষ্ণাদেবী। তিনি নিঃসন্তান। তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন বছর তিনেক আগে। কৃষ্ণাদেবীর বান্ধবী প্রচেতা দত্ত বলেন, ‘‘বুধবার সারা দিন আমরা একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছি। ওর অসুস্থতাও কিছু ছিল না। কী করে এমন হল, বুঝতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy