—ফাইল চিত্র।
রাস্তা দিয়ে কোনও তৃণমূল কর্মী হেঁটে গেলে সাধারণ মানুষ যেন তাঁকে দেখিয়ে মহত্তের উদারহণ দিতে পারে। দলের কর্মীদের এমনই হতে হবে, বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একুশের মঞ্চ থেকে সদ্য এই বার্তা চারিয়ে দিয়েছেন নেত্রী। বলা ভাল, বার্তাটা চারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
সফল হয়েছেন কি?
রাজ্যের নানা প্রান্তে একটু নজর রাখলেই স্পষ্ট, নেত্রীর বার্তা কানে ঢোকেনি কর্মীদের অনেকেরই। কখনও কোন্নগরে বিডিও-র পরিবারকে মারধর। কখনও জৎবল্লভপুরে পঞ্চায়েত সমিতির বর্তমান সভাপতির উপরে হামলা প্রাক্তন সভাপতির। কখনও আবার হাবড়ায় কাউন্সিলরের সঙ্গে বচসায় জড়ানোর ‘অপরাধে’ কাউন্সিলর-অনুগামীদের মারে রক্তাক্ত মহিলা। তো কখনও কামারহাটিতে দলীয় কর্মীর উপরেই হামলা কাউন্সিলরের। কেশপুরের মহিষদায় সিপিএম হওয়ার ‘অপরাধে’ খোদ তৃণমূল সাংসদের পরিজনকে চাষে বাধা দেওয়ার ঘটনা তো রয়েইছে।
বোঝাই যায়, নেত্রীর বার্তায় কাজ হয়নি। এর দু’টি কারণ থাকতে পারে। হয় নেত্রীর বার্তা সর্বত্র পৌঁছয়নি, অথবা সে বার্তাকে অনেক কর্মীই এখনও গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
প্রথম কারণটি সত্য হওয়া প্রায় অসম্ভব। একুশের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সব বার্তা চারিয়ে দিয়েছিলেন, তা দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে ছায়াপাত ঘটাতে শুরু করেছে। বাংলার প্রান্তে প্রান্তে মমতার বার্তা পৌঁছয়নি, এ কথা মেনে নেওয়া শক্ত।
অর্থাৎ, দ্বিতীয় কারণটি সত্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলের কর্মীদের জন্য যে আদর্শ আচরণ বিধি বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তা মানতে অনেকেই প্রস্তুত নন। নেত্রী কিন্তু শুধু বার্তা দিয়েই ক্ষান্ত হননি। প্রশাসনকেও কঠোর করেছেন। অপরাধ দেখলেই উপযুক্ত পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন। শাসক দলের বেশ কয়েক জন নেতা-কর্মী ইতিমধ্যেই সে আঁচ অনুভবও করেছেন।
প্রশ্ন হল, তা সত্ত্বেও এই অবাধ্যতা কেন? কেন এই বিশৃঙ্খলা? কেন অনুশাসনহীনতা? নেত্রীর নির্দেশ মানার প্রয়োজন বোধ করছেন না কর্মীরা? শত বিতর্ক সত্ত্বেও দল এত বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরার পর আত্মবিশ্বাস কি ঔদ্ধত্যে পর্যবসিত হচ্ছে? কোনও বিতর্কেই আসন টলবে না, এমন কথাই কি ভাবতে শুরু করেছেন তৃণমূল কর্মীদের কোনও একটা অংশ?
নেত্রীর বার্তা অগ্রাহ্য করেও পাড়ায় পাড়ায় মাতব্বরি চালিয়ে যেতে তৎপর যে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা, তাঁদের জেনে রাখা উচিত, নির্বাচনে জয়ের কারিগর তাঁরা নন। গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগে জেরবার তৃণমূল দলকে ক্ষমতায় ফেরানোর জন্য রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেই নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জয় এসেছে। কিন্তু সেই জয়ের সুবাদে রাজ্যের প্রান্তে প্রান্তে যাঁরা মাতব্বরি চালাচ্ছেন বা চালিয়ে যাবেন ভাবছেন, জয়টা তাঁদের নয়। জয়টা একক, একটি মাত্র নামের জয়। তিনি স্বয়ং যখন সাবধান হয়ে যাওয়ার বার্তা দিচ্ছেন, তখন তা মেনে চলা জরুরি। তা না হলে নেত্রীর ভাবমূর্তিটাও কিন্তু অবিকৃত থাকবে না। সে রকম কোনও একটা দিন যদি আসে, তা হলে নেত্রীর জন্য তা যতটা ক্লেশের হবে, তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হবে এই স্বঘোষিত মাতব্বরদের জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy