সামনে ২১ জুলাই। কিছু দিনের ঘুম ভেঙে উঠে আবার যুব তৃণমূলের বৈঠক বসছে সোমবার। নেতৃত্বে যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রতি বার ২১শে-র শহিদ সমাবেশের আনুষ্ঠানিক উদ্যোক্তা থাকে তৃণমূলের যুব সংগঠনই। কিন্তু গত বার ধর্মতলায় সেই সমাবেশের পর থেকে এক বছর ধরে যুবদের আর কোনও কর্মসূচি চোখে পড়েনি। এমনকী, সভাপতির সঙ্গে সংগঠনের বাকি নেতৃত্বের কোনও বৈঠকও হয়নি। বরং, সাম্প্রতিক কালে যুবরাজ নিজেই চলে গিয়েছেন একটু অন্তরালে। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পরে রেড রো়ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ অনুষ্ঠানে গরহাজির ছিলেন। নিজের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের জন্য সাংসদ তহবিলের টাকা কী ভাবে খরচ করেছেন, তার বিবরণ দিয়ে পুস্তিকা ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’ প্রকাশ অনুষ্ঠান ছাড়া আর তাঁকে তেমন প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তাই তৃণমূল ভবনের এ বারের রুটিন বৈঠকের দিকেও কৌতূহলী চোখ রয়েছে শাসক শিবিরের! হাজার হোক, অভিষেক শুধু যুব সভাপতিই নন। তৃণমূলের মধ্যে ক্ষমতার সমীকরণে তাঁর অবস্থান অনস্বীকার্য!
শহিদ সমাবেশের জন্য জেলায় জেলায় যুব সংগঠনের প্রস্তুতি কী ভাবে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতেই সোমবারের বৈঠক। জেলার যুব নেতৃত্বের পাশাপাশি ওই বৈঠকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদেরও থাকার কথা। কিন্তু এত দিনের দীর্ঘ বিরতি কেন? অভিষেকের ব্যাখ্যা, ‘‘গত ২১ জুলাইয়ের পর থেকেই আমাদের সময় দিতে হয়েছে বিভিন্ন নির্বাচনের কাজে। পুরভোট থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপনির্বাচন এবং সব শেষে বিধানসভা ভোটের প্রচারে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। সারা বছর ভোট থাকলে অন্য কর্মসূচি নেব কী ভাবে!’’
অভিষেককে বুধ ও শুক্রবার তৃণমূল ভবনে বসার নির্দেশ দেন পিসি অর্থাৎ তৃণমূল নেত্রী। কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত যাওয়ার পরে এখন আর ভবনে ফি সপ্তাহে দেখা মেলে না তাঁর। যুব সংগঠনের নেতৃত্বও নিয়মিত সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগে থাকতে পারেন না বলে দলের অন্দরেই গুঞ্জন আছে। যদিও অভিষেকের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, ভোটের কাজে জেলা সফরে থাকায় তৃণমূল ভবনমুখো হতে পারেননি যুব সভাপতি।
এ বার শহিদ সমাবেশের আগে ফের সংগঠন নিয়ে তৎপর হলেও যুবদেরই একাংশের বেশ ক্ষোভ রয়েছে। কারণ অনেকেরই বক্তব্য,
‘‘২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি বৈঠক শুরু হয়ে যায় জুনের শেষাশেষি। এ বার সেখানে প্রথম বৈঠকই হচ্ছে ২১ জুলাইয়ের মাত্র ১০ দিন আগে!’’ অভিষেক অবশ্য বলছেন, ‘‘এ বার রমজান মাস চলছে। সেই জন্য ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি বৈঠক ইদের পরেই করতে হচ্ছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূল ভবনে ওই বৈঠকের আগেই শুক্রবার তাঁর কার্যালয়ে কয়েকটি জেলার নেতৃত্বকে নিয়েও তিনি আলোচনা করবেন। সংগঠনের একাংশ যদিও পাল্টা প্রশ্ন তুলছে, ২১শে-র আগে রমজান বা কিছু না কিছু নির্বাচনের ঝামেলা প্রতি বছরই থাকে। এ বার কাজে যেন শিথিলতা বেশিই দেখা যাচ্ছে!
বাৎসরিক শহিদ সমাবেশের প্রস্তুতি জোর কদমে শুরু না হওয়ায় তৃণমূল নেত্রীও ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। গত শনিবার তৃণমূলের নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে মমতা নিজেই দলের সব শীর্ষ নেতাকে নির্দেশ দিয়েছেন দ্রুত জেলায় জেলায় প্রস্তুতি-সভা করতে। তার পরেই অভিষেক বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক করেছেন। আগামী শনিবার থেকে সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম, শুভেন্দু অধিকারী-সহ প্রায় সব শীর্ষ নেতাই জেলায় জেলায় প্রস্তুতি সভা করবেন। বসিরহাট, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ কয়েকটি জায়গায় অভিষেকেরও সভা করার কথা।
যুবদের বৈঠকে জেলা নেতৃত্ব অভিষেককে সরাসরি অভাব-অভিযোগ জানানোর সুযোগ পাবেন। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলেও যুবর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যুব সভাপতি খুব একটা সংযোগ রাখেন না বলে শীর্ষ নেতাদের কাছে কিছু অভিযোগ জমা হয়েছে। স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী সরাসরি কিছু না বললেও গত ১৮ জুন নেতাজি ইন্ডোরে দলীয় কর্মশালায় প্রকাশ্যেই জানতে চেয়েছিলেন, প্রাক্তন ছাত্র সভাপতি অশোক রুদ্রকে যুব সংগঠনে নেওয়া হয়েছে কি না। যুবদের কাজকর্মের শ্লথ গতিতে তিনি যে সন্তুষ্ট নন, তা ওই ছোট্ট প্রশ্নেই দলনেত্রী সেই বার্তা দিয়েছিলেন বলে শীর্ষ নেতাদের অনুমান। আপাতত ২১শে জুলাইকে সামনে রেখে আড় ভাঙতে হচ্ছে যুবরাজকেও!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy