Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ফলের পরেই রাজাকে শায়েস্তার ইঙ্গিত

‘বিপদ’ এ বার রাজার ঘরেই! হালিশহরের উপ-পুরপ্রধান রাজা দত্তের কার্যকলাপে বিরক্ত উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ভোটের ফল প্রকাশের পরেই রাজার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন তাঁরা।

রাজা দত্ত

রাজা দত্ত

বিতান ভট্টাচার্য ও সুপ্রকাশ মণ্ডল
হালিশহর শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০৩:৪৪
Share: Save:

‘বিপদ’ এ বার রাজার ঘরেই!

হালিশহরের উপ-পুরপ্রধান রাজা দত্তের কার্যকলাপে বিরক্ত উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। ভোটের ফল প্রকাশের পরেই রাজার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন তাঁরা।

গত ২৪ এপ্রিল, ভোটের আগের রাতে শহরের বারেন্দ্র গলির সমাজপতি-বাড়িতে হামলার ঘটনায় রাজা দত্তের নাম জড়ায়। তার পরে রাজার বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে পুকুর-ভরাট, বালি-খাদানের ব্যবসা, সিন্ডিকেট চালানো-সহ নানা অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। এমনকী, দু’বছর আগে নিজের সাকরেদ বান্টিকে খুনের ঘটনায় মূল চক্রী হিসেবে রাজার নামে পুলিশ ও সিআইডিতে অভিযোগও দায়ের হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত ওই তৃণমূল নেতাকে নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন দলের জেলা নেতৃত্ব। রাজা ‘রায়বাড়ি’র ঘনিষ্ঠ বলেই তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে ঠারেঠোরে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। তবে, দলের অন্দরে সরব হয়েছিলেন বেশ কিছু বিধায়ক।

রবিবার জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, রাজা দত্তের বিষয়টি তাঁদের নজর এড়াচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে রাজা দত্তের খবর আমাদের নজরে এসেছে। আর দু’দিন পর ভোটের ফল। সে জন্য এ নিয়ে বৈঠকের সময় বের করতে পারছি না। ফল প্রকাশের পরেই দলের জেলা নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে বসবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।’’ একই ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষও।

দলের জেলা নেতৃত্ব রাজার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিত দিলেও এ নিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। বারবার ফোন করা সত্ত্বেও তিনি কথা বলেননি। তাঁর ছেলে, বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় বলেন, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’ এর আগেও রাজাকে নিয়ে প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন বাবা-ছেলে। শুধু সমাজপতি-বাড়িতে হামলায় দু’জনেই দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দেন। দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি রাজা দত্তও। সে বলে, ‘‘আমি
আর কী বলব? এটা দলের বিষয়। কিছু বলব না।’’

আগে কংগ্রেস করলেও তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই রাজা সেই দলে। দিনমজুরিই ছিল যার জীবিকা, রাজ্যে পালাবদলের পরই সেই রাজার প্রবল প্রতিপত্তি নজর এড়ায়নি দলের অনেকেরই। কিন্তু কেউ সে ভাবে মুখ খুলতে সাহস করেননি। কারণ, রাজার সঙ্গে ‘রায়বাড়ি’র ঘনিষ্ঠতা। ২০১৪ সালে রাজার নেতৃত্বেই বামফ্রন্ট পরিচালিত হালিশহর পুরসভায় অনাস্থা এনে পুরবোর্ড দখল করে তৃণমূল। পরের বছর ভোটে জিতে উপ-পুরপ্রধান হয় রাজা।
তার পরে তার দাপট আরও বাড়তে থাকে বলে অভিযোগ।

এখন শহরে রাজার বিরুদ্ধে জনমত যখন তীব্র হচ্ছে, তখন জেলা নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, এর পরেও চুপ করে থাকলে দলেরই ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জেলার একাধিক তৃণমূল বিধায়ক দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, রাজাকে আগেই লাগাম পরানো দরকার ছিল। তা হলে সে আজ হালিশহরের ‘বেতাজ বাদশা’ হয়ে বসতে পারত না। হালিশহরের একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলরেরও দাবি, রাজার বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ করুক দলীয় নেতৃত্ব।

এলাকার সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীও রাজার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করারই পক্ষপাতী। দলের কয়েক জন নেতাকে তিনি সে কথা জানিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। সাংসদ বলেন, ‘‘এলাকার সাংসদ হিসেবে আমি যা বলার আগেই বলেছি। আমি দলের কোনও পদাধিকারী নই। নেতৃত্ব রয়েছেন। এ রকম সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে তাঁরাই পদক্ষেপ করবেন।’’ সমাজপতি বাড়িতে হামলার পরে সাংসদ ফোন করে ওই পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ঘটনার নিন্দাও করেছিলেন তিনি।

জেলার এক প্রবীণ বিধায়কের দাবি, ভোটের মধ্যেই তিনি দলে রাজার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন, সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকলে তৃণমূল করা যাবে না। সেখানে রাজা উপ-পুরপ্রধান। নিজের বাহিনী নিয়ে সে দিনের পর দিন হালিশহরে দখলদারি কায়েম করেছে। সংবাদমাধ্যমে দিনের পর দিন তা বেরোচ্ছেও। তাকে কেউ নিশ্চয়ই মদত দিচ্ছে। রাজার জন্য দলের মুখ পুড়ছে। এর পরও দল যদি ব্যবস্থা না নেয়, তা হলে মানুষ বিরূপ হবেন।’’

তৃণমূল রাজার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে শহরের বাসিন্দারা। কিন্তু সংশয় রয়েছে বিরোধীদের। তাদের মতে, রাজা তো বোড়ে। তার মদতদাতারা তো নাগালের বাইরেই রয়ে যাবেন! কেননা, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়নি শাসক দল।

অন্য বিষয়গুলি:

raja TMC election result
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE