শ্রীগুরু বিদ্যা মন্দিরের মাঠে জমা করা হচ্ছে সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল। নিজস্ব চিত্র।
দার্জিলিঙের পরে এবার শিলিগুড়ি। পাহাড়ে গিয়ে বিমল গুরুঙ্গকে যথেষ্ট বেগ দেওয়ার পরে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য যেন অশোক ভট্টাচার্য। তাই প্রায় চার দিন পাহাড়ে কাটিয়ে গুরুঙ্গের কপালে ভাঁজ ফেলার পরে রবিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় সুকনায় পৌঁছতেই সরগরম হয়ে উঠেছে শিলিগুড়ি। সরকারি কর্মসূচি ও দলীয় বৈঠকের মাধ্যমে কী ভাবে শিলিগুড়িতে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকা অশোকবাবুকে কোণঠাসা করতে চান তৃণমূল নেত্রী তা নিয়েই নানা মহলে চলছে আলোচনা। বিরোধী শিবিরের তরফে তোলা হচ্ছে বিস্তর অভিযোগ। জমছে আশঙ্কারও মেঘও।
কারণ, আজ, সোমবার বিকেলে কলকাতায় ফেরার আগে দুপুরে শুধু শিলিগুড়ি শহর ও লাগোয়া গ্রামাঞ্চলের (সব মিলিয়ে ৩টি বিধানসভা এলাকা) ২৫ হাজার পড়ুয়াকে সাইকেল বিলি করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সবুজ সাথী প্রকল্পের আওতায় সাইকেল বিলির অনুষ্ঠান হবে শিলিগুড়ি পুরসভার আওতায় থাকা চম্পাসারি মোড়ে। সে জন্য শহরের নানা স্কুলে প্রায় ছুটির আমেজ। সরকারি তরফে প্রায় ৪০০ বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে পড়ুয়াদের অনুষ্ঠানে যাতায়াত করানোর জন্য। শুধু তাই নয়, কয়েক হাজার পড়ুয়া নতুন সাইকেল নিয়ে চম্পাসারি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম পর্যন্ত ‘সাইকেল মিছিল’ও করবে। সব মিলিয়ে শহর ও গ্রামের পড়ুয়ারা অনেকেই নতুন সাইকেল হাতে পাওয়ার জন্য উন্মুখ। যেখানে সাইকেল মজুত করা হয়েছে, সেই চম্পাসারির শ্রীগুরু বিদ্যামন্দিরের মাঠে সাইকেল দেখতে উঁকি মারছে পড়ুয়ারা। গ্রাম থেকে টোটো, অঠোয় চড়ে সাইকেল দেখতে হাজির হচ্ছেন অভিভাবকদের অনেকেই।
সাইকেল বিলি নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার খবর পেয়ে খুশি তৃণমূল শিবির। কারণ, যে ৩টি বিধানসভা এলাকার পড়ুয়াদের সাইকেল বিলি করা হবে তার মধ্যে দুটি ফাঁসিদেওয়া ও মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি রয়েছে কংগ্রেসের দখলে। শিলিগুড়ি বিধানসভা তৃণমূলের দখলে থাকলেও বিধানসভা ভোটের পরে প্রথমে পুরভোটে জিতে মেয়র হয়েছেন সেই পরাজিত বাম বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। পরে তাঁর নেতৃত্বে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদও দখল করেছেন বামেরা। তাই হয়তো সাইকেল বিলি ঘিরে উন্মাদনা দেখে তৃণমূল নতুন করে আশায় বুক বাঁধার ভরসা পাচ্ছেন।
পক্ষান্তরে, সাইকেল বিলি নিয়ে স্কুলে-স্কুলে উন্মাদনা বাম ও কংগ্রেস শিবিরে কিছুটা হলেও উদ্বেগ রয়েছে। বামেদের একাংশের আশঙ্কা, হাতে-গরম সাইকেল অবশ্যই পড়ুয়ার পরিবারে একটা প্রভাব ফেলবে। সে জন্য সাইকেল বিলির আড়ালে যে রাজনীতি রয়েছে তা ফলাও করে প্রচার করছেন বামেরা।
যেমন, সিপিএম শিবির অভিযোগ করেছে, সাইকেল বিলির সরকারি অনুষ্ঠান থেকে যদি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার লক্ষ্য না থাকত তা হলে মেয়র অশোকবাবুকে ডাকা হতো। খোদ অশোকবাবু বলেছেন, ‘‘এ সব যে লোক দেখানো ব্যাপার তা অনেকেই বোঝেন। সৌজন্য বোধ থাকলে পুর এলাকায় সরকারি অনুষ্ঠান করার আগে আমাদের জানানো হতো।’’ যদিও দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছে, মেয়রকে চিঠি পাঠিয়ে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। যা নিয়ে মেয়র জানান, ওরকম চিঠি তাঁর হাতে পৌঁছয়নি।
বস্তুত, দার্জিলিং পাহাড় থেকে সমতল শিলিগুড়ি পর্যন্ত যে তিনি এতটুকুও জমি ছাড়তে রাজি নন তা সাম্প্রতিক জেলা সফরে বারেবারেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী। গত ২১ জানুয়ারি শিলিগুড়িতে পৌঁছে ‘বেঙ্গল সাফারি’র উদ্বোধন করেছেন তিনি। প্রায় ৮০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আরও ১৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ওই প্রকল্প ঘিরে শিলিগুড়ি, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি (উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের নিবাচনী এলাকা) সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী। উপরন্তু, শিলিগুড়ি শহর ও লাগোয়া গ্রামাঞ্চলের মানুষকে আরও কাছে টানার চেষ্টা জোরদারও করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সে জন্যই ফেরার দিন শিলিগুড়িতে সবুজ সাথী প্রকল্পের কর্মসূচির অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়ে দেন তিনি।
এমনকী, সরকারি সূত্রের খবর, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মাঝেমধ্যেই বিমান বাতিল হচ্ছে দেখে কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল বিলির অনুষ্ঠান একদিন আগে করে চলে যাওয়াই ভাল হবে। কারণ, ২৫ জানুয়ারি উড়ান বাতিল হলে সে দিন কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনে থাকতে পারবেন না মুখ্যমন্ত্রী। পর দিন প্রজতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানেও থাকতে হবে তাঁকে। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী কারও অনুরোধ রাখতে রাজি হননি। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, প্রয়োজনে শিলিগুড়ি থেকে ভিডিও-কনফারেন্সে কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন করবেন।
রাতে পদাতিক ধরে পরদিন সকালে শিয়ালদহ তেকে সরাসরি প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তবুও শিলিগুড়ির পড়ুয়াদের সাইকেল বিলির অনুষ্ঠানের হেরফের করতে চান না তিনি।
সব মিলিয়ে পাহাড়ের পরে উত্তরের সমতলে তাঁর অন্যতম লক্ষ্য যে শিলিগুড়ি সেটাই যেন আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে দলনেত্রীর লক্ষ্য পূরণে আখেরে গৌতমবাবুরা সফল হবেন, নাকি ফের জয় ছিনিয়ে নেবেন সেই অশোক, সেটা সময়ই বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy