জটিল অবস্থা থেকে অস্ত্রোপচার করে এখন সুস্থ মা-মেয়ে। প্রতীকী চিত্র।
ক’দিন বাদেই প্রসব হওয়ার তারিখ। ঠিক সেই সময় আকাশ ভেঙে পড়ল পরিবারে! ব্রেন স্ট্রোকে ডান দিক অসাড় হয়ে গেল বাড়ির মেয়ের! কী ভাবে প্রসব হবে, মেয়ে বাঁচবে কিনা, এ সব ভেবে ঘুম উড়েছিল ঝুমা সরকারের বাপের বাড়ি, শ্বশুরবাড়ির।
কিন্তু, দুই পরিবারকেই সমস্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়ে স্রেফ দিন তিনেকের প্রস্তুতিতে ঝুমা মা হলেন। কোলে এল ফুটফুটে মেয়ে। জটিল অস্ত্রোপচারটি হল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অথচ, এই হাসপাতালে কোনও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। আর ওই চিকিৎসক ছাড়া এই ধরনের অস্ত্রোপচার খুবই ঝুঁকির। কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে যে ভাবে অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসকেরা, তার তারিফ শোনা যাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরেও। বর্ধমান মেডিক্যালের সুপার উৎপল দাঁ বলেন, “এই ধরনের রোগীদের অস্ত্রোপচারের সময় রক্তক্ষরণ হঠাৎ করে বেড়ে যায়। তাতে মা ও শিশু, দু’জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক হতে পারে। খুবই জটিল অবস্থা থেকে অস্ত্রোপচার করে মা-মেয়েকে সুস্থ রাখতে হয়েছে।”
স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘প্রসূতি অবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে স্ট্রোক হওয়ায় সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার ছাড়া উপায় থাকে না। প্রসূতিকে স্থিতিশীল অবস্থায় এনে প্রসব যন্ত্রণা ওঠার অপেক্ষা করতে হয়। বর্ধমানের পরিকাঠামোয় এ ধরনের অস্ত্রোপচার ঝুঁকির তো বটেই।’’
গত সোমবার ডান দিক অসাড় অবস্থায় বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি হন বছর কুড়ির ঝুমা। বাপের বাড়িতে থাকা অবস্থায় পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন তিনি। পরীক্ষার পরে চিকিৎকরা বুঝতে পারেন, ‘ব্রেন স্ট্রোক’ হওয়ায় ওই প্রসূতির ডান দিক অসাড় হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকির বলে চিকিৎসকেরা এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করে দেন ঝুমাকে।
আরও পড়ুন:বসিরহাটে যাওয়ার পথে বিরোধীদের রুখল পুলিশ
কিন্তু, বাঁকুড়ার বড়জোড়ার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা, ঝুমার স্বামী বাসুদেব স্ত্রীকে কলকাতায় নিয়ে যেতে নারাজ ছিলেন। তিনি চিকিৎসকদের বলেন, ‘‘আপনাদের প্রতি আমার সম্পূর্ণ ভরসা রয়েছে। আপনারা চেষ্টা করলেই মা ও সন্তানকে সুস্থ রাখতে পারবেন।’’
সেনাবাহিনীর কর্মী বাসুদেবের ‘ভরসা’য় চিকিৎসকেরাও জোর পান। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অতীন হালদার, অ্যানাস্থেটিস্ট সৌমেন মণ্ডল-সহ চার জনের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গড়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বুধবার প্রসব যন্ত্রণা উঠলে গলায় পাইপ ঢুকিয়ে ঝুমাকে অজ্ঞান করা হয়। তার পরে হয় অস্ত্রোপচার।
চিকিৎসকেরা জানান, অস্ত্রোপচারের আগে বারবার স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। আপাতত ঝুমা হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে ভর্তি। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার বসাকের কথায়, “আন্তর্জাতিক পত্রিকায় এই অস্ত্রোপচারের কাহিনি প্রকাশ করতে উদ্যোগী হব।”
প্রথমবার বাবা হয়ে বাসুদেব কৃতজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রতি। বললেন, “হাসপাতালে উপরে ভরসা রেখেছিলাম। ডাক্তারদের স্যালুট!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy