দিনহাটায় রাহুল সিংহ
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আগে কমল পুত্র উদয়ন গুহ বিজেপিতে নাম লেখানোর জন্য লাইন দিয়েছিলেন বলে দাবি করলেন দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। বুধবার দিনহাটার সংহতি ময়দানে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাহুলবাবু ওই দাবি করেন। তবে এতদিন পর কেন তিনি ওই দাবি করছেন, সেই বিতর্কও শুরু হয়েছে। বিজেপি-র অন্দরে অবশ্য উদয়নবাবুর এই দলে যোগ দেওয়ার কথা অনেক দিন ধরেই বলা হচ্ছিল। উদয়নবাবু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে এ বারে রাহুলবাবু তা প্রকাশ্যে জানালেন। উদয়নবাবু অবশ্য রাহুলবাবুর দাবি সরাসরি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
এ দিন দিনহাটার সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাহুলবাবু বলেন, “উদয়নবাবু তৃণমূলের গুহায় ঢুকেছেন। সাধারণ লোকেরা দলের কাজে আকৃষ্ট হয়ে বিজেপিতে আসছেন। আজ থেকে তিন মাস আগে উদয়নবাবুও বিজেপির খাতায় নাম লেখানোর জন্য লাইন দিয়েছিলেন।” সেই সঙ্গে রাহুলবাবুর সংযোজন, “উনি প্রথমে বলেছিলেন আগে কর্মীদের পাঠাচ্ছি। আমি গেলে বিধায়ক পদ চলে যাবে। তাই পরে তিনি আসবেন বলেও উনি বলছিলেন।”
রাজনৈতিক মহল সূত্রেই অবশ্য জানা গিয়েছে, তৃণমূলকে ঠেকাতে এক সময় ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীদের বিজেপি-তে সামিল করানর জল্পনা ছড়িয়েছিল। তবে উদয়নবাবু বা জেলার পদস্থ কোনও ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা দলে সামিল হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এমন দাবি আগে কখনো প্রকাশ্যে করা হয়নি। এদিনের সভায় রাহুলবাবু সেই দাবি করায় স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি উদয়নবাবুকে নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি সেই প্রশ্নও উঠেছে। রাহুলবাবু অবশ্য কেবল বলেন, ‘‘যা বলার বক্তব্যে বলে দিয়েছি। আজ দিনহাটায় প্রসঙ্গ ক্রমে উদয়নবাবুর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টার কথা বলেছি। বিধায়ক পদ বাঁচাতে উনি তৃণমূলে গিয়েছেন। তৃণমূলের হাতে স্পিকার আছে।” রাহুলবাবুর কটাক্ষ, “ব্যাক্তি স্বার্থের জন্য উনি তৃণমূলে গিয়েছেন। এদের নিয়ে ভাবতে হবে।”
উদয়নবাবু অবশ্য রাহুলবাবুর দাবি আমল দিতে চাননি। উদয়নবাবু বলেন, “এরপর অন্য এক রাহুলবাবু দিনহাটায় এসে হয়তো বলবেন উদয়ন গুহ কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। আসলে দিনহাটায় এসে আমাকে নিয়ে কিছু না বললে লোকে ওঁর বক্তব্য শুনবেন না বুঝেই ভিত্তিহীন সব কথা বলেছেন। একবারের জন্যও আমি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে কথা বলিনি।”
বিজেপি সূত্রেই জানা গিয়েছে, মূলত উদয়নাববুর দলবদলকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সংগঠন চাঙ্গা করার ভাবনা থেকে পুজোর মুখে তড়িঘড়ি দিনহাটায় ওই সভার ডাক দেওয়া হয়। এমনকি এদিন ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে কর্মীরা সবাই তাঁদের দিকে ঝুঁকেছেন বলেও রাহুলবাবু দাবি করেন। তিনি বলেন, “একদিকে উদয়ন গুহ অন্য দিকে পুরো ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীরা বিজেপির দিকে। এই ভিড় প্রমাণ করছে দলের প্রতি দিনহাটার মানুষের আস্থা বেড়েছে।”
যদিও দিনহাটার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বড়জোর জনাপঞ্চাশেক ‘ফব কর্মীকে’ এদিন রাহুলবাবুর হাত থেকে মঞ্চে পতাকা নিতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনও ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা ওই তালিকায় নেই। বিএসপির গত বিধানসভার দিনহাটার প্রার্থী নিরঞ্জন বর্মনও এদিন অনুগামীদের নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে, নেতা ব্রজগোবিন্দ বর্মনরা দাবি করেন, “ফব, বিএসপির ৫০০’র বেশি কর্মীসমর্থক এদিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য দীপক সরকার দাবি করেন, “আমাদের দলের কেউ বিজেপিতে যাননি। শনিবার কোচবিহারে কর্মিসভাতেই সাংগঠনিক শক্তি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।”
বিজেপিতে একাধিক জেলা সভাপতি বদলে কোনও ক্ষোভ নেই বলেও এদিন দাবি করেন রাহুলবাবু। তিনি বলেন, ‘‘শিলিগুড়ির রথীনবাবু রাজ্য সম্পাদক হয়েছেন। কোনও ক্ষোভ নেই। আপাতত তেমন কোন রদবদলও আর করা হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy