Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

পুলিশ পরিবারের বিরুদ্ধে পুলিশ পরিবার

কলকাতার আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে শনিবার উদ্ধার হয়েছিল মুরচার যুবক প্রসেনজিৎ সিংহের (২৮) দেহ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জয়ন্ত সেন
পুখুরিয়া শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৫০
Share: Save:

তিন কিলোমিটার দূরত্বের দু’টি পরিবার। দু’টিরই পরিচিতি ‘পুলিশ পরিবার’ হিসেবে। একটি পরিবারের প্রত্যেকেই শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন। অন্য পরিবারটিকে গ্রাস করেছে আতঙ্ক। পরিবার দু’টির একটি মালদহের পুখুরিয়া থানার মুরচায়, অন্যটি হরিপুরে।

কলকাতার আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে শনিবার উদ্ধার হয়েছিল মুরচার যুবক প্রসেনজিৎ সিংহের (২৮) দেহ। প্রসেনজিতের দেহ নিয়ে এ দিন সকালে মুরচার বাড়িতে ফিরেছেন পরিজনেরা। শোকে ভেঙে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। পরে সাদুল্লাপুর শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

অভিযোগ, প্রসেনজিৎকে পুলিশে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের কর্মী ইন্দ্রজিৎ ও তাঁর দাদা ডাক বিভাগের কর্মী বিশ্বজিত মণ্ডল। তাঁরা দু’জনেই হরিপুরের বাসিন্দা। তবে দু’দিন থেকে তাঁদের কোনও খোঁজ পাচ্ছেন না পরিজনেরা। স্থানীয় সূত্রে খবর, গুরুতর অসুস্থ বাবাকে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের বাবার কী অবস্থা, খোঁজ নেই তারও। ফলে আতঙ্কে ও উদ্বেগে দু’দিন ধরে উনুন জ্বলেনি ওই পরিবারে।

উনুন জ্বলছে না প্রসেনজিতের বাড়িতেও। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন প্রসেনজিৎ। বাবা উত্তমকুমার সিংহরা ছয় ভাই। সকলেই পুলিশকর্মী। তাঁদের বাবাও ছিলেন পুলিশকর্মী। স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ প্রসেনজিৎও পুলিশে চাকরি করতে চেয়েছিলেন। সেই জন্যই ইন্দ্রজিৎ ও বিশ্বজিৎকে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। চাকরি না হওয়ায় সেই টাকা ফেরত চাইতেই তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর। তার পরে শনিবার তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। তারপরে কলকাতার ওয়াটগঞ্জ থানায় উত্তমবাবু অভিযোগ করেন, বিশ্বজিৎ ও ইন্দ্রজিৎ তাঁর ছেলেকে খুন করেছে।

উত্তর মালদহের সাংসদ বিজেপির খগেন মুর্মু বলেন, ‘‘দুর্নীতি কতটা গভীরে, তার প্রমাণ এই অভিযোগ যে, পুলিশকর্মী পুলিশকর্মীকেই ঘুষ দিচ্ছেন যাতে ছেলে পুলিশে চাকরি পায়।’’ পুলিশ আধিকারিকদের দাবি, পুলিশে এমন ভাবে চাকরি পাওয়া যায় না। ঠিক কী হয়েছে, কেউ ঘুষ দিয়েছেন কি না, সে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

এ দিন প্রসেনজিতের পরিজনরা কেউই কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। উত্তম বলেন, ‘‘টাকা ফেরত দেবে বলেই দুই ভাই ওকে কলকাতায় যেতে বলেছিল। ওরাই সম্ভবত পরিকল্পনা মতো তাকে বডিগার্ড লাইন্সে থাকার বন্দোবস্ত করেছিল।’’

বিশ্বজিৎ ও ইন্দ্রজিতের মা চঞ্চলাদেবী, ইন্দ্রজিতের স্ত্রী অর্পিতাদেবী ক্রমাগত কেঁদেই চলেছেন। রয়েছেন কলেজপড়ুয়া ভাই সত্যজিৎ। দু’বছর ধরে বাবা কাঞ্চন মণ্ডল অসুস্থ। দিন কয়েক আগেই তাঁকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে গিয়েছেন ছেলেরা। তিনি কোনও একটি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি বলে শুনেছেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু দুদিন ধরে দুই ভাইয়ের কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে দাবি।

সত্যজিৎ বলেন, ‘‘দাদাদের টাকাতেই সংসার চলে। ওরা অসৎ উপায়ে রোজগার করলে এ রকম ভাঙাবাড়ি থাকত না। আগেই বাবার চিকিৎসা করানো যেত। দু’দিন ধরে ফোন পাচ্ছি না। ওদের কিছু হলে আমাদের সংসারটা ভেসে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Alipore Bodyguard lines Death Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy