প্রীতি সেনগুপ্ত। ফাইল চিত্র
অস্ত্রোপচার করে নিজের শরীরের রূপান্তর করেছেন। কিন্তু ফেলে আসা স্কুলজীবনের ‘রূপান্তর’ চান না তিনি। তাই বন্ধুদের ফিরে পেতে স্কুলের প্রাক্তনী সংসদের সদস্য হতে চেয়েছিলেন প্রীতি সেনগুপ্ত।
কিন্তু প্রীতি যে পড়েছেন ছেলেদের স্কুলে! কলকাতার টাকি বয়েজ হাইস্কুলে।
নাম তখন প্রীতি ছিল না অবশ্যই। তাঁর আবেদন পেয়ে ধন্দে পড়েছিল টাকি বয়েজের প্রাক্তনী সংসদ (টিবাক)। কিন্তু বেশ কয়েক দফা আলোচনার পরে প্রীতিকে স্বাগত জানানোরই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। আপ্লুত প্রীতি জানিয়েছেন, আজ, রবিবার প্রায় বছর কুড়ি পরে নিজের স্কুলে আসবেন তিনি।
আরও পড়ুন: পুজোর বইয়ে নেই, তবু বইয়েই বেঁচে বুদ্ধ
বছর সাঁইত্রিশের দিল্লিবাসী প্রীতি বলছিলেন, ‘‘জানি না, সকলে আমাকে কী ভাবে নেবেন! তবে বন্ধুদের ফিরে পেতে চাই। রবিবার অনেক দিন পরে স্কুলে যাব, এটা ভেবেই আমি ভিতরে ভিতরে উদ্বেল।’’ স্কুলের প্রাক্তনী সংসদের সম্পাদক পার্থসারথি সাহা বলছিলেন, ‘‘প্রাক্তনীদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেব প্রীতিকে। ওঁরও যাতে কোনও সঙ্কোচ না হয়, তাই সকলের সামনেই খোলাখুলি কথা বলে পরিস্থিতিটা সহজ করে নেওয়ার কথা ভেবেছি। ওঁর হাতে সাম্মানিক সদস্যপদও তুলে দেওয়া হবে।’’ টাকি বয়েজ থেকে মাধ্যমিক পাশের পরে আমহার্স্ট স্ট্রিটের সিটি কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক হন প্রীতি। পরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্মে স্নাতকোত্তর। এখন তিনি দিল্লিতে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের একটি স্কুলের স্পেশ্যাল এডুকেটর। বাগবাজারে বৃদ্ধ বাবা-মাকে এখনও জানাননি তাঁর এই রূপান্তরের কথা। প্রীতি বোঝালেন, ‘‘ছোট থেকেই আমি অন্য রকমের পুরুষ। লম্বা চুল, পোশাকও মেয়েদের মতো। বাড়িতে বাবা-মায়ের সামনে কুর্তা-পাজামা পরি। ওঁরা খুবই অসুস্থ। জানলে মানতে পারবেন না।’’
রূপান্তরকামী প্রীতিকে স্কুলের প্রাক্তনী সংসদে নেওয়ার এই নজিরকে সাধুবাদ দিচ্ছেন অনেকেই। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ওঁরা প্রতিনিয়ত দেহ-মন নিয়ে লড়াই করছেন। ওঁদের স্বাচ্ছন্দ্য দিতে সমাজে-পরিবারে গ্রহণ করতেই হবে। বিচ্ছিন্ন করে রাখলে তা দুর্ভাগ্যজনক।’’ সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্রের মতে, ‘‘এই পদক্ষেপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। স্কুলে এই ধরনের ছেলেমেয়েদের দিকে একটু বাড়তি নজর দিলে সমাজ এগোবে।’’ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রাম বলছেন, ‘‘প্রীতি যে রূপান্তরের লজ্জা, সঙ্কোচ কাটিয়ে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন, এই সাহসটাও শেখার মতো।’’
প্রীতির মতোই পুরুষ থেকে নারী হওয়া মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় এখন কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ। মানবী বললেন, ‘‘আমার স্কুলের এ বার ১৫০ বছর। আমাকেও আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে স্কুল। প্রীতির সঙ্গে মিলে গেল বিষয়টা। ভাল লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy