ওড়িশার কটক এসসিবি মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
সত্যিটা যেন ধামাচাপা না পড়ে যায়— ট্রেন দুর্ঘটনার পরে দ্বিতীয় বার ওড়িশায় গিয়ে এই দাবিই তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওড়িশার বাহানাগায় ট্রেন দু্র্ঘটনার পর দিনই দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন মমতা। দ্বিতীয় দফায় ওড়িশায় গিয়ে মঙ্গলবার তিনি কটকে গিয়েছিলেন সেখানকার হাসপাতালে ভর্তি এ রাজ্যের বাসিন্দাদের দেখতে। ইতিমধ্যে এই দুর্ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে সিবিআই। সে প্রসঙ্গেই সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, “আমি চাই সত্যিটা সামনে আসুক। আসল ঘটনা যেন ধামাচাপা পড়ে না যায়। এত লোকের মৃত্যু হয়েছে। তাই এ সব নিয়ে এখন বিতর্ক করার সময় নয়।” বারুইপুরে এ দিনই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘সিবিআই তদন্তে কিছু হবে না। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত হোক।’’
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন, রেল দুর্ঘটনায় তৃণমূলের হাত রয়েছে। সে প্রসঙ্গ এ দিন এড়িয়ে যান মমতা। তবে ‘পরিযায়ী এক্সপ্রেস’ নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষের প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেত্রীর ব্যাখ্যা, “পরিযায়ী শ্রমিক বলে অসম্মান করা উচিত নয়। তাঁরা রোজগারের জন্য যান। কেউ বাংলা থেকে ওড়িশা যান, কেউ ওড়িশা থেকে রাজস্থান, আবার কেউ রাজস্থান থেকে বাংলায় কাজে যান। সবাই তো ভারতীয়!’’
বালেশ্বর হাসপাতালে এ দিনই আহতদের দেখতে গিয়েছিলেন বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বাংলায় তো চিকিৎসা হয় না। এখানকার ৯০% মানুষ চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ ভারতে যান। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের ভাইপোও আমেরিকায় গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য।’’
মমতা এ দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ পৌঁছন কটক এসসিবি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে এই মুহূর্তে ভর্তি বাহানাগা রেল দুর্ঘটনার ১৩৯ জন জখম যাত্রী। তাঁদের মধ্যে ৫১ জন পশ্চিমবঙ্গের। তাঁদের মধ্যে ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে মুখ্যমন্ত্রী মালদহের সেবিকা মণ্ডল, তাঁর স্বামী পরিতোষ মণ্ডল, মুর্শিদাবাদের সাহিন আলম, শেখ হায়দার-সহ বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেন। পরে হাসপাতালের সভাঘরে জখমদের পরিজন ও চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের কাজের প্রশংসা করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। মমতা বলেন, “বাংলা ও ওড়িশা ভাল বন্ধু। দুই প্রশাসন হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।’’ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরকে ‘উঠল বাই তো কটক যাই’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের ১০৩ জনের দেহ শনাক্ত হয়েছে। ওড়িশার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯৭ জন। এখনও নিখোঁজ রাজ্যের ৩১ জন যাত্রী। দুর্ঘটনায় যাঁদের অঙ্গহানি হয়েছে বা একেবারে অক্ষম হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের এক জনকে বাংলার সরকার হোমগার্ডের চাকরি দেবে বলে ঘোষণা করেছে। জখম এক জনের পরিবারের এক মহিলা এ দিন জানতে চান, মেয়ে হয়ে তিনি পুলিশে কাজ করবেন কী ভাবে। মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, “কত মহিলা আমাদের পুলিশে সম্মানের সঙ্গে চাকরি করছে। মানসিক ভাবে শক্ত হতে হবে।”
ওড়িশায় গিয়ে ভুবনেশ্বর এমসে এ দিন গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও শশী পাঁজা। সেখানে ভর্তি রয়েছেন এ রাজ্যের বেশ কয়েক জন জখম ট্রেন যাত্রী। ভুবনেশ্বর এমসে যে ১৯৩টি দেহ আনা হয়েছিল, তার মধ্যে ১০৮টি এখনও শনাক্ত করা যায়নি। চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘শনাক্তকরণের কাজ বা পরিজনেদের দেহ দেওয়ার ক্ষেত্রে কী করা হচ্ছে, সেটাই দেখছি।’’ শশীও দাবি করেছেন, ‘‘এখানে অশনাক্ত রয়েছে ১০৮ জনের দেহ। আর বাংলা থেকে এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ ৩১ জন। এই দু’টো তালিকা মিলিয়ে দেখে কাজ এগোতে হবে।’’
বিকেলে ওড়িশা থেকে মেদিনীপুরে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমেই যান মেদিনীপুর মেডিক্যালে। সেখানেও করমণ্ডল দুর্ঘটনায় ৬১ জন জখম ভর্তি আছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর আশ্বাস, ‘‘যে-ই সুস্থ হবে, যাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, তাকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হবে তার নিজের জেলায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy