বৈঠকের পরে তৃণমূল ভবনের বাইরে ফিরহাদ হাকিম। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের যাবতীয় আস্থাই হারালেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। কয়েক মাস ধরে তাঁরা লাগাতার কাজকর্মে দলে অসন্তোষ বাড়ছিল। বিদ্যুৎ ভবনে দু’দিন আগের আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা এবং তার প্রেক্ষিতে রবিবার বিধাননগরের কাউন্সিলরদের নিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বৈঠকে অসন্তোষ ও অনাস্থা আরও প্রকট হল। কিন্তু আস্থা না রাখলেও মেয়র এবং নিউটাউনের বিধায়ক পদে থাকা সব্যসাচীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে সর্তক পদক্ষেপ করতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। খতিয়ে দেখা হচ্ছে আইনি সব পথও।
তৃণমূল ভবনে এ দিনের বৈঠক ডাকা হয়েছিল মেয়র সব্যসাচীকে ছাড়াই। বিধাননগরের ৪১ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৩৬ জন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, মেয়রের অনুপস্থিতিতে তাঁর কাজকর্মে অনাস্থা এবং দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, তার প্রতি আস্থা রাখার কথা বলেছেন অধিকাংশ কাউন্সিলর। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ জানিয়েছেন, কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকের নির্যাস তিনি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাবেন।
আর এ সবের মধ্যেই লোকসভা ভোটে সব্যসাচীর ভূমিকায় বিজেপির লাভ হয়েছে মন্তব্য করে নতুন করে জল্পনা উস্কে দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরের নেতা মুকুল রায়। বিধাননগরে গিয়ে রাতে সব্যসাচীর সঙ্গে দেখাও করেছেন মুকুলবাবু। দু’জনেই অবশ্য এই মোলাকাতকে দাদা-ভাইয়ের ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলে দাবি করেছেন। সব্যসাচী মন্তব্য করেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যদি নরেন্দ্র মোদীকে কুর্তা বা মিষ্টি পাঠাতে পারেন, তা হলে ক্লাবে অতিথি হয়ে কেউ এলে আমিও তাঁকে আপ্যায়ন করতে পারি!’’ মুকুলবাবুর দাবি, সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনও কথা হয়নি।
কাউন্সিলরদের নিয়ে শাসক দলের রাজনৈতিক বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বিধাননগর পুরসভার প্রশাসনিক কাজ আপাতত সামলাবেন ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়। যিনি দলের রাজ্য নেতৃত্বের ‘প্রভাবশালী’ অংশের ঘনিষ্ঠ। কিন্তু এমন সিদ্ধান্তের কোনও ‘প্রশাসনিক বৈধতা’ নেই জেনেই তৃণমূলের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে তা ঘোষণা করা হয়নি। পুর আইন মোতাবেক ডেপুটি মেয়র বা মেয়র পারিষদদের কাজের দায়িত্ব বণ্টন করেন মেয়রই। পদে মেয়র আসীন থাকলে তাঁর কাজ অন্য কেউ ‘সামলে’ বা ‘দেখে’ দিতে পারেন না। বরং, মেয়র পারিষদদের কারও দফতরের ভার মেয়র নিজের হাতে নিতে পারেন। তাই সব্যসাচী মেয়র থাকলে অন্য কোনও পথে তাঁর ‘ডানা ছাঁটা’র কৌশল সহজ নয়। বিজেপি নেতা মুকুলবাবুও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘মেয়র মনোনীত নন, তিনি নির্বাচিত। তাই কাউন্সিলরদের নিয়ে নির্বাচন ছাড়া মেয়রকে তো সরানো যায় না।’’
এই পরিস্থিতিতে দু’টো পথ নিয়ে বিশদে ভাবতে হচ্ছে তৃণমূলকে। প্রথমত, সরাসরি মেয়র সব্যসাচীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা। তৃণমূল ভবনের বৈঠকে এ দিন উপস্থিত কাউন্সিলরেরা দলের প্রতি আস্থা দেখালেও অনাস্থা প্রস্তাব আনার আগে আঁটঘাট বেঁধে এগোতে চাইছেন দলীয় নেতৃত্ব। দ্বিতীয় পথ, চন্দননগরের মতো পুরবোর্ডকে ‘অকেজো’ করে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করা। প্রশাসনিক ভাবে তাতে বিশেষ বাধা না থাকলেও এমন সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা মাথায় রাখতে হচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। এমনকি, সব্যসাচীকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করলেও তিনি যে হেতু বিধায়ক থেকে যেতে পারেন, তাই সে দিকেও আঁটঘাট বাঁধতে হচ্ছে।
বৈঠকের পরে পুরমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, ‘‘দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটিতে মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছিল। তাই কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক হল। আলোচনার কথা শৃঙ্খলা ভেঙে আমি বাইরে বলব না। দল যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেবে। আশা করব, সকলেই শৃঙ্খলা মেনে দলের কাজ করবেন।’’ সুধীর সাহা, সুভাষ বসুর মতো জনাকয়েক কাউন্সিলর যদিও প্রকাশ্যেই মেয়র-বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
মেয়র সব্যসাচী অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমি এ সবের কিছুই জানি না। পুরমন্ত্রী কেন কী নিয়ে বৈঠক করেছেন, জানি না।’’ তবে তাঁর দাবি, ‘‘শৃঙ্খলাভঙ্গ করিনি। মানুষের দাবিতে আন্দোলন করেছি। দলনেত্রীর কাছ থেকেই তা শিখেছি। সিঙ্গুরের সময় থেকে তাঁর কাছে শিখেছি, মানুষের দাবিই আগে।’’
তৃণমূলে অন্তর্দ্বন্দ্বে ইন্ধন জুগিয়ে মুকুলবাবুর মন্তব্য, ‘‘পরিষেবা যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁরা তো বলছেন সব্যসাচী ভাল কাজ করছেন। তৃণমূলের বৈঠকে কয়েক জন কী বলল, তাতে কী হবে? বিধাননগরের মেয়র ভাল কাজ করছেন আর বিধায়কের (সুজিত বসু) ভূমিকায় মানুষ ক্ষুব্ধ বলেই ওই বিধানসভায় তৃণমূল হেরেছে (লোকসভা ভোট)।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে সব্যসাচীর ভূমিকা আমাদের পক্ষে ভাল ছিল।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy