Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

কে কেন ব্যাগ কিনছে, সে প্রশ্ন কি করা যায়

আসলে বেনাচিতির ওই ব্যাগের ওই দোকান থেকেই বড় নীলচে বেগুনি রঙের ট্রলি ব্যাগ কিনেছিলেন মেজিয়ার তরুণী খুনে অভিযুক্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রাজীব কুমার।

এই দোকান থেকেই ব্যাগ কেনেন রাজীব কুমার ও সমরেশ সরকার। ছবি: বিকাশ মশান

এই দোকান থেকেই ব্যাগ কেনেন রাজীব কুমার ও সমরেশ সরকার। ছবি: বিকাশ মশান

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:০৮
Share: Save:

কাকতালীয় তো বটেই। কিন্তু, সেই কাকতালীয় ঘটনার জন্যই বেনাচিতির এক ব্যাগের দোকান এখন আলোচনার কেন্দ্রে। অনেক বাসিন্দাই ওই দোকান নিয়ে শনিবার রাত থেকে খোঁজখবর নিচ্ছেন। আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় সরণি ধরে যেতে যেতে পথচলতি অনেকেই থমকে দাঁড়াচ্ছেন দোকানের সামনে।

কেন?

আসলে বেনাচিতির ওই ব্যাগের ওই দোকান থেকেই বড় নীলচে বেগুনি রঙের ট্রলি ব্যাগ কিনেছিলেন মেজিয়ার তরুণী খুনে অভিযুক্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রাজীব কুমার। পুলিশের দাবি, জেরায় রাজীব স্বীকার করেছেন, নতুন কেনা সেই ব্যাগেই তিনি পুরেছিলেন শিল্পা অগ্রবালের দেহ। যা গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজীবের ফ্ল্যাটের সামনের বারান্দার পাশের ঘুপচি ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাচক্রে ওই দোকান থেকেই ২০১৫ সালের অগস্টে ট্রলি ব্যাগ কিনেছিলেন প্রেমিকা সুচেতা চক্রবর্তী ও তাঁর শিশুকন্যা দীপাঞ্জনা খুনে অভিযুক্ত দুর্গাপুরের মামড়া বাজারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সমরেশ সরকার। সুচেতা-দীপাঞ্জনার দেহাংশ ব্যাগে ভরে মাঝগঙ্গায় ফেলার সময় শেওড়াফুলিতে ধরা পড়ে যান সমরেশ।

অর্থাৎ, মোট তিনটি খুন। তাতে অভিযুক্ত দুই ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। দু’জনেই দুর্গাপুরে কর্মসূত্রে থাকতেন। দু’জনেই প্রেমিকা খুনে অভিযুক্ত। দু’টি ক্ষেত্রেই দেহ লোপাটের জন্য কেনা হয়েছে ট্রলি ব্যাগ। এবং একই দোকান থেকে। স্বাভাবিক ভাবেই ওই দোকান নিয়ে চর্চা বেড়েছে এলাকায়। যার জেরে দোকান মালিক রবীন্দ্রনাথ দত্ত কিঞ্চিৎ বিরক্ত। বলছেন, ‘‘কাকতালীয় ছাড়া আর কী-ই বা বলা যেতে পারে বলুন। এমন হবে জানলে কি আর জেরা করতাম না!’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় রাজীব জানিয়েছেন, ৯ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাতে শিল্পা বেনাচিতিতে তাঁর ভাড়া নেওয়া বহুতলের ফ্ল্যাটে আসেন। তাঁর সঙ্গে শিল্পার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন শিল্পা। পুলিশের দাবি, তা থেকে বিবাদের জেরেই শনিবার (১০ তারিখ) রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করা হয় শিল্পাকে। যদিও শিল্পার পরিবারের দাবি, তাঁর কাছ থেকে শেয়ারবাজারে খাটিয়ে লাভ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন রাজীব। সেই টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে গণ্ডগোলের জেরেই খুন হতে হয় শিল্পাকে। রাজীব ও তাঁর স্ত্রী মনীষা ধরা পড়েন বৃহস্পতিবার। সে দিনই গভীর রাতে রানিগঞ্জের গির্জাপাড়ায় রাজীবের আর একটি ভাড়া বাড়ি থেকে শিল্পার জামাকাপড়, ব্যাগ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ। মাস ছয়েক আগে মেজিয়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ম্যানেজার হিসাবে যোগ দেন রাজীব। শিল্পা ওই ব্যাঙ্কেই ‘ব্যাঙ্কমিত্র’ হিসাবে কাজ করতেন। রাজীব-মনীষা এখন পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।

শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ রাজীবকে সঙ্গে নিয়ে বেনাচিতির ওই ব্যাগের দোকানে যায়। দোকান মালিক জানান, বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টা নাগাদ ৭ হাজার টাকা দিয়ে ট্রলি ব্যাগটি কিনেছিলেন রাজীব। যদিও নিজের নাম বলেছিলেন, রাজেশ কুমার। নিজের মোবাইল নম্বরও অন্য দিয়েছিলেন। রাজীবের ব্যাগের রং নীলচে বেগুনি। সমরেশ কিনেছিলেন ছিল নীল রংয়ের ট্রলি ব্যাগ। মাঝে লাল দাগ ছিল।

দোকান মালিক রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘বারবার পুলিশের ঝামেলা কি আর ভাল লাগে!’’ তিনি জানান, কে কী উদ্দেশ্যে ব্যাগ কিনতে আসছেন, তা জানার এক্তিয়ার দোকান কর্মীদের নেই। সেটা করতে গেলে ব্যবসা মার খাবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Trolley Rajib Kumar Bag shop
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE