Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Defamation case against CM Mamata

বোসের মানহানি মামলা: মমতার আমলে এজি পদ ছাড়া দুই আইনজীবীও হাই কোর্টে মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে যুদ্ধে

মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে মানহানির মামলা করেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বুধবারই সেই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের এজলাসে।

(বাঁ দিক থেকে) প্রাক্তন এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন এজি জয়ন্ত মিত্র।

(বাঁ দিক থেকে) প্রাক্তন এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন এজি জয়ন্ত মিত্র। —ফাইল চিত্র ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪ ১২:৪২
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলেই রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ আইনি পরামর্শদাতা অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি)-এর পদ ছেড়েছিলেন অতীতে। রাজ্যপালের দায়ের করা মানহানি মামলায় বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে কলকাতা হাই কোর্টে আইনি লড়াই লড়তে নামলেন তেমনই দুই প্রাক্তন এজি। মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে আইনজীবীদের যে প্যানেল আদালতে সওয়াল করবেন, সেই দলে রয়েছেন জয়ন্ত মিত্র এবং সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। দু’জনেই রাজ্যের প্রাক্তন এজি। দু’জনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতার আমলে এজি পদ ছেড়েছিলেন। এঁদের মধ্যে পদত্যাগের পর সরাসরি সরকারের প্রতি উষ্মাপ্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল জয়ন্তকে। সৌমেন্দ্রনাথের পদত্যাগ নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছিল বিস্তর।

মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে মানহানির মামলা করেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বুধবারই সেই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের এজলাসে। শুনানির সময় দেখা যায়, মমতার হয়ে যে আইনজীবীরা এই মামলা লড়বেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন দুই এজি জয়ন্ত এবং সৌমেন্দ্রনাথও। যদিও বুধবারের শুনানিতে তাঁরা সওয়াল করেননি। রাজ্যপালের হয়ে এই মামলা লড়ছেন কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল ধীরাজ ত্রিবেদী। মামলার শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বর্তমান এজি কিশোর দত্তও।

২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, রাজ্যের এজি পদে ছিলেন জয়ন্ত। অর্থাৎ, প্রথম মমতা সরকারের মাঝামাঝি সময় থেকে দ্বিতীয় মমতা সরকারের প্রথম দিক পর্যন্ত রাজ্যের এজি ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সময় বিভিন্ন আইনি বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তাঁর মতের অমিল প্রকাশ্যে আসে। এর পর ২০১৭ সালে তৎকালীন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে সরকারের সঙ্গে মতের অমিলের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন জয়ন্ত। জানান, সরকারের সঙ্গে মতান্তর ক্রমে বাড়ছিল। বেশ কিছু বিষয়ে তাঁর পরামর্শও মানা হচ্ছিল না। বরং সরকার জানিয়ে দিচ্ছিল, তাঁর পরামর্শ গ্রহণযোগ্য নয়। এই কারণেই তিনি সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন প্রবীণ আইনজীবী।

অন্য দিকে, বর্তমান এজি কিশোর দত্তের আগে ওই পদে ছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ। তিনি রাজ্যের এজি পদে যোগ দেন ২০২১-এর ১৪ সেপ্টেম্বর। মমতা তৃতীয় বারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে পরেই। তাঁর সঙ্গেও সরকারের দূরত্ব তৈরির জল্পনা ‌ছড়িয়েছিল। এর পর ২০২৩ সালের নভেম্বরে বিদেশে থাকাকালীনই রাজ্যপাল বোসের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠান সৌমেন্দ্রনাথ। পরে জানিয়েছিলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল হিসেবে তাঁকে হয়তো সরকারের আর দরকার নেই। উল্লেখ্য, তিনি এজি পদে থাকাকালীনই নিয়োগ দুর্নীতি থেকে রেশন দুর্নীতি-সহ বহু মামলায় নাম জড়িয়েছিল শাসকদলের।

সেই দুই আইনজীবীই এ বার মমতার হয়ে মামলা লড়তে নামলেন রাজ্যপালের দায়ের করা মানহানির মামলায়।

উল্লেখ্য, এই মামলার শুনানি চলাকালীন কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি রাওয়ের নির্দেশ, রাজ্যপাল বোস সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতার মন্তব্য যে সব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলিকেও এই মামলায় যুক্ত করতে হবে। বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

রাজ্যপাল যে ওই মামলাটি করছেন, তা আগেই জানা গিয়েছিল রাজভবন সূত্রে। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে এসে রাজ্যপাল নিজেও জানান, মামলাটি দায়ের হয়ে গিয়েছে। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। রাজ্যপাল বলেন, ‘‘কেউ যদি আমার সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করেন, তবে তিনি যিনিই হোন, তাঁকে ভুগতে হবে।’’ পরে রাজ্যপালকে এ ব্যাপারে বিশদে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমার সাংবিধানিক সঙ্গী। আমি সেই হিসাবেই তাঁকে মর্যাদা দিই। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা নিয়ে মানহানির মামলা দায়ের হয়েছে। বাকিটা আদালত বিচার করবে।’’

সম্প্রতি নবান্নের একটি সরকারি বৈঠক থেকে রাজ্যপালকে আক্রমণ করেছিলেন মমতা। রাজ্যের দুই হবু বিধায়কের শপথগ্রহণ নিয়ে রাজভবনের সঙ্গে রাজ্যের যে টানাপড়েন চলছে, সে ব্যাপারে মমতা বলেছিলেন, ‘‘জেতার পরেও এক মাস ধরে আমার বিধায়কেরা বসে আছেন! রাজ্যপাল শপথ নিতে দিচ্ছেন না। মানুষ ওঁদের নির্বাচিত করেছে। ওঁর কী অধিকার তাঁদের শপথ নিতে না দেওয়ার? উনি হয় স্পিকারকে এই অধিকার (শপথগ্রহণ করানোর) দিন, নয়তো ডেপুটি স্পিকারকে দিন। আর তা না হলে নিজে বিধানসভায় যান। ওঁর রাজভবনে কেন সকলে যাবে? রাজভবনে যা কীর্তি-কেলেঙ্কারি চলছে, তাতে মেয়েরা যেতে ভয় পাচ্ছে বলে আমার কাছে অভিযোগ করেছে।’’ প্রসঙ্গত, যে দুই হবু বিধায়কের শপথগ্রহণ নিয়ে টানাপড়েন চলছে, তাঁদের এক জন মহিলা। তিনি তৃণমূলের সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। সায়ন্তিকা এক জন অভিনেত্রীও বটে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতার ওই মন্তব্যের জবাব আসে রাজভবন থেকে। রাজ্যপাল জানান, তিনি এক জন প্রশাসনিক প্রধানের কাছ থেকে এমন বিভ্রান্তিকর এবং রাজভবনের মর্যাদাহানিকর মন্তব্য শুনবেন বলে আশা করেননি। তার পরেই রাজভবন সূত্রে জানা যায়, রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার পথে হাঁটছেন। এর পরেই মঙ্গলবার হাই কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee CV Ananda Bose defamation case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE