প্রতীকী ছবি
জনস্বাস্থ্যের দফারফা তো হচ্ছেই। সেই সঙ্গে সরকারের প্রাপ্য রাজস্বেরও ক্ষতি করছে চোলাই মদ। এই দ্বিমুখী ক্ষতির মোকাবিলায় চোলাইয়ের রমরমা রুখতে মহুয়াকে হাতিয়ার করছে রাজ্য সরকার। যে-মহুয়ার গন্ধ দিয়ে পানরসিকদের মন মজায় চোলাই, দেশি মদে সেই মহুয়ার গন্ধ যুক্ত করে এক ঢিলে দুই লক্ষ্য ভেদ করাই সরকারের উদ্দেশ্য। দুই লক্ষ্য মানে চোলাই থেকে আসক্তদের মুখ ঘোরানো এবং ভাঁড়ার ভরানো।
চোলাই, জাল বা অবৈধ ভাবে সংগ্রহ করা মদের রমরমা দীর্ঘদিন ধরেই ভাবাচ্ছে রাজ্য সরকারকে। দেশি-বিদেশি মদের দাম অনেকটাই বেড়ে যাওয়ায় চোলাই, জাল বা অবৈধ ভাবে আনা মদের বিক্রি বেড়েছে। এটা জনস্বাস্থ্যের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, ধাক্কা দিচ্ছে সরকারের রাজস্ব আদায়েও। এই সব সমস্যার দরুন নতুন একটি দেশি মদ বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে আবগারি দফতর। বিশেষ করে যেখানে চোলাইয়ের রমরমা বেশি, সেই সব এলাকার জন্যই নতুন মদের বন্দোবস্ত। এই নিয়ে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সবিস্তার আলোচনা সেরে ফেলেছেন আবগারি কর্তারা।
প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, বাজারচলতি ৬০ এবং ৮০ ডিগ্রি দেশি মদের পাশাপাশি নতুন মদটি হবে ৭০ ডিগ্রির। আকর্ষণ বাড়াতে মহুয়ার গন্ধযুক্ত ওই মদের দাম চোলাইয়ের থেকে কম রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। আবগারি কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ৬০ ডিগ্রির (প্রধানত শহর ও গ্রামাঞ্চলের জন্য) দেশি মদের ৩০০ মিলিলিটারের দাম ৬০ টাকা, ৬০০ এমএল ১২০ টাকা। প্রধানত আদিবাসীদের জন্য ৮০ ডিগ্রির মদটির দামও কাছাকাছি। চোলাইয়ের দাম ৬০-৭০ টাকার মধ্যে থাকে। সেই জায়গায় নতুন ৭০ ডিগ্রির মদের ৩০০ মিলিলিটারের দাম হবে কমবেশি ২৭ টাকা এবং ৬০০ মিলিলিটারের দাম পড়বে প্রায় ৫৪ টাকা। আবগারি দফতর আশা করছে, বাজারে এটিকে জনপ্রিয় করতে পারলে এক দিকে চোলাই মদের রমরমা ঠেকানো যাবে, তেমনই অনাদায়ি রাজস্বের বেশির ভাগটাই পাবে রাজ্য সরকার।
নতুন মদটিতে মহুয়ার গন্ধ যুক্ত করার পরিকল্পনা কেন? এক কর্তা বলছেন, “চোলাই মদের আকর্ষণ তার মহুয়ার মতো গন্ধে। তাই চোলাইয়ে যাঁরা আসক্ত, তাঁরা অন্য কিছু পরখ করতে চান না। তাই পরিকল্পিত নতুন মদেও মহুয়ার গন্ধ রাখা কার্যত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাতে অন্য কোনও গন্ধ যুক্ত করতে চাইলে দফতরের আগাম অনুমতি লাগবে।”
ওই কর্তা আরও জানাচ্ছেন, চোলাই, জাল বা সরকারের কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে সংগ্রহ করা মদ বিক্রি করে বিক্রেতারা লাভবান হন। বিক্রির বিপুল রাজস্ব থেকে
বঞ্চিত হয় সরকার। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষার তাগিদের পাশাপাশি আর্থিক কারণেও চোলাই আটকানো সরকারের কাছে অগ্রাধিকারের মতোই। লাইসেন্সধারী মদ বিক্রেতারা যাতে বৈধ মদের জোগান বাড়াতে পারেন, সে-দিকে জেলা প্রশাসনগুলিকেও নজর রাখতে বলেছে দফতর। বলা হয়েছে, চোলাই মদের ক্ষেত্রে হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম ও ঝাড়গ্রামের উপরে বিশেষ নজর দিতে হবে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে। কর ফাঁকি দেওয়া মদের গতিবিধি রুখতে জোর দিতে হবে দার্জিলিং, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, পশ্চিম বর্ধমান বাঁকুড়ার মতো জেলায়।
আবগারি কর্তারা বিভিন্ন জেলা প্রশাসনকে বলেছেন, চোলাই, জাল বা অবৈধ মদের জোগানের উপরে ব্যাপক নজরদারি চালাতে হবে। মদের দোকানে বিক্রিবাটার প্রকৃতি, কোনও বিশেষ মদের প্রতি গ্রাহকদের চাহিদা, সর্বাধিক রাজস্ব নিশ্চিত করতে কী ভাবে বৈধ বিক্রি বাড়ানো যায়— প্রতি সপ্তাহে তার সবিস্তার তথ্য দিয়ে রিপোর্ট পাঠাতে হবে দফতরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy