E-Paper

শীত ভাল করে না পড়তেই চোখরাঙানি ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়ার

ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়া— দু’টি রোগেরই বাহক এডিস মশা। যত ক্ষণ পর্যন্ত না জাঁকিয়ে শীত পড়ছে, তত ক্ষণ মশাবাহিত এই দুই রোগের প্রকোপ অব্যাহত থাকবে।

কেউ আবার একসঙ্গে দু’টি রোগে কাবু হচ্ছেন।

কেউ আবার একসঙ্গে দু’টি রোগে কাবু হচ্ছেন। —প্রতীকী চিত্র।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:৫৬
Share
Save

হালকা ঠান্ডার আমেজ ইতিমধ্যেই লাগতে শুরু করেছে। তারই মধ্যে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেশ বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তবে এ বার শুধু ডেঙ্গি নয়, দোসর হয়েছে চিকুনগুনিয়াও। কেউ আবার একসঙ্গে দু’টি রোগে কাবু হচ্ছেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়া— দু’টি রোগেরই বাহক এডিস মশা। যত ক্ষণ পর্যন্ত না জাঁকিয়ে শীত পড়ছে, তত ক্ষণ মশাবাহিত এই দুই রোগের প্রকোপ অব্যাহত থাকবে।

জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। যদিও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সরকারি ভাবে কোনও পরিসংখ্যান মেলেনি। ডেঙ্গিতে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যাও জানা যায়নি সরকারি ভাবে। তবে, বেসরকারি সূত্রের খবর, চলতি মাসে অন্তত পাঁচ-ছ’জনের ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। গত ১১ নভেম্বর মারা যান শহরের
এক বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী পূর্ণিমা পৈলান (৫৬)। তিনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালেই ভেন্টিলেশনে ছিলেন। আবার, বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার দুই বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। তাঁদের এক জন কামদুনির বাসিন্দা কাশীনাথ মণ্ডল (৪২), অন্য জন দক্ষিণ গাজিপুরের বাসিন্দা গায়ত্রী পাত্র (৫৪)। দু’জনেরই ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি সংক্রমণের কথা লেখা রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

ডেঙ্গি যখন মাথাচাড়া দিচ্ছে, সেই সময়ে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও ভাল রকম মিলছে বলে জানাচ্ছেন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। এ বার চিকুনগুনিয়ার প্রকোপের কথা মানছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরাও। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, হাওড়া, ব্যারাকপুর, সোদপুর, দমদম, কসবা, যাদবপুর, টালিগঞ্জ এবং আরও কিছু এলাকায় চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগী মিলছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, টানা জ্বর, সঙ্গে গাঁটে ও শরীরে ব্যথার উপসর্গে কে ডেঙ্গিতে আর কে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত, তা জানতে রক্ত পরীক্ষাই একমাত্র পথ। কিছু ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষায় দু’টি রোগই পাওয়া যাচ্ছে।

সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজ রায় বলেন, ‘‘চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ কয়েক বছর পর পর বৃদ্ধি পায়। এ বারও তেমনটা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। যে সব রোগীর জ্বরের সঙ্গে অস্থিসন্ধিতে যন্ত্রণা থাকে, তাঁদের দু’সপ্তাহের মধ্যে নির্দিষ্ট চিকিৎসা শুরু না করলে ওই সমস্যা বহু দিন ভোগাতে পারে।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রেই জ্বরে আক্রান্তের দু’-তিন দিন পরে ডেঙ্গি চিহ্নিত করতে এনএস-১ এবং চিকুনগুনিয়া অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাতে ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়া, দু’টিই নেগেটিভ আসছে। যোগীরাজ বলেন, ‘‘পাঁচ-ছ’দিন পরেও জ্বর ও ব্যথার সমস্যা না কমলে চিকুনগুনিয়া অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করলে তবেই ঠিক ফল মিলবে।’’

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান, চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ বলেন, ‘‘ডেঙ্গির সঙ্কটকালীন পর্যায়ে প্লাজ়মা লিকেজ হয়। অর্থাৎ, শিরা থেকে রক্তরস বেরিয়ে বিভিন্ন
অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ঢুকে রোগী আরও সঙ্কটজনক হয়ে পড়েন। অন্য দিকে, চিকুনগুনিয়ায় অস্থিসন্ধিতে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। দু’টি রোগ একসঙ্গে ধরা পড়লে বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি হতে পারে।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, চিকুনগুনিয়ায় তীব্র
জ্বরের সঙ্গে গাঁটে ব্যথা, র‌্যাশও বেরোয়। সেই র‌্যাশের কারণে প্রচণ্ড চুলকানি হয়, শুক‌োনোর সময়ে চামড়া উঠতে শুরু করে।

জমা জলের কারণে এডিস মশার বংশবিস্তার হয়। কিন্তু এখন বৃষ্টি না থাকলেও মশাবাহিত রোগের প্রকোপ কেন? জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, ঠান্ডা পড়া শুরু হওয়া মাত্র
ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ পুরোপুরি চলে যাবে, তেমন নয়। কারণ, ওই দু’টি রোগের বাহক এডিস সাধারণত দুই থেকে চার সপ্তাহ বাঁচে। অনির্বাণ বলেন, ‘‘এক জন আক্রান্তকে কামড়ানোর পরে সেই মশা অন্তত দুই থেকে তিন সপ্তাহ জীবাণুটি বহন করে। তাই, রোগের প্রকোপ এখনও রয়েছে। তবে তাপমাত্রা যত নামতে শুরু করবে, এডিস মশার আয়ুও তত কমবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mosquito Winter Death Fever

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।