জগদীপ ধনখড় এবং সুখেন্দুশেখর রায়।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্ঘাত বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্ঘাত এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সংবিধানে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অবকাশ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই রাজ্যপালের আনুষ্ঠানিক নিয়োগকর্তা রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদপত্র দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু সেই চিঠির প্রাপ্তিস্বীকারও করা হয়নি বলে তৃণমূলের দাবি। ফলে এবার বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে শুরু করেছে তারা। প্রথম বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ‘সাবস্টেনটিভ মোশন’ বা প্রস্তাব আনার কথা। ওই প্রস্তাবটি লোকসভা বা রাজ্যসভায় যে কোনও সাংসদ আনতে পারেন। প্রস্তাব গৃহীত হলে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে। এই প্রস্তাবের উল্লেখ রয়েছে রাজ্যসভা ও লোকসভার রুলবুকে। এমনই জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা উপ দলনেতা সুখেন্দুশেখর রায়।
দ্বিতীয় যে বিকল্পের কথা ভাবা হয়েছে, সেটি হল রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সংসদে ‘ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব’ আনা। সেটিও কোনও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদী পদক্ষেপ’ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। তৃণমূলের শীর্ষনেতাদের দাবি, দেশের সংবিধানে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ‘ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব’ আনার পরিসর রয়েছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, রাজ্যপাল যেহেতু রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান, তাই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার অধিকার সংবিধানে দেওয়া হয়নি। তাই বিকল্প পথে তাঁর বিরুদ্ধে ‘ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব’ আনা যেতে পারে। নিয়মানুসারে ওই প্রস্তাবও লোকসভা বা রাজ্যসভা— সংসদের যে কোনও কক্ষেই আনা যেতে পারে। প্রসঙ্গত, কয়েক বছর আগেই রাজস্থানের রাজ্যপাল কল্যাণ সিংহের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ব্যবস্থার মধ্যে ‘সাবস্টেনটিভ মোশন’ আনা হয়েছিল। কল্যাণের একটি মন্তব্যের বিরুদ্ধে ওই প্রস্তাব নিয়েছিলেন সুখেন্দুশেখরই। প্রকাশ্য একটি সভায় দেশের জাতীয় সংগীত প্রসঙ্গে কল্যাণের মন্তব্য ছিল, ‘‘পঞ্চম জর্জকে খুশি করতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জনগণমন গানটি লিখেছিলেন। তাই জাতীয় সংগীত হিসেবে সেটি বাদ দেওয়া হোক।’’ তবে প্রস্তাব আনা হলেও বিষয়টি সংসদে আলোচিত হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ধনখড়ের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা হলেও তা নিয়ে আলোচনা হবে কি না, তা লোকসভার স্পিকার বা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানই ঠিক করবেন। তবে প্রস্তাব আনা হলে তা তৃণমূলের তরফে একটি ‘উদ্যোগ’ হিসেবে সংসদের কার্যবিবরণীতে নথিভুক্ত থাকবে।
বৃহস্পতিবার সুখেন্দুশেখর বলেন, ‘‘দেশে যে সব সাংবিধানিক সংস্থা রয়েছে, সেগুলিকে বলা হয় কনস্টিটিউশনাল অথরিটি। রাজ্যপাল পদটি একটি কনস্টিটিউশনাল অথরিটি। সংবিধান কনস্টিটিউশনাল অথরিটির হাতে অনেক ক্ষমতা দিয়েছে। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণের কল্যাণের জন্য ওই ক্ষমতাগুলির ব্যবহার করতে হবে। অপব্যবহার করার জন্য নয়।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমি রাজ্যপাল বলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আমাকে যা খুশি করার অধিকার দেয়নি। আমি সবকিছুর ঊর্ধ্বে, ব্যাপারটা এমন নয়। আইন ও সংবিধান সবকিছুর ঊর্ধ্বে। তাই আইন ও সংবিধান মেনে চলতে সাংবিধানিক পক্ষগুলি দায়বদ্ধ। এর অন্যথা হলে গণতান্ত্রিক ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হবে। সমালোচনা হবে। কোনও সাংবিধানিক পক্ষ সংবিধান লঙ্ঘন করলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হওয়াটাই সাংবিধানিক পদ্ধতি। তাই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক পদক্ষেপ নেওয়াই যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy