রেণু মুন্ডা। ছবি: সব্যসাচী ঘোষ।
এক মেয়ের ঘরে মাঝ রাতে হানা দিল হাতি। ভেঙে দিল টিনের চালা, যেখানে তার মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড এবং বইপত্র ছিল। আর এক মেয়ের বাবা পরীক্ষা দেওয়া আটকাতে তাকে ঘরে রাখতে চেয়েছিল। চলেছে মারধরও।
মাধ্যমিক পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে মালবাজারের রেণু মুন্ডা আর ফরাক্কার তাহরিমা খাতুনকে মিলিয়ে দিল তাদের একটিই বৈশিষ্ট্য: জেদ। সেই জেদের ভরেই হাতি সরে যেতে রাতেই ভাঙা ঘরের বাইরে ছিটকে পড়া অ্যাডমিট কার্ড, লেখার বোর্ড-সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তুলে আনে জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজারে কান্তদিঘী কুমোরপাড়া গ্রামের মেয়েটি। এবং ওই একই জেদ আর মায়ের সাহায্যে শনিবার সকালে ফরাক্কা থানায় আইসি-র কাছে গিয়ে বাবার নামে অভিযোগ জানায় তাহরিমা।
ফরাক্কা থানায় শনিবার সকালে হাজির হয় তাহরিমা। সঙ্গে তার মা পলি বিবি। ঘড়িতে তখন ১০টা বেজে গিয়েছে। আইসির কাছে কান্নায় ভেঙে পড়ে তাহরিমা বলে, “স্যর আমি পরীক্ষা দিতে চাই। পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। দয়া করে আমাকে পরীক্ষা দিতে সাহায্য করুন।” এর পরে পুলিশ ওই কিশোরীকে নিয়ে তার পরীক্ষা কেন্দ্র অর্জুনপুর হাই স্কুলে পৌঁছে দেয়। তখন পৌনে ১১টা। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাকে বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার পরে তাহরিমাকে পুলিশ তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
তাহরিমার বাবা রফিকুল শেখ পেশায় রাজমিস্ত্রি। আইসি বলেন, ‘‘আমরা মেয়েটিকে নিয়ে যখন ওর বাড়ি যাই, সেই সময়ে রফিকুল বাড়িতেই ছিলেন। আমরা তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছি যাতে, তিনি মেয়ের পড়াশোনায় আর বাধা না দেন।’’ তাহরিমা বলে, “শুক্রবার কোনও রকমে বাংলা পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তার পর থেকে বাবা বাধা দিচ্ছিলেন। এ দিন সকালে বাড়ি থেকে বেরোতেই দিচ্ছিলেন না। নিরুপায় হয়ে থানায় যাই।” পলি বিবি বলেন, “আমার স্বামী এখনই মেয়ের বিয়ে দিতে চান। তাঁকে বোঝাতে পারিনি। উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব বুঝি বলেই মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছি।’’
মালবাজারের বড়দিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী রেণুর ধাক্কাটা এসেছিল শুক্রবার গভীর রাতে। এলাকাবাসীরা জানান, শুক্রবার রাত দেড়টা নাগাদ বুনো হাতিটি কান্তদিঘী কুমোরপাড়া গ্রামে ঢোকে। হানা দেয় রেণুদের বাড়িতে। দাঁতালের হামলায় বাঁশ-কাঠ-টিন দিয়ে তৈরি রেণুর বাড়ির একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। সেই শব্দে ঘুম ভেঙেও তাই প্রথমেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বার করতে পারেনি রেণু ও তার বাবা-মা। তবে হাতিটি কিছুটা দূরে সরতেই ভাঙাচোরা ঘরের ভিতর থেকে বই-খাতা গুছিয়ে বার করে নেয় রেণু। বাড়ির বাইরে পড়েছিল মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড, পরীক্ষায় লেখার বোর্ডও। সে সব হাতে তুলে নেয় সে।
রেণুর পরীক্ষা কেন্দ্র মালবাজার শহরের পুষ্পিকা হিন্দি বালিকা বিদ্যালয়। হাতির আতঙ্ককে পিছনে ফেলে শনিবার ভোরেই মালবাজারে রওনা দেয় সে। বিকেলে রেণু জানায়, এ দিনের ইংরেজি পরীক্ষা মোটামুটি ভালই হয়েছে। রেণুর কথায়, ‘‘হাতি বাড়ি ভেঙে দিলেও মন শক্ত ছিল। ঠিকই করে নিয়েছিলাম, পরীক্ষা দেবই।’’ তার পরে উজ্জ্বল মুখ করে মেয়েটি বলে, ‘‘হাতি বাড়ি ভাঙার কথা কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রে কাউকে বলিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy