শুভেন্দুর গ্রেফতারির দাবিতে সিজিও কমপ্লেক্সে কুণালদের বিক্ষোভ
সুদীপ্ত সেনকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করে টাকা নিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। আদালতে সারদাকর্তার সুদীপ্তের দেওয়া চিঠি এবং আদালত চত্বরে তাঁর মন্তব্যের ভিডিয়োকে ‘হাতিয়ার’ করে বিরোধী দলনেতার গ্রেফতারের দাবিতে রাজ্য জুড়ে পথে নামার কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল। যা থেকে স্পষ্ট যে, শুভেন্দু-প্রশ্নে ক্রমশই সুর চড়াচ্ছে রাজ্যের শাসকদল। তাদের প্রশ্ন— বিজেপিতে গেলেই কি কেউ ‘সাফ’ হয়ে যান! সকলকে এজেন্সি ডাকছে। নারদা-সারদা মামলায় শুভেন্দুকে ‘ছাড়’ কেন?
শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার কলকাতার উপকণ্ঠে সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্স, হলদিয়া এবং কাঁথিতে যুগপৎ সভা এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাসকদল। সিজিও কমপ্লেক্সের অদূরে জমায়েত থেকে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সারদা কেলেঙ্কারিতে শুভেন্দুও জড়িয়ে। তাঁকে কেন গ্রেফতার করছে না সিবিআই? সুদীপ্ত সেনের অভিযোগ, শুভেন্দু লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন! তাঁর চিঠিতেই সেকথা রয়েছে। এখন কোথায় গেল সিবিআই!’’
বস্তুত, শুভেন্দুর পাশাপাশি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে রয়েছেন দাবি করে তাঁকেও গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছে তৃণমূল। শুভেন্দু-হিমন্তের উদাহরণ তুলে ধরে তাদের বক্তব্য— বিজেপিতে গেলেই সকলের অভিযোগ ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাচ্ছে! বিজেপি কি ‘ওয়াশিং মেশিন’?
সিজিও কমপ্লেক্সের সভা থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’র অভিযোগ তুলেছেন বালিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়। বাবুল বলেন, ‘‘সকলকে এজেন্সি ডাকছে। শুভেন্দুকে ছাড় কেন?’’
হলদিয়া ও কাঁথিতে মিছিল-জমায়েত করে তৃণমূল। তবে সবচেয়ে বড় জমায়েতটি হয় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের অদূরে। সোমবার দুপুরে ইডি-সিবিআই দফতর সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে মঞ্চ বেঁধে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল নেতারা। সভামঞ্চে কুণাল ও বাবুল-সহ হাজির ছিলেন যুব তৃণমূলের নেত্রী সায়নী ঘোষ এবং যুবনেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। বক্তৃতায় কুণাল বলেন, ‘‘সিবিআই অফিসাররা খারাপ নন। আমি সিবিআইয়ের বিরুদ্ধেও নয়। কিন্তু সিবিআইকে যে ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে, যে ভাবে বেছে বেছে তৃণমূল নেতাদের নিশানা করা হচ্ছে, আমি তার বিরুদ্ধে। সিবিআই অফিসারেরা জানেন, সারদার পিছনে কারা রয়েছেন। তাই তো তড়িঘড়ি দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের পায়ে পড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। সারদাকর্তাও নিজে বলেছেন, শুভেন্দু ব্ল্যাকমেল করে টাকা নিত। কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না?’’
শুভেন্দুকে বিঁধে বাবুল বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীকে ক্যামেরার সামনে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। সারদা মামলায় তাঁর নাম উঠে এসেছে। তাই অন্যের বিরুদ্ধে আঙুল তোলার আগে আয়নায় নিজের মুখ দেখুন শুভেন্দু।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিজেপি সিবিআইকে পরিচালিত করছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সিবিআইকে ব্যবহার করছে। বিজেপির অভিসন্ধি সম্পর্কে সব জেনেছি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন। সিবিআই যখন সারদা মামলায় সবাইকে ডেকেছে, তা হলে কেন শুভেন্দুর অধিকারীকে ডাকবে না?’’
বিরোধী দলনেতার নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি এবং হলদিয়াতেও বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। কাঁথিতে শাসকদলের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন মন্ত্রী অখিল গিরি। হলদিয়ার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ছিলেন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া এবং কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা। শিউলি বলেন, ‘‘নারদার টাকা কাগজে মুড়ে পকেটস্থ করতে দেখা গিয়েছে যাঁকে, তাঁকে কেন গ্রেফতার করা হবে না? হলদিয়াবাসী তো সবই দেখেছিলেন টিভিতে!’’ আর কাঁথির সভামঞ্চ থেকে অখিল-পুত্র সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘‘সিবিআই নিরপেক্ষ তদন্ত করছে না। বেছে বেছে তৃণমূল নেতাদের ফাঁসানো হচ্ছে। গরিবের টাকা যাঁরা মেরেছেন, তাঁরা আজ বিজেপিতে নাম ঢুকিয়ে, ভাজপা মেশিনে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে গিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’’ বস্তুত, কাঁথিতে শুভেন্দুর বাড়ি ‘শান্তিকুঞ্জ’-এর কাছাকাছিও মিছিল নিয়ে গিয়েও শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়।
পক্ষান্তরে, শুভেন্দুকে তৃণমূলের দাবি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পায়ে কাঁটা ফুটেছে। এখন কষ্ট তো হবেই! ৪০ লক্ষ বাড়িতে দিদির নাম লেখা স্টিকার তুলতে হচ্ছে!’’ শুভেন্দু বলতে চেয়েছেন ‘বাংলা আবাস যোজনা’র কথা। যাতে সম্প্রতি টাকা দেওয়া বন্ধ করে নবান্নকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের দাবি, ওই প্রকল্পকে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ বলে ঘোষণা এবং অভিহিত করতে হবে। নইলে তারা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেবে। যার প্রেক্ষিতে সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, ‘‘বাংলা আবাস যোজনাই চলবে। দরকারে দিল্লি যাব!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy