শাসকের অনুকূলে ফল ৬৮-৮। ফাইল চিত্র।
‘নন্দকুমার মডেল’ কাজে এল না মহিষাদলে। নিচুতলায় বাম ও বিজেপি আসন সমঝোতা হলেও বড়সড় ব্যবধানেই সমবায়ের দখল নিলেন তৃণমূল সমর্থিতেরা। শাসকের অনুকূলে ফল ৬৮-৮।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় ক’দিন আগেই নন্দকুমারের বহরমপুর কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের ভোটে বিজেপি ও বাম সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে আসন সমঝোতা হয়েছিল বলে দাবি। ওই সমবায়ে সব আসনেই জেতে সেই বিরোধী মঞ্চ। তখন সিপিএমের তরফে বাম প্রগতিশীল প্রার্থীরা জিতেছেন দাবি করা হলেও পঞ্চায়েত ভোটের আগে চর্চায় উঠে আসে নিচুতলায় বাম-বিজেপি বোঝাপড়া। তারপর ফের শুভেন্দুর জেলাতেই মহিষাদল ব্লকের ইটমগরা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কেশবপুর জালপাই রাধাকৃষ্ণ কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির পরিচালন সমিতির নির্বাচনেও বিজেপি এবং সিপিআই সমর্থিতেরা ‘সংযুক্ত কৃষক মোর্চা’ গড়ে প্রার্থী দেন।
কেশবপুরের ওই সমবায়েই ভোট ছিল রবিবার। সকাল ১০টা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। বিকেল চারটেয় শুরু হয় ভোট গণনা। গণনা শেষে দেখা যায়, যে ৭৫টি আসনে ভোটাভুটি হয়েছিল, তার মধ্যে ৬৭টিতেই জিতেছেন তৃণমূল সমর্থিতেরা। ৮টি আসন পেয়েছে বাম-বিজেপির জোট। ৭৬ আসনের এই পরিচালন সমিতির একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই জিতেছিলেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থী।
কিন্তু কেন মহিষাদলে সফল হল না ‘নন্দকুমার মডেল’?
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা দলের তরফে জেলায় বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কুণাল ঘোষের মতে, ‘‘রাম-বামের প্রকাশ্যে জোট ওদের রাজনৈতিক মুখোশ খুলে দিয়েছে। মানুষের সত্যিটা বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি।’’ তৃণমূল নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যেরও ব্যাখ্যা, ‘‘বাম আর রাম যে একই কয়েনের এপিঠ, ওপিঠ তা সবাই জানে। আমরা বলে আসছি, ওরা প্রমাণ করে দিচ্ছে।’’
বিরোধী শিবিরের অবশ্য অভিযোগ, এই নির্বাচনের আগে উপঢৌকন দেওয়া থেকে ভয় দেখানো, ভোটারদের প্রভাবিত করতে সবই করেছে শাসকদল। মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা তথা বিধানসভার বিজেপি প্রার্থী বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষের রায় মাথা পেতে নিচ্ছি। তবে তৃণমূল ভোটারদের আর্থিক সহযোগিতা করে প্রভাবিত করেছে।’’ সিপিআইয়ের মহিষাদল আঞ্চলিক পরিষদের সম্পাদক শ্রীমন্ত ঘোড়ই অবশ্য বারবার ফোন কেটে দেন। আর সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক গৌতম পন্ডার বক্তব্য, ‘‘দল কখনওই বিজেপির সঙ্গে জোট করবে না। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
মহিষাদলে সমঝোতা কাজে না আসা নিয়ে এলাকাবাসীর ব্যাখ্যা আবার আলাদা। ওই সমবায়ের ভোটার স্থানীয় কয়েকজন জানালেন, এলাকায় যাঁরা এই জোটের নেতৃত্বে ছিলেন, তাঁদের কেউ তৃণমূলের হয়ে পঞ্চায়েতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপর বিধানসভার আগে তৃণমূলের বিরোধিতা করেছেন এবং ভোটের মুখে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এই সুবিধাবাদী অবস্থান মানুষ মানতে পারেনি। আর সিপিআই নেতৃত্বকে একটা বড় অংশের মানুষ চেনেই না। ফলে, তাঁরা জোট জোরদার করতে পারেননি।
তবে মহিষাদলে ধাক্কা খেলেও সমবায়ে আসন সমঝোতার ধারা কিন্তু চলছে। পূর্ব মেদিনীপুরেই তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই সমবায় সমিতির নির্বাচনেও বাম-বিজেপির আসন রফা করতে চলেছে। ওই সমবায়ের ৪৩ আসনে ভোট ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র জমা শুরু হবে আজ, সোমবার থেকে। তার আগে রবিবার, ‘খারুই-গঠরা সমবায় বাঁচাও মঞ্চে’র ব্যানারে স্থানীয় সিপিএম এবং বিজেপি নেতা-কর্মীরা একসঙ্গে মিছিল করেছেন। সামনের সারিতে ছিলেন বিজেপির কিষান মোর্চার তমলুক সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক বামদেব গুছাইত, দলের শহিদ মাতঙ্গিনী মণ্ডল-২ সভাপতি মধুসূদন মণ্ডল ও সমবায় সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক তথা স্থানীয় সিপিএম নেতা সুরেন্দ্রনাথ আচার্য।
বিজেপি নেতা বামদেব মানছেন, ‘‘সমবায়কে দুর্নীতির হাত থেকে বাঁচাতে তৃণমূল বিরোধী সব দলের সমবায় বন্ধুদের নিয়ে মহাজোট গড়া হয়েছে। অরাজনৈতিক ভাবেই এই জোট হয়েছে।’’ সিপিএম নেতা সুরেন্দ্রনাথও বলেন, ‘‘সমবায় সমিতির উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের জোট হয়েছে।’’ ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব জানার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘ওখানে আমাদের জয় নিশ্চিত। মানুষ ওদের অনৈতিক জোট মেনে নেবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy